রাজধানীর খিলক্ষেতে কাভার্ডভ্যানের চাপায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী নিহত
নিজস্ব প্রতিনিধি শুক্রবার সন্ধ্যা ০৭:৪৪, ১ এপ্রিল, ২০২২
রাজধানীর খিলক্ষেত ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী সাব্বির আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ওই শিক্ষার্থীর নাম মাইশা মমতাজ মিম। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ওসি সাব্বির আহমেদ জানান, আজ সকালে খিলক্ষেত ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন ওই শিক্ষার্থী। জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে পুলিশ এ তথ্য জানতে পারে। ওই সময়ের মধ্যেই দুর্ঘটনাস্থলে থাকা ব্যক্তিরা ওই শিক্ষার্থীকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি ওই মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে।
ওসি আরও জানান, কীভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পাশের একটি স্থানে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, ওই শিক্ষার্থীর পাশে একটি স্কুটি ছিল। আর, একটি কাভার্ডভ্যান তার পাশ দিয়ে চলে গিয়েছিল। স্কুটি থেকে পড়ে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে, নাকি কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
তবে, এরই মধ্যে ওই কাভার্ডভ্যানটির নম্বর পাওয়া গেছে। সেটি ধরার চেষ্টা চলছে বলে ওসি জানান।
তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সিনিয়র লেকচারার শর্মি হোসাইন।
তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
‘সকাল ৯.৩০ মিনিটে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সির ডাক্তারের ফোন পেলাম। ইংরেজি বিভাগের আন্ডারগ্রাজুয়েটের ছাত্রী মায়শা মমতাজ মিম কুড়িলের সামনে বাইক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে। ডাক্তার জানালেন হাসপাতালে তার মরদেহ নিয়ে গেছেন একজন রাজমিস্ত্রি। আহা, কত গাড়ি, বাইক, বাস হয়তো পাশ দিয়েই চলে গেছে। কারও সময় হয়নি থামার। হাসপাতালে আনার পর তার ব্যাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড পাওয়া গেছে। আমার নম্বর ডাক্তার পেয়েছেন আরেক ছাত্রীর কাছ থেকে। জিজ্ঞাসা করলেন মেয়েটার বাবা-মা’র সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব কি না। আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রক্টর অফিসকে জানালাম। উনারাও খবর পেয়েছেন। তার বাবা এখন কুর্মিটোলার পথে। মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ এখনও জানানো হয়নি তাকে। কি নিদারুণ বিস্ময় অপেক্ষা করছে ভদ্রলোকের জন্য!
আজ আমাদের বিভাগে একটা ইভেন্টে আসার জন্য মেয়েটা রওনা হয়েছিল। দুই বছর অনলাইনে ক্লাস করা বাচ্চা মেয়েটা হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের এইসব এক্সট্রা কারিকুলার অনুষ্ঠানে খুব আনন্দ নিয়ে যুক্ত হয়েছিল– কিছু কাজ শিখবে, প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে একটু আড্ডা দেবে, রাতে কিছু ছবি পোস্ট করবে, এইই তো। শেষ হয়ে গেল সব।
শহরের সড়কগুলো কেন এ রকম তরুণখেকো হয়ে উঠলো জানেন? কেন রাস্তায় স্পিড লিমিট দিতে পারিনি আমরা? কেন একটা ন্যূনতম নিরাপদ সড়ক বানাতে পারিনি আমরা? নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করেন প্লিজ।
মনে পড়ছে ২০১৮ সালে এই কুড়িলেই যে স্কুলছাত্রীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নিরাপদ সড়কের জন্য ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই মেয়েটির নামও ছিল মিম, তার বাবা ছিলেন একজন বাসচালক।’
সবশেষ তিনি লেখেন ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।