ঢাকা (বিকাল ৫:১৬) শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নতুন জামা

মোঃ বুলবুল হোসেন মোঃ বুলবুল হোসেন Clock বুধবার রাত ০২:৪৮, ১২ মে, ২০২১

সকাল বেলায় ঘুম ভাঙতেই খোকন তার বাবাকে দেখতে পেল। খোকন বাবাকে বললো, বাবা আমাকে নতুন জামা কিনে দিবে না। পাড়ার সকলে নতুন জামা পরে মাঠে যাবে।বাবা বলে দেখি কালকে আনা যায় কিনা তোমার জন্য নতুন জামা।

অভাব অনটনের মধ্যে দিয়েই খোকনের সংসার কোন রকম চলে। খোকনের বাবা সারাদিন পরিশ্রম করে যা আয় করে তা সংসারের কাজে ব্যয় করতে চলে যায়। খোকনের বিশ্বাস হয় না যে বাবা তাকে নতুন জামা কিনে দিতে পারবে। তাই বাবাকে বারবার বলে আমার জন্য একটা নতুন জামা কিনে দিও বাবা।পাশের বাড়ি সুমন সে নতুন জামা পরে মাঠে যাবে।আমার নতুন জামা হবে না বাবা। মা খোকনকে তার বাবার কাছ থেকে নিয়ে দূরে সরিয়ে রাখে।কারণ বাবা কাজে যাবে।খোকনের মা বলল আমাদের জন্য না হয়। ছেলের জন্য একটা নতুন জামা কিনে নিয়ে এসো। খোকনের বাবা বললো আচ্ছা ঠিক আছে চেষ্টা করব যতদূর সম্ভব। তুমি তো জানোই আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।

খোকনের বাবা আইসক্রিম বিক্রি করে গ্রামে গ্রামে। খোকনকে বুঝিয়ে রেখে খোকনের বাবা চলে যায় দূর গ্রামে আইসক্রিম বিক্রি করতে।পাহাড়ি গ্রামের স্কুলে ভালো বিক্রি হয় আইসক্রিম। সম্পূর্ণ বিক্রি না হওয়ায় পাশের গ্রামে চলে যায়।ঐ গ্রামেও ভালো বিক্রি হচ্ছে। এমন সময় গ্রামের মোড়ল এসে বলল আমাকে পাঁচটি আইসক্রিম দাও। খোকনের বাবা মোড়লকে পাঁচটি আইসক্রিম দিল। তারপর যখন টাকা চাইল মোড়ল বলল দাঁড়াও আমি টাকা নিয়ে আসতেছি।পাঁচটি আইসক্রিমের দাম ছিল পাঁচ টাকা।

কিছুক্ষণ পরে যখন ওই গ্রামের মোড়ল টাকা নিয়ে আসে।তখন আইসক্রিমের মূল্য তিন টাকা দেওয়া হয়। খোকনের বাবা আইসক্রিমের দাম পাঁচ টাকা দাবি করে। মোড়ল পাঁচ টাকা দাবির কথা শুনে আইসক্রিমের বাক্স খাদে ফেলে দেয়। খোকনের বাবা অনেক কান্নাকাটি করে। এমনকি বাক্সটা নিচে থেকে তুলে নিয়ে আসে।ওই গ্রামের লোকজন অনেক আফসোস করে বলে মোড়লের মতো খারাপ লোক আর নেই এই গ্রামে।

খোকনের বাবা ঐ গ্রামে সবার কাছে বিচার দিয়ে বিচার পেলোনা। খোকনের বাবা কান্নাকাটি করে বলেই এ থেকে যা আয় হতো তা দিয়ে আমার সংসার চলত।আজকে আমার ছেলের ঈদের জন্য নতুন জামা কেনার কথা বলেছে।আমি ভাবছিলাম কিছু টাকা দিয়ে আমি একটা জামা কিনে দিবো আমার ছেলেকে। তা আর হলো না। এই বলেই গ্রামের সবার কাছে কান্নাকাটি করতে থাকে খোকনের বাবা। খোকনের বাবা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলে হে আল্লাহ এই মোড়লকে আপনি হেদায়েত দান করুন। চোখের জল মুছতে মুছতে খোকনের বাবা বাক্স নিয়ে গ্রামের দিকে হাঁটা শুরু করে। আর বলতে থাকে।

গরিব বলে আমরা ভবে

পাবো না বিচার,

মোড়লের হাতে আর কতকাল

পাবে অবিচার।

চাইনা টাকা চাইনা পয়সা

কিসের এতো অহংকার,

ওদের মতো আমরাও মানুষ

আমার নাই হুংকার।

খোকন তার বাবার অপেক্ষা করছে। কখন বাবা আসবে নতুন জামা কিনে দিবে । যখন বাবা বাড়ির কাছে আসে খোকন জড়িয়ে ধরে বলে বাবা আমার নতুন জামা কিনে দেবে না। খোকনের বাবা বাক্সটি রেখে খোকনকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। কান্না শুনে খোকনের মা দৌড়ে এসে বলে তুমি কেন কান্নাকাটি করতেছ। খোকনের বাবা কিছু বলতে পারছেনা। খোকনের বাবার কান্না দেখে খোকনের মাও কান্না শুরু করে দেয়। এভাবে কিছুক্ষণ চলতে থাকে। খোকনের বাবা খোকনের মাকে সারা দিনের ঘটনা খুলে বলে। এমন খোকন সবকিছু শুনে বাবাকে বলে বাবা আমার নতুন জামা লাগবে না। তুমি ভালো আছো সুস্থ আছো।  আমার ভালো লাগতেছে। বাবা আমাদের তো কেউ নেই আল্লাহ ছাড়া।ওই মোড়লদের বিচার আল্লাহ তালাই করবেন। রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম ভাঙতেই খোকনের মনে পড়ে।খোকনের বাবা তাকে একটি মাটির ব্যাংক কিনে দিয়েছিল টাকা জমানোর জন্য।

খোকন মাটির ব্যাংকে ভেঙে ফেলে।টাকা হিসাব করে দেখে চল্লিশ টাকা হয়েছে। চলো বাবা গঞ্জের হাটে আমার কাছে চল্লিশ টাকা আছে। এই টাকা দিয়ে পুরাতন জামা কিনে নেব।খোকনের কথা শুনে বাবার চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। খোকনের মা এসে বলে আমার কাছে দশ টাকা আছে তুমি নিয়ে যাও ছেলেকে গঞ্জের হাট। খোকনকে সাথে নিয়ে বাবা হাটের দিকে রওনা দিল। হাটে পুরাতন কাপড় নিয়ে অনেক দোকানদার এসেছে কাপড় বিক্রি করতে। খোকন  কটা প্যান্ট আর একটা শার্ট পছন্দ করলো এবং বাবাকে বলে এই দুইটা আমাকে কিনে দেন। দোকানদারকে দাম জিজ্ঞাসা করল।দোকানদার বলো দু’টা ত্রিশ টাকা দিতে হবে। খোকনের বাবা তো অনেক খুশি ত্রিশ টাকার ভিতরে ছেলের জামা হয়ে গেল।বাকি টাকা দিয়ে সংসারে জন্য কিছু ঈদের বাজার করে নিয়ে যাবো। খোকন শার্ট প্যান্ট পেয়ে তো মহা খুশি। এতটাই খুশি বলে বোঝানো সম্ভব নয়। বাবা মা খোকনের খুশি দেখে চোখে অশ্রু ঝরে।গরিবের ঈদের আনন্দ এরকমই হয়।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT