বাজারে শাক-সবজির দাম বাড়ায় বিপাকে খেটে-খাওয়া নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তরা
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ বুধবার বিকেল ০৪:১৭, ১৪ অক্টোবর, ২০২০
সারাবিশ্বে একদিকে কোভিড-১৯ এর প্রকোপ অন্যদিকে প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিপর্যস্ত। এমন পরিস্থিতিতে খেটে-খাওয়া নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে শাক-সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। অনেক সবজির মূল্য সেঞ্চুরি পেরিয়ে গেছে আবার অনেক সবজির দাম কেজি প্রতি ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই করছে। সবজি ও পেঁয়াজের এমন চড়া দামের সাথে নতুন করে বেড়েছে চাল, ডাল, তেল, ডিম, আলু ও কাঁচামরিচের দাম।
মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) গৌরীপুর বাজার, অচিন্তপুর বাজার, নাহড়া বাজার, ডৌহাখলা বাজার, শ্যামগঞ্জ বাজার, কলতাপাড়া বাজার, বীরপুর মোড়ের বাজার, ভ‚টিয়ারকোনা বাজার, গোবিন্দপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের মধ্যেই আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা, কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে বেড়েছে ৮০ টাকা, ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ৫-১০ টাকা, ভোজ্যতেল কেজিতে বেড়েছে ২০-২৫ টাকা।
এসব বাজারের বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া ৪৫ টাকা কেজির আলু এ সপ্তাহের শুরুতেই ৫০ টাকা, ১১০ টাকা ডজনের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, ১৬০ টাকা কেজির কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি, ১৬০ টাকা কেজির ধনিয়া পাতা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি দরে। বাজারে শিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা কেজি, টমেটো ১২০-১৩০ টাকা কেজি, বেগুন ১০০-১২০ টাকা কেজি, গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি, গত সপ্তাহেই এই সবজিগুলো বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকার কমে।
বাজারের অন্যান্য সবজিগুলোও ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। পটোলের কেজি ৬০-৭০ টাকা, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজি, একেকটা লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা, এক হালি কাঁচা কলা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা দরে। ঝিঙা, কাকরোল, ধুন্দুলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা।
বাজারে নতুন আসা ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা কেজি। মুলা, পেঁপে’র কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
স্বস্তি নেই পেঁয়াজেও। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। আমদানী করা বড় আকারের ভারতীয় পেঁয়াজের কেজির জন্যও গুনতে হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা। গত মাসে ভারত রপ্তানী বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দামের বিষয়ে গৌরীপুর বাজারে আসা সাইফুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, বাজারে এসে মোটেও শান্তি পাই না। সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক। ১০০টাকার সবজি দিয়ে একবেলাও চলে না। সবজির এতো দাম স্বাধীনতার পর আর দেখিনি।
আরেকজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ আমাদের দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর অচিরেই পদত্যাগ করা উচিত।
মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ডঃ আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে কালীপুর মধ্যমতরফের এক ক্রেতা বলেন, এমন দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন বক্তব্য আমরা আর শুনতে চাই না। তিনি আরো বলেন, অনেকদিন ধরেই সবজির দাম খুব চড়া। এর মধ্যেই চাল, ডাল, তেল, চিনি, আলু, পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়া বিপাকে পড়ে গেছি।
শ্যামগঞ্জ বাজারের ক্রেতা রতন মিয়া বলেন, আগে কখনো পুরাতন আলু ৫০ টাকা কেজি হয়নি, আর এখন ৫০ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে হচ্ছে, কাঁচামরিচ কিনতে হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি দরে। প্রায় সবজির দাম ১০০ টাকা বা তার বেশি। সবকিছুর দাম এমন অস্বাভাবিকভাবে বাড়লে আমরা চলবো কি করে?
কলতাপাড়া বাজারের ক্রেতা আঃ ছালাম বলেন, বাজারে গেলেই শুনি কোনো না কোনো সবজির দাম বেড়েই চলেছে। কিন্তু আমাদের আয় বাড়ার বদলে উল্টো কমেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে আমাদের পক্ষে এই বাজারমূল্যে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
রিক্সাচালক আঃ হেলিম বলেন, সারাদিন রিক্সা চালিয়ে যা পাই তা দিয়ে কোন রকমে টেনে-টুনে সংসার চলছে। কিন্তু বর্তমানে দু’এক জাতের সবজি আর চাল কিনতেই সারাদিনের কামাই চলে যায়। মাছ-মাংস কিনার কোন সুযোগই পাইনা।
দিনমজুর রশিদ বলেন, আমরা দিন আনি দিন খাই। এই দুর্মূল্যের বাজারে কি করে চলবো ভেবে পাচ্ছি না, চালের দাম যেমনি বাড়ছে তার সাথে তাল রেখে বাজারের সব জিনিসের দামও বেড়েই চলেছে।
সবজির মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে গৌরীপুর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মানিক বলেন, ‘বাজারে আগের তুলনায় শিম, গাজরের সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু অন্যান্য সবজির সরবরাহ কম থাকায় দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। শীতকালীন আগাম সবজি বাজারে আসার পরও দাম কমছে না।
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, শীতের সবজি ভরপুর না আসা পর্যন্ত শাক-সবজির দাম কমার কোন সম্ভাবনা নেই।