গাইবান্ধায় হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন
নিজস্ব প্রতিনিধি রবিবার রাত ০২:১৫, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯
তারেক আল মুরশিদ ,গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার সর্বত্র ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মৌসুমের শুরুতে তেমন শীত অনুভূত না হলেও গত কয়েকদিনের মৃদু শৈত্যপ্রবাহে শীত বাড়ছে।কয়েকদিন ধরেই সুর্যের দেখা মিলছে না। ফলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ জড়সড় হয়ে পড়েছেন। ঘন কুয়াশা ও শীতের হিমেল বাতাসে কষ্ট পাচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধের কষ্টের যেন কোন শেষ নেই। তারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পরেছেন তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হওয়ায়। গ্রামের অনেকে খড়-কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করে।সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে শহর ও গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে মানুষের চলাচল কমে যায়। তাই দিনমজুর শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষেরা কর্ম সংকটে পরেছে। সামর্থ্যবানরা ঘরে থাকলেও গরিব মানুষের পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। দু’মুঠো অন্নের জন্য তাদের ছুটতে হচ্ছে কাজের সন্ধানে। জীবনধারণের জন্য প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ি থেকে বের হতেই হয় জীবননামক এক যুদ্ধে। যেন প্রাকৃতিক দুর্যোগেও এদের মুক্তি নেই নিত্যকার কর্ম থেকে।শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে কাপড় কিনতে দোকানগুলোতে ভীড় বেড়েছে ক্রেতাদের। ব্যক্তিগত ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন অনেকে। শহরের ফুটপাতসহ বিভিন্ন মার্কেটে শীতবস্ত্র বিক্রির হিড়িক পড়েছে। তবে শীতকে পুঁজি করে গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা পোশাকের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েকগুণ। শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। এছাড়া শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় চারদিকে শীতজনিত রোগবালাই ছড়িয়ে পড়েছে। শিশু ও বৃদ্ধরা এই শীতজনিত রোগবালাইয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই অনেক শীতার্ত মানুষকে খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যার পর ক্রমেই বাড়তে থাকে কুয়াশা। একইসঙ্গে বইতে শুরু করে হিমেল হাওয়া। কুয়াশার দাপটে সকালে মহাসড়কে যানবাহনগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে গাড়ির চালক গতি নিয়ন্ত্রণে এনে ধীরে ধীরে চলতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে সময়মত নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না অনেকেই।শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ ঘরমুখো হয়ে গেছে। যার ফলে রিক্সা, অটো, সিএনজি, মাইক্রো, ম্যাজিক ড্রাইভাররা অনেকটা অলস সময় পার করছেন। প্রতিদিন যে আয় হতো এখন তার অর্ধেকও হয়না। অথচ গাড়ি বের করলেই প্রতিদিন চার্জ ও মালিকের নির্দিষ্ট ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।উজ্জ্বল, রবিউল, সুমনসহ কয়েকজন যানবাহন চালক এমনটাই জানান। তারা জানান, দিন যত যাচ্ছে কুয়াশার দাপট ততই বাড়ছে। সন্ধ্যার পর সড়ক-মহাসড়ক ধরে জেলা শহরগুলোতে যেতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। ফাঁকা স্থানগুলোয় কুয়াশার দাপটে গাড়ি চালাতে হচ্ছে ধীরে এবং সাবধানে।এদিকে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ এবং পশুপাখি। যেহেতু বাচ্চা এবং বয়স্ক মানুষদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাই শীতের সময় জ্বর সর্দিসহ বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ খুব বেশি হতে দেখা যায়। এছাড়াও আছে, এ্যালার্জিক রাইনাইটিস বা নাকের প্রদাহ, কনজাংকটিভাটিস বা চোখ ওঠা, ডায়রিয়া, আমাশয়, খুশকি, চুলকানি, একজিমা, স্কেবিস অর্থাৎ খোস-পাঁচড়া প্রভৃতি রোগ, যা এই শীতের মওসুমে বৃদ্ধি পায়।জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এ. কে. এম ইদ্রিশ আলী বলেন, ইতোমধ্যে জেলার সাত উপজেলায় ৫১ হাজার ৮০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও পাঁচ হাজার কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা রবিবার (আজ) পাওয়া যাবে। এসব কম্বল হাতে পেলে বিতরণ করা হবে।সিভিল সার্জন ডা. এ বি এম আবু হানিফ বলেন, শীতের কারণে নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়াজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এসব রোগে শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।