আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের মহব্বত লাভের উপায়
আরিফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সকাল ১১:১৬, ২৯ আগস্ট, ২০১৯
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকীঃ আমার প্রিয় পাঠক বৃন্দকে আমি বলতে চাই! আমাদের মধ্যে আল্লাহর এমন অনেক বান্দা রয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ যাদেরকে ভালোবাসেন। প্রিয় ভাই! ইচ্ছে করলে আপনি-আমিও হতে পারি আল্লাহর সেই সৌভাগ্যবান বান্দা। শুধু সামান্য একটু চেষ্টা ও মেহনত এবং কুরবানী মুজাহাদার মাধ্যমেই আমরা হাসিল করতে পারি আল্লাহর মহব্বত। কোরআন ও হাদীসে এমন কিছু আমলের কথা উল্লেখ রয়েছে যেগুলো করলে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ভালোবাসা দান করেন, আমালগুলো হলো-
আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান রাখা এবং নেক আমল করতে থাকা। ইরশাদ হয়েছে :
{إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمَنُ وُدًّا}যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে অবশ্যই রহমান তাদের জন্য (বান্দাদের হৃদয়ে)ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিবেন (সূরা মারয়াম : ৯৬)।
আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু কর্তৃক বর্ণিত এক হাদীস আনুযায়ী, আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন তখন জিব্রিল আ.-কে ডেকে বলেন, হে জিব্রিল, আমি উমুককে মহব্বত করি, অতঃপর তুমিও তাকে মহব্বত করো। জিব্রিল আ. তাকে মহব্বত করেন ও আকাশবাসীদেরকে ডাক দিয়ে বলেন, যে নিশ্চয় আল্লাহ উমুককে ভালোবাসেন, অতঃপর আকাশবাসীরা তাকে ভালোবাসে। এরপর তার জন্য পৃথিবীতে ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা রাখা হয় (আহমদ)।
দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ-মুসীবতে সবর করা এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা। ইরশাদ হয়েছে :
{إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ}নিঃসন্দেহে আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে রয়েছেন (সূরা বাকারা : ১৫৩)।
সব সময় সৎকর্ম করা, অন্যায়-কর্ম থেকে বিরত থাকা: ইরশাদ হয়েছে :
{وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ}আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন (সূরা আলে ইমরান : ১৪৮)।
কখনো কোনো অন্যায়-অপরাধ হয়ে গেলে আল্লাহর কাছে সকাতরে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং খাঁটি দিলে তাওবা করা। আর সব ধরনের অপবিত্রতা থেকে মুক্ত থাকা: ইরশাদ হয়েছে :
{إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ}নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে মহব্বত করেন এবং মহব্বত করেন পবিত্রতা অর্জনকারীদেকে (সূরা আল- বাকারা : ২২২)।
আমার প্রিয় পাঠক বৃন্দ! আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের মহব্বত লাভের পথ ও পদ্ধতি যখন আমরা জানতে পারলাম তখন আমাদের অবশ্য কর্তব্য হয়ে গেল আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের মহব্বত লাভের চেষ্টা করা। এ জন্য আমাদের করণীয় হবে উল্লিখিত আমলগুলো বেশি বেশি করা এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা।
أَقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ لِي وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوْهُاَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ هَدَانَا إَلَى الصِّرَاطِ الْمُسْتَقِيْمِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ أَجْمَعِيْنَ، أَمَّا بَعْدُ:
আমার প্রিয় পাঠক বৃন্দরগণ ! সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুম আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকে নিজদের জানমাল ও পরিবার-পরিজন থেকে বেশি মহব্বত করতেন। আর বিভিন্ন জিহাদের ময়দানে এবং হিজরতের কঠিন মুহূর্তে সাহাবায়ে কেরাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের প্রতি মহব্বতের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তার কোনো নজীর খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন:
{ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ}আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে (সূরা আল বায়্যিনাহ : ৮)।
আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের মহব্বত কেমন ছিলো নিম্নের হাদীসগুলো থেকে তার যৎকিঞ্চিৎ ধারণা পাওয়া যায়।
(عن عمروبن العاص رضى الله عنه قال: وَمَا كَانَ أَحَدٌ أَحَبَّ إِلَيَّ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا أَجَلَّ فِي عَيْنِي مِنْهُ، وَمَا كُنْتُ أُطِيقُ أَنْ أَمْلَأَ عَيْنَيَّ مِنْهُ إِجْلَالًا لَهُ، وَلَوْ سُئِلْتُ أَنْ أَصِفَهُ مَا أَطَقْتُ، لِأَنِّي لَمْ أَكُنْ أَمْلَأُ عَيْنَيَّ مِنْهُ،)
আমর ইবনুল আস রা, থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অধিক প্রিয় ও মর্যাদার অধিকারী আমার কাছে অন্য কেউ ছিলো না। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি সম্মান ও মর্যাদার কারণে আমি দৃষ্টি ভরে তাঁর দিকে তাকাতে পারতাম না। সুতরাং আমাকে রাসূলের অবয়ব বর্ণনা করতে বলা হলে আমি তা পারব না। কেননা দৃষ্টি ভরে রাসূলের দিকে আমি কখনো তাকাতাম না (মুসলিম)।
একদা আলী রা, কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আপনাদের মহব্বত কেমন ছিলো? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর শপথ! আমাদের কাছে তিনি আমাদের ধন-সম্পত্তি, সন্তান-সন্তুতি ও বাবা-মার চেয়েও অধিক প্রিয় ছিলেন। এমনকি তীব্র পিপাসার সময় ঠাণ্ডা পানি যেমন প্রিয়, আমাদের কাছে আল্লাহর রাসূল তার চেয়েও অধিক প্রিয় ছিলেন।
প্রিয় পাঠক বৃন্দকে জানাতে চাই ! উল্লিখিত আলোচনার নিরিখে আমরা প্রত্যেকে নিজের অবস্থা নিজে যাচাই করে দেখি। পরখ করে দেখি, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে আমরা কতটুকু মহব্বত করি আল্লাহর রাসূলকে আমরা কতটুকু মহব্বত করি। মুহাব্বতের দাবি কতটুকু, আর বাস্তবে আছে কতটুকু এবং কতটুকু হওয়া দরকার।