ঢাকাতে কমছে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব
নিজস্ব প্রতিনিধি মঙ্গলবার দুপুর ০৩:৫৯, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১
দুদিন ধরে রাজধানীতে শীত পড়ছে। বিশেষ করে ভোরে ও সন্ধ্যায় শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। ঘরের বাইরে বের হলে গরম কাপড় চাপাতে হচ্ছে গায়ে। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব শুনলে এখন হয়তো অনেকে একটু অবাকই হবেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত পাঁচ বছরে ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে মাত্র একবার। আর আশপাশের এলাকা থেকে মূল ঢাকায় তাপমাত্রা থাকছে তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। অর্থাৎ সাভার বা টাঙ্গাইলের তুলনায় ঢাকায় শীত পড়ছে কম।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে শীতকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সেটি শৈত্যপ্রবাহ। গত সোমবার ঢাকার পাশের জেলা টাঙ্গাইলের তাপমাত্রা নেমেছিল শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি, ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তাতেই রাজধানীবাসী শীতের আমেজ পেয়েছে।
গত ৩০ বছরে ঢাকার আবহাওয়ার গড় তাপমাত্রার রেকর্ড বলছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ার কথা। কিন্তু গত ৬ বছরে ঢাকার গড় তাপমাত্রা নিলে তা কোনোভাবেই ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। ব্যতিক্রম ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি। ওই দিন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে বাংলাদেশে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কে শীতকাল ধরা হয়। এ সময়ে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা। চট্টগ্রামে ১৩ থেকে ১৬ ডিগ্রি। দেশের বেশির ভাগ এলাকায় শীতকালে ৬ থেকে ১০টি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। পাঁচ বছরে ঢাকায় মাত্র একবার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। শীতকালে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকছে।
এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে শৈত্যপ্রবাহ চলাকালীন ঢাকার তাপমাত্রা বেশির ভাগ সময় ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। এমনকি সারা দেশে শৈত্যপ্রবাহ চললেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে শৈত্যপ্রবাহ থাকছে না। এর বড় কারণ ঢাকার অতিরিক্ত জনসংখ্যা, ভবন-অবকাঠামো ও যানবাহনের কারণে সৃষ্টি হওয়া বাড়তি তাপমাত্রা। এখানে সব সময় দেশের অন্য যেকোনো গ্রামীণ এলাকার চেয়ে তাপমাত্রা তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকছে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট—এই পাঁচ প্রধান শহরের তাপমাত্রার পরিবর্তন নিয়ে একটি গবেষণা করেছে। তাতে দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমেও রাজধানীসহ এই শহরগুলোর দিনের তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালের মতো উত্তপ্ত থাকে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে শীতকালে দিনের বেলা শরৎকালের মতো আধা উষ্ণ তাপমাত্রা থাকছে। গত ১৬ বছরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটের তাপমাত্রা বেড়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় গড়ে তিন ডিগ্রি আর চট্টগ্রামে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে।
এ ব্যাপারে কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ওই গবেষণা দলের দলনেতা আশরাফ দেওয়ান বলেন,‘আমাদের গবেষণায় দেখেছি, দিনের বেলা ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহের তাপমাত্রা আর হচ্ছে না। রাতের বেলা যে শীত নামে, তা শৈত্যপ্রবাহের পর্যায়ে নামছে না। গত দুই যুগে ঢাকার সবুজ এলাকা ও জলাভূমি কমে গিয়ে বেশির ভাগ এলাকা কংক্রিটে ঢেকে গেছে। ফলে সেখানে দিনের বেলা সূর্যের তাপ আসার পর তা রাতেও জমে থাকছে। ফলে রাতেও তাপমাত্রা খুব বেশি কমছে না।’
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শহরে শীতের সময়ে শীত না থাকলেও বাড়তি কিছু বিপদ বেড়ে যায়। এ সময়ে শুষ্ক মৌসুমে নির্মাণকাজ বেড়ে যায়। ইটভাটাগুলো চালু হয়। ফলে শহরে জমে থাকা কুয়াশার সঙ্গে ধোঁয়া আর ধুলা মিলে ধোঁয়াশা তৈরি হয়, যা ঢাকার বাতাসকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে ফেলে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওই দূষিত বায়ুর মধ্যে রাজধানীবাসীকে বসবাস করতে হয়।
বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এক মাস ধরে ঢাকার বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় আছে। বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে বায়ুর মানের দিক থেকে ঢাকা শীর্ষ ১০–এর মধ্যে ছিল। কয়েক দিন ধরে ঢাকা আবারও শীর্ষ পাঁচ শহরের তালিকায় উঠে আসে। সোমবার ঢাকার বায়ুর মানের সূচক বেশির ভাগ সময়জুড়ে ২০০–এর ওপরে ছিল। অর্থাৎ ওই বাতাস ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা ছিল ২ নম্বরে। গতকাল রাত ১০টায় বায়ুমানের খারাপের দিক থেকে ঢাকা ছিল ৪ নম্বরে।