আসন্ন রমজান নিয়ে কিছু কথা, কিছু তথ্য:-মো.নাজিম উদ্দিন
নিজস্ব প্রতিনিধি রবিবার রাত ১১:৩৪, ২৭ মার্চ, ২০২২
রহমত, মাগফেরাত আর নাজাত- এর মাস রমজান আসন্ন। আগামি সপ্তাহের এ সময় হয়তো প্রথম ইফতার সম্পন্ন হবে, আল্লাহ চাইলে।
আল্লাহভীতি অর্জন, সহমর্মিতা, ধার্মিকতা ছাড়াও রমজান আমাদের যে নিয়মানুবর্তিতা শেখায় তার কিছুটা যদি আমরা সারা বছর কাজে লাগাতে পারি, তাহলে আমাদের আত্মিক, শারিরীক ও মানবিক উন্নতি সাধন হবে, ইনশাআল্লাহ।
সুচারুভাবে এবং স্বাস্থ্যকর পন্থায় রমজানের প্রতিটি রোজা রেখে ইবাদত বন্দেগী করে নিজের আমলনামায় যোগ করতে পারি বহু পুণ্য। ছোট কিছু পরিকল্পনা দিয়ে সাজিয়ে নিতে পারি অধিক ফলদায়ক ইবাদাতের এই মাসটিকে।
রমজান মাস কাটাবেন কীভাবে? কিছু পরামর্শ কাজে লাগাতে পারেন, প্রযোজ্য ক্ষেত্রেঃ
১. বাজারঃ সিয়াম সাধনা তথা সংযমের মাস রমজানের প্রাক্কালে লক্ষ্য করা যায়, হুমড়ি খেয়ে ক্রেতাগণ ভোগ্যপণ্য ও কাঁচাবাজারে ব্যস্ত। বিশেষতঃ পুরো রমজানের বাজার একসাথে করার প্রবণতা বেশি; হয়ত তাদের ধারণা, রমজানে স্টক শেষ হয়ে যাবে।
সুযোগটা ভালভাবে কাজে লাগায় অসাধু ব্যবসাযীরা। অধিক ক্রেতার উপস্থিতি পেয়ে কৃত্রিম সংকট এবং অন্যান্য অজুহাতে প্রতিটি পণ্যেরই দাম বাড়িয়ে দেয় সুদৃঢ় সিন্ডিকেট। ফলে নাকাল হতে হয় অনেক স্বল্প আয়ের ক্রেতাদের। আপনি যদি রমজানের পুরো বাজার যদি একসাথে না করে বাজারটা ৩/৪ ভাগে ভাগ করে করেন অর্থাৎ প্রতিবার ৭/১০ দিনের বাজার করি, তাহলে দ্রব্যমূল্যে প্রভাব নেতিবাচক প্রভাব কমতে পারে। কয়েকবার করে বাজার করলে আপনার লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা কম। আর ভাবুন, আপনি রমজানের শুরুতে বেশি দামে বেশি দামে করে ঠকছেনা না তো?
২. সংকল্প করুন, এবারের রমজানটা পূর্বেকার রমজান থেকে বেশি ইবাদাতে কাটাবেন; সুদৃঢ় সংকল্প করুন।
৩. অতি উত্তম নামাজ তাহাজ্জুদ পড়া সারাবছর যাদের সৌভাগ্য হয়না, তারা এই মাসে সুযোগটি গ্রহণ করতে পারেন। সেহরি খাওয়ার জন্য একটু আগে উঠলেই তাহাজ্জুদ আদায় করা যায়।
৪. যেহেতু ইফতারির আগ মুহর্তে দুআ কবুল হবার সম্ভাবনা বেশি, তাই ইফতারি সংক্রান্ত কাজকর্ম আগেভাগে শেষ করে ইফতার সামনে নিয়েই দুআ করতে বসুন।
৫. পবিত্র কুরআন নাযিলের এ মাসে যতো বেশি পারা যায় কুরআন তিলাওয়াত করুন। ধীরে সুস্থে তারতীলের সাথে কুরআন তিলাওয়াত করুন।
৬. যতো পারা যায় কম কথা বলা। কথা বললেই গীবত-শেকায়াত, মিথ্যা ও হাসি-তামাশার রাস্তা উন্মুক্ত হয়ে যায়। তাই কথা কম বলুন। আপনার রোজাকে সতেজ-সজীব।
৭. রমজান মাসে বেশি বেশি দুআ করুন। ইস্তেগফার করুন। দান-সাদাকাহসহ অন্যান্য নেকির কাজগুলোও সাধ্যানুসারে বেশি বেশি করুন।
৮. এলার্ম ঘড়ি ব্যবহার করে কাঙ্খিত সময়ে ঘুম থেকে উঠা নিশ্চিত করুন।
৯. আপনার বাক্য, কর্ম ও চিন্তা ভাল কাজে ব্যবহার করুন। সাথে সাথে আপনার কোন বাক্য বা কর্ম অন্যের কষ্টের কারণ হচ্ছে কি না তা খেয়াল রাখুন।
১০. সর্বক্ষেত্রে সংযমের পরিচয় দিন। ঝগড়াসহ প্রতিটি বিশৃঙ্খলায় রোজাদার হিসেবে সংযমের পরিচয় দিন।
১১. এ মাসে নফল, ফরজ কিংবা দান-ছদকা ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে বহুগুণ সওয়াব রয়েছে বিধায় আপনার শ্রম, সময় ও সম্পদকে সর্বোচ্চ পুণ্য অর্জনে ব্যয় করুন।
১২. পথে আপনার চলাচল, গাড়ি পার্কিং কিবা আপনার পণ্য মজুদের ফলে যেন অন্যের পথ চলায় বিঘ্ন না ঘটে-তা লক্ষ্য রাখুন।
১৩. হালাল খাবার দ্বারা সেহেরি ও ইফতার করুন। সাধ্যমত দান করুন। এ গরমে সহজে হজম হয়, এমন খাবার বেশি গ্রহণ করুন।
১৪. রমজানের শেষ দশদিনের বিজোড় রাতে শবে কদর তালাশ করুন।
১৫. চাঁদ রাতকে উদযাপনের রাত না ভেবে দোয়া কবুল হওয়ার রাত জেনে সর্বোত্তম ব্যবহার করুন।
১৬. পরিশেষে, “রোজা আমার জন্য, আমি নিজেই এটির প্রতিদান দেব”- মহান আল্লাহর এ ঘোষণা মেনে রমজান মাসকে নেয়ামত হিসেবে গণ্য করে নিজের গুনাহ মার্জনা করার অপূর্ব এ সুযোগ কাজে লাগাই।
আল্লাহ আমাদের সবার উপর রহম করুন-আমীন।