এখনো করোনায় আক্রান্ত হননি সেন্ট-মার্টিন দ্বীপের কেউ
ডেক্স রিপোর্ট শনিবার রাত ০২:৩৩, ৫ জুন, ২০২১
কক্সবাজার পৌরসভায় করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। গত ৩১ মে পর্যন্ত ৩ হাজার ২৪৫ জন করোনা রোগী নিয়ে জেলার শীর্ষে এই পৌরসভা। দ্বিতীয় অবস্থান উখিয়ার। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ২৫০ জন এবং তৃতীয় অবস্থানে থাকা টেকনাফে করোনা রোগী ৯২৫ জন।
তবে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে অবস্থিত সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কেউ এখনো করোনায় আক্রান্ত হননি। সেখানকার মানুষের জীবনযাপনও স্বাভাবিক। টেকনাফ উপজেলার এই দ্বীপের লোকসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। খোলামেলা পরিবেশ ও বাইরের লোকজনের দ্বীপে যাতায়াত বন্ধ থাকায় এমন পরিস্থিতি বলে দাবি করেন সেন্ট মার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মাসুদুর রহমান।
কক্সবাজার পৌরসভার পাশাপাশি উখিয়া ও টেকনাফে সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। সংক্রমণরোধে গত ২৩ এপ্রিল থেকে ৬ জুন পর্যন্ত এই দুই উপজেলায় জারি করা হয়েছে কঠোর লকডাউন। সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে কঠোর নজরদারির পাশাপাশি ৫টি রোহিঙ্গা শিবিরে চলছে কঠোর লকডাউন।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জেলার আট উপজেলা ও তিন পৌরসভায় ৩১ মে পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯৮ হাজার ৮৯০ জনের (এর মধ্যে ৪৩ হাজার ৫৩০ জন রোহিঙ্গা)। তাঁদের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৩৪৮ জনের (রোহিঙ্গা ১ হাজার ২১৭ জন)। করোনায় মারা গেছেন ১১২ জন (রোহিঙ্গা ১৬ জন)। রোহিঙ্গা ছাড়া জেলায় ৯ হাজার ১৩১ জন করোনা রোগীর মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভাসহ সদর উপজেলায় ৪ হাজার ৫৪৫ জন, উখিয়ায় ১ হাজার ২৫০ জন, টেকনাফে ৯২৫ জন, চকরিয়ায় ৭৬৫, রামুতে ৬৩৭, মহেশখালীতে ৬২৫, পেকুয়ায় ২৭৪ ও কুতুবদিয়ায় ১১০ জন।
সেন্ট মার্টিনে করোনা নেই
জেলার আট উপজেলায় করোনায় ৯৬ জনের মৃত্যুর মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভাসহ সদর উপজেলায় ৫৬ জন, টেকনাফে ১১ জন। এই ১১ জনের তালিকায় সেন্ট মার্টিনের কেউ নেই।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য মতে, ৩১ মে পর্যন্ত টেকনাফে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২ হাজার ৬৩৩টি। শনাক্ত হয়েছে ৯২৫ জনের। এর মধ্যে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কেউ নেই। ২ হাজার ৬৩৩ নমুনার মধ্যে সেন্ট মার্টিনের নমুনা ছিল প্রায় ৮০০ জনের। তার মধ্যে অন্তত ৩০০ ছিল নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যের নমুনা।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অনুপম বড়ুয়া বলেন, শহরের লোকবসতি অনেক। সমুদ্রসৈকতের কয়েক কিলোমিটারে কয়েক দিনে ছুটিতে চার-পাঁচ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে, স্বাস্থ্যবিধিও মানা হয় না। এ কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে ছোট দ্বীপে খোলামেলা পরিবেশ এবং বাইরের লোকজনের যাতায়াত সীমিত। সে কারণে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ সুরক্ষিত আছে।
সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটক নিয়ন্ত্রণ ছিল। শুরুর দিকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে লোকজনকে সচেতন করা হয়, মাস্ক পরতে উৎসাহিত করা হয়, বাইরের লোকজনের সঙ্গে দ্বীপের মানুষের মেলামেশাও হয়েছে কম। এ কারণে দ্বীপটি সুরক্ষিত।
সবকিছু স্বাভাবিক
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জ্বলোচ্ছাসে লণ্ডভণ্ড সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ওঠা-নামার একমাত্র জেটিতে সারাক্ষণ আড্ডা মানুষের। সকাল, বিকেল, রাতে নানা বয়সী মানুষ জেটিতে এসে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতচিহ্ন দেখছেন। ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসা সাগরের নীল জলে (জেটির নিচে) রঙিন মাছের ছোটাছুটি (বিচরণ) উপভোগ করছেন। জেটির শেষ প্রান্তে দাঁড়ালে আয়ত্তে আসে দ্বীপের উত্তর-দক্ষিণের অন্তত তিন কিলোমিটার এলাকা। প্রাণবৈচিত্র্যে ভরপুর প্রবাল দ্বীপের এমন রূপ কোথাও নেই। ভার্চ্যুয়াল জুম লাইন ব্যবহার করে দেখা গেছে দ্বীপের এই চিত্র।
বিকেলে জেটির একটি অংশে গোল হয়ে বসে লুডু খেলছিলেন দ্বীপের পাঁচজন যুবক। কারও মুখে মাস্ক নেই, সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখা হচ্ছে না। কারণ জানতে চাইলে খেলার দলের এক যুবক কেফায়ত উল্লাহ বলেন, সেন্ট মার্টিনে করোনা নাই, সবকিছু স্বাভাবিক।
প্রায় ৮০০ ফিট লম্বা জেটির বিভিন্ন অংশে আরও কয়েকটি দলে ৩০-৪০ জনের সমাগম। তাদের কারও মুখেই মাস্ক নেই। করোনা সংক্রমণ নিয়ে নেই কোনো আতঙ্ক।
সেন্ট মার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা বাইরের কাউকে দ্বীপে উঠতে দিচ্ছি না। এ কারণে দ্বীপের মানুষ সুরক্ষিত আছে।’