নিজস্ব প্রতিনিধি শনিবার সন্ধ্যা ০৬:০৪, ২৭ আগস্ট, ২০২২
যেকোনো ধরনের সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন হওয়ায়; দুর্ঘটনা এড়াতে মোটরসাইকেল চালকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে অধিক সতর্ক থাকতে হয়। গুরুতর আহত থেকে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকায়; মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানোর জন্য পূর্ব-সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। আবার ছোটখাটো বাঁধাও অনেক ক্ষেত্রে; ভয়ানক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাড়ায়।
অন্যান্য যানবাহনের দৃষ্টিগোচর আকারসহ; সিট বেল্ট বাধার নিরাপত্তাজনিত সুযোগ থাকে। কিন্তু মোটরসাইকেলে এগুলোর কোনোটাই নেই। তাছাড়া চালকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে ছোট এই যানটিকে। তাই চলুন, মোটরসাইকেল চালানোর সময় সতর্কতামুলক কার্যকলাপগুলোর ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
শুধু মোটরসাইকেল নয়, যেকোনো গাড়িই এই জায়গাগুলো পার হবার সময় হর্ন বাজিয়ে যায়। কিন্তু শুধু হর্নই নয়, গতিও কমিয়ে আনা উচিত। বিশেষ করে মোটরসাইকেলের মত ছোট গাড়িগুলো প্রায়ই অন্যান্য বড় গাড়ি চালকদের চোখ এড়িয়ে যায়।
তাছাড়া ঢাকার রাস্তার কিছুক্ষণ পর পর মোড় থাকায়; অনেকেই এসব ব্যাপার তেমন আমলে নেন না। অথবা মাথায় থাকলেও ঘন ঘন হর্ন বাজানো বা গতি কমানোর প্রতি ধৈর্য্য সবার থাকে না। আর ট্রাফিক জ্যামের কারণে এই জায়গাগুলো আরও দুর্বিসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তাই এমন অবস্থায় মাথা ঠান্ডা রাখাও মোটরসাইকেল চালানোর একটি পূর্ব শর্ত।
সিগনালে বা রাস্তার পাশে থামার সময় স্বাভাবিক ভাবেই; মোটরসাইকেল চালকদের গতি কমাতে হয়। এ সময়টা সতর্ক ভাবে লুকিং গ্লাসে; পেছনে কোনো গাড়ি আসছে কিনা তা দেখে নেওয়া উচিত। এমন অবস্থায় প্রধান সড়ক থেকে ফুটপাত সংলগ্ন পাশে চলে আসতে হবে এবং ব্রেক লাইট কয়েকবার ফ্ল্যাশ করতে হবে। সিগনালের থামার সময় সব গাড়িই গতি কমাতে থাকে, তাই এক্ষেত্রে সংঘর্ষ লাগার আশঙ্কা কম থাকে।
কিন্তু নিজের প্রয়োজনে বা কোনো সমস্যার কারণে থামতে হলে; পিছনে দ্রুত বেগে কোনো গাড়ি আসছে কিনা তা দেখে নেওয়া উচিত। বাইক পুরো না থামিয়ে গিয়ারে রাখা যেতে পারে। এতে সবেগে আসন্ন কোন গাড়ি কাছে এসে আঘাত করবে বলে মনে হলে চট করে বাইক দূরে সরিয়ে নেয়া যাবে।
ঢাকার মত রাস্তায় এটি খুব সাধারণ একটি দৃশ্য হলেও; এর ফলাফল অনেক ভয়াবহ হতে পারে। দেখা গেলো হুট করে কোনো একজন চালক বা প্যাসেঞ্জার তার গাড়ির দরজা খুলে দিল। আবার পেছনের কোনো একটি গাড়ি চালক ভুল করে অ্যাক্সেলেটারে চাপ দেয়ায়; ঠেলে বাইককে সামনে নিয়ে যেতে পারে। এতে বাইক সহ বাইক চালক ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আবার যেকোনো এক পাশের কোনো এক গাড়ির পাশ দিয়ে একজন পথচারী বেরিয়ে আসলো। এ সময় সংঘর্ষ এড়াতে; মোটর বাইকের সঙ্গে পাশের কোনো গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ লেগে যেতে পারে।
প্রায় ৯০ থেকে ৯৫% গাড়িচালক রাস্তায় চলার সময় মোটরসাইকেল খেয়াল করে না। মোটরসাইকেল অন্য গাড়ির তুলনায় আকারে ছোট। তাই মোটরসাইকেল চালকদেরকেই আগ বাড়িয়ে নিজেদের অবস্থানের জানান দিতে হবে। এর সমাধান হিসেবে উজ্জ্বল বর্ণের পোশাক পরিধান করা যেতে পারে। বিশেষ করে রাতে বাইকের লাইটগুলো জ্বালিয়ে রাখতে হবে এবং অন্ধকারে স্পষ্ট চোখে পড়ে এমন বর্ণের পোশাক পড়তে হবে।
মোড় ঘুরার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন; মোটরসাইকেল চালক অন্যান্য গাড়ি চালকদের ব্লাইন্ড স্পটে পড়ে না যান। এজন্য মোড় ঘুরার ক্ষেত্রে প্রতি দুই গাড়ির মাঝে যথেষ্ট দূরত্ব রাখতে হবে এবং গতি অবশ্যই অনেক নিচে নামিয়ে আনতে হবে।
মহাসড়কগুলোতে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো গাড়িচালকদের ওভারটেকিং প্রবণতা। লং ড্রাইভে গাড়িগুলো পরস্পরের সাথে রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়। এতে শুধু সেই গাড়িগুলোরই সমস্যা হয় না, কখনো কখনো আশেপাশের লোকেরাও দুর্ঘটনার শিকার হন।
বড় রাস্তাগুলোতে গতি একদম কমিয়ে আনারও উপায় থাকে না। কারণ সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে পেছনের সবেগে চলমান গাড়িটির সাথে ধাক্কা লেগে যেতে পারে। তাই এক্ষেত্রে নিজের জন্য রাস্তার যেকোনো একটি পাশ ঠিক করে একটি নির্দিষ্ট বেগে গাড়ি চালানো যেতে পারে। নিজে ওভারটেক না করে বরং লুকিং গ্লাসে দেখে পেছনের গাড়ির অবস্থা বুঝে তাকে পাশ কাটিয়ে যেতে দেওয়া উত্তম।
অনেকে দুটি বড় গাড়ির মাঝে যথেষ্ট ফাঁক দেখতে পেয়ে; তার মাঝ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে সামনে চলে যাবার চেষ্টা করে। এমনকি তারা পুরোপুরি নিশ্চিতও থাকে না যে; সেই জায়গায় তারা ফিট করবে কিনা। এমন দুঃসাহসিক কার্যকলাপ কখনোই চেষ্টা করা উচিত নয়। এরকম একে অপরের সঙ্গে সমান্তরাল অবস্থানে থাকা দুটি লড়ি, ট্রাক বা বাসের মাঝ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
যারা মোটামুটি সবকিছু বুঝে নিজের জন্য এক পাশ বেছে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন তাদেরকে অন্যান্য চালকদের মানসিকতার দিকটিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা প্রত্যেকে হয়ত শান্ত মোটর বাইক চালক নন। তারা কোনো রকম পূর্বাভাস না দিয়েই অন্য গাড়ির পথের ওপর চলে আসে।
এছাড়া বড় গাড়িগুলোর ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি অনেক সময় অনিচ্ছাবশত ঘটে। কারণ মোটরসাইকেল চালকরা খুব সহজেই ব্লাইন্ড স্পটগুলোতে ফিট করে যায়। এ অবস্থায় যেকোনো চালকই মোটরসাইকেলটিকে খুঁজে পেতে ভুল করবে। এর সমাধান হিসেবে তাদের উপর দোষ না চাপিয়ে মোটর বাইকারদের উচিত নিজেদেরকে আরও বেশি দৃষ্টিগোচর করে তোলা।
চালকের রিয়ার-ভিউ মিররে চোখ রাখলে তারাও মোটর বাইক চালককে দেখতে পাবে। তাদের গাড়ি চালানোর প্যাটার্নের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে। রাস্তায় জ্যাম তেমন বেশি না থাকলে স্বাভাবিক ভাবেই তারা ওভারটেক করে সামনে এগুতে চাইবে। এ সময় তাদের সাথে প্রতিযোগিতা না করে তাদেরকে সামনে যেতে দেওয়া উত্তম।
এক্ষেত্রে তারা জোরে গাড়ি চালাতে উদ্যত হচ্ছে কিনা তা খেয়াল করা যেতে পারে। তাদের টার্ন সিগনাল, তাদের চারপাশে দেখার জন্য মাথা নড়াচড়া করা প্রভৃতি কার্যকলাপগুলো ওভারটেকিং-এর লক্ষণ দেখাবে। তাদের সাথে সংঘর্ষ এড়াতে এই সচেতনতাটুকু বেশ কার্যকর।
এই বিপজ্জনক অবস্থাটিতে দুই দিকে খেয়াল রাখতে হয়। এক অপর রাস্তার উল্টো পাশ থেকে কোন গাড়ি কত দ্রুত আসছে। আর দুই মোটর বাইকের সাথে আরো কোনো গাড়ি ইউটার্ন নিচ্ছে কিনা। ঢাকার রাস্তায় অবশ্য এই দুটি ছাড়াও আরও বিভিন্ন দিকে দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।
তবে প্রাথমিকভাবে উল্টো পাশের গাড়ি থেকে যতটুকু দূরত্ব বজার রাখা যায় ততই ভালো। আর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বাইকের গতি অনেক কমিয়ে আনা। আইল্যান্ডের সঙ্গে বাইক লেগে যাচ্ছে কিনা সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
মোটরসাইকেলটির নিরবচ্ছিন্ন চলমান অবস্থা বজায় রাখতে এর যন্ত্রাংশ ঠিক রাখা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এর জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের তালিকায় ইঞ্জিন, ব্রেক, টায়ার, হেডল্যাম্প, টার্ন সিগনাল এবং জ্বালানি রাখতে হবে।
মোটরসাইকেল চালানোর সময় কখনোই মোবাইল ফোনে কথা বলা ঠিক নয়। দু’হাতকে সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে হবে মোটরসাইকেল চালানোর কাজে। এমনকি ব্লুটুথ দিয়েও ফোনে কথা বলা উচিত নয়। কারণ এটি গাড়ি চালানো থেকে মনকে বিচলিত করে। খুব জরুরি হলে ধীর গতিতে রাস্তার একেবারে ফুটপাত সংলগ্ন জায়গায় বাইক থামিয়ে তারপর ফোন ধরা যেতে পারে।
ঝড়-বৃষ্টির মত প্রতিকূল আবহাওয়ায় মোটরসাইকেল চালানো একটু বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। মোটরসাইকেল চালানোর আদর্শ রাস্তা হলো শুষ্ক রাস্তা। ভেজা রাস্তায় টায়ারের ঘর্ষণ ক্ষমতা কম থাকে। পারতপক্ষে এই ধরনের পরিস্থিতিতে গাড়ি না চালানোই উত্তম। তবে খুব প্রয়োজন হলে গাড়ি চালানোর সময় অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। খারাপ আবহাওয়ায় মোটর বাইকের দৃশ্যমানতা কমে যাওয়াটাও একটা সাধারণ ব্যাপার।
মোটরসাইকেল চালক এবং আরোহীদের জন্য হেলমেট ব্যবহার অত্যাবশ্যকীয়। হেলমেটের ব্যবহার যেকোনো দুর্ঘটনায় আপনার মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার ঝুঁকি সর্বোপরি মৃত্যুর ঝুঁকিও অনেকখানি কমাতে পারে। তাই কোনোভাবেই হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো বা আরোহন করা যাবে না। আর হেলমেট কেনার সময়ও একটু দেখে কিনেত হবে। কারণ, বাজারে অফনেক ধরনের হেলমেট পাওয়া যায়। তাই, নিজের নিরাপত্তার জন্য সেরাটাই বেছে নিন।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য উপরোক্ত উপায়গুলো যে বিষয়টির ওপর সব থেকে গুরুত্বারোপ করছে তা হলো অল্প গতিতে মোটরসাইকেল চালানো।
মোটরসাইকেলের সব দুর্ঘটনার পেছনে মুলত এই দ্রুত গতিই দায়ী। হুট করে সামনে কোনো কিছু এসে পড়লে খুব জোরে ব্রেক কষা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মোটরসাইকেল চালককে ভয়াবহ বিপদের দিকে ঠেলে দেয়। এমনকি কখনো এমন কিছু পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন নিজেকে সম্পূর্ণভাবে ভাগ্যের দয়ার ওপর ছেড়ে দিতে হয়। তাই সবচেয়ে নিরাপদমূলক কাজ হলো, বাইককে সব সময় অল্প গতিতে রাখা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেও; এ সময় চট করে নিজেকে নিরাপদ অবস্থায় নিয়ে যাবার জন্য চিন্তা করা যায়।