জেনে নিন কোরবানির জন্য উপযুক্ত সুস্থ গরু চেনার উপায়
নিজস্ব প্রতিনিধি বুধবার রাত ০২:৩২, ৬ জুলাই, ২০২২
আর মাত্র কয়েকদিন পরই ঈদ-উল-আজহা। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পশুর হাটে চলছে দিনরাত বেচাকেনা। কিন্তু হাটে বিক্রির জন্য যেসব গরু নিয়ে আসা হয়, সেগুলোর সবই কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোরবানির উপযুক্ত সুস্থ গরু নয়। কারণ হাটে নিয়ে আসা গরুগুলোর মধ্যে রোগাক্রান্ত অথবা ক্ষতিকর রাসায়নিক ও ওষুধ খাওয়ানো গরুর সংখ্যাও কম না।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, স্টেরয়েড দিয়ে মোটাতাজা করা গরু দেখতে চকচকে, হৃষ্টপুষ্ট ও আকর্ষণীয় দেখালেও আসলে সেগুলো মোটাতাজা হয় না।
ওষুধ দিয়ে মোটাতাজা করা গরুতে এসব ক্ষতিকর উপাদান রান্নার পরেও মাংসে থেকে যেতে পারে। আর সেই মাংস খেলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাছাড়া, কোরবানির অনুপযুক্ত গরু কোরবানি দিলেও সেই কোরবানি কবুল হয় না। তাই কোরবানি কবুল করতে এবং স্বাস্থ্যকর নিরাপদ মাংস নিশ্চিতের জন্য সুস্থ গরু চেনাটা খুব জরুরি।
সুস্থ গরু চেনার উপায়
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু বিশেষজ্ঞরা গরু কেনার সময়ে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেন-
১. রাসায়নিক বা ওষুধ দেওয়া গরুর মাংসপেশি থেকে শুরু শরীরের অন্য অঙ্গগুলো অস্বাভাবিকভাবে ফোলা থাকবে। শরীরে পানি জমায় বিভিন্ন অংশে চাপ দিলে সেখানে গর্ত হয়ে দেবে যাবে এবং পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সময় নেবে।
২. অতিরিক্ত ওজনের কারণে এসব গরু স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা কিংবা নাড়াচাড়া করতে পারে না। ফলে শান্ত বা স্থির হয়ে থাকে।
৩. সুস্থ গরুর গতিবিধি চটপটে থাকে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বুঝে প্রতিক্রিয়া দেখানোর কাজ করে, যেমন কান ও লেজ দিয়ে মশা মাছি তাড়ানো। কিন্তু এসব গরু ভীষণ ক্লান্তিতে ঝিমাবে।
৪. এসব গরুর শরীরের অঙ্গগুলো নষ্ট হতে শুরু করায় এগুলো শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হবে। ফলে মনে হবে তারা যেন হাঁপাচ্ছে।
৫. সুস্থ গরুর মুখের সামনে খাবার ধরলে হয় সেটা টেনে খাবে নয়ত জাবর কাটবে। কিন্তু অতিরিক্ত স্টেরয়েড দেওয়া গরু কিছু খেতে চাইবে না। সঙ্গে মুখ থেকে প্রতিনিয়ত লালা ঝরবে।
৬. অসুস্থ গরুর নাক থাকবে শুকনা। কিন্তু সুস্থ গরুর নাকের উপরের অংশটি ভেজা বা বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে থাকবে।
৭. সুস্থ গরুর শরীরের রঙ উজ্জ্বল থাকবে। পিঠের কুঁজ মোটা, টানটান ও দাগমুক্ত হবে।
৮. সুস্থ গরুর উরুর মাংস থাকবে শক্ত। অন্যদিকে, অসুস্থ গরুর পা হবে নরম ও থলথলে।
৯. গরুর শরীরের তাপমাত্রা হতে হবে স্বাভাবিক। গরুর শরীরে হাত দিয়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনে হলে বুঝতে হবে গরুটি অসুস্থ।
১০. সুস্থ গরুর চামড়ার ওপর দিয়ে কয়েকটা পাঁজরের হাড় স্পষ্ট বোঝা যাবে।
কোরবানির উপযুক্ত পশু
কোরবানির জন্য কোন পশুটি উপযুক্ত তা জেনে নেওয়া খুবই জরুরি।
– গরুটিকে হতে হবে সম্পূর্ণ সুস্থ। এজন্য গরুর বিভিন্ন অঙ্গে কোন ক্ষত আছে কি না তা দেখে নিতে হবে।
– গরুর বয়স ন্যূনতম দুই বছর হলেই তা কোরবানির জন্য উপযুক্ত। এক্ষেত্রে গরুর বয়স যাচাই করার জন্য গরুর দাঁত দেখা যেতে পারে। গরুর নিচের পাটিতে যদি দুধ দাঁতের পাশাপাশি সামনে অন্তত দুটি কোদালের মতো স্থায়ী দাঁত থাকে তাহলে বুঝতে হবে সেটি কোরবানির উপযুক্ত।
– গাভি কোরবানির দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোরবানির আগে অবশ্যই নিশ্চিত হবে যে সেটি গর্ভবতী কি-না। কারণ কোনো অবস্থাতেই গর্ভবতী গাভি কোরবানি দেওয়া যাবে না। সাধারণত গর্ভবতী গাভীর পেট ও ওলান স্ফীত হয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ পশু ক্রেতাদের পরামর্শ
যেহেতু চাইলেও দেশি গরুর বেশি মোটাতাজাকরণ সম্ভব না, তাই কোরবানির জন্য দেশি গরু কেনার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
অভিজ্ঞ পশু ক্রেতাদের মতে, দিনের আলো থাকতে থাকতেই গরু কেনা উচিত। রাতের বেলা গরুর এতোগুলো বিষয় ঠিকঠাক যাচাই করা সম্ভব নাও হতে পারে।
এছাড়া, মোটা গরুর পরিবর্তে সুস্থ গরু কোরবানি দেয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী হওয়া দরকার বলে মনে করেন তারা।