তাহিরপুর সীমান্তে মাদক ব্যবসায়ীদের দৌড়াত্ব বৃদ্ধি,ইয়াবাসহ ২জন আটক
মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া,সুনামগঞ্জ বুধবার দুপুর ০২:২৬, ৪ নভেম্বর, ২০২০
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে দিনদিন বেড়েই চলেছে মাদক ও কয়লা চোরাচালানীদের দৌড়াত্ব। সেই সাথে বেড়ে সহিংসতার ঘটনা। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে পাচাঁরকৃত কয়লা নিয়ে ইতিমধ্যে সীমান্তের লাউড়গড় ও চাঁরাগঁও সীমান্তে চোরাচালানী ও বিজিবির মধ্যে পৃথক ২টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
চোরাচালানীরা নিজেদেরকে বিজিবির সোর্স পরিচয় দিয়ে ওপনে মদ,গাঁজা,ইয়াবা ও চোরাই কয়লার ব্যবসা করেছে। তার পাশাপাশি বহিরাগত মাদক ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে ইয়াবা। আজ ০৪.১১.২০ইং বুধবার সকালে ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে আটককৃত ২ মাদক ব্যবসায়ীকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এঘটনার প্রেক্ষিতে তাহিরপুর থানায় মামলা-৩ দায়ের করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়া মাদক ব্যবসায়ীরা হলেন- জেলার মধ্যনগর থানার বাকাতলা গ্রামের মৃত হাসান আলীর ছেলে সাইদুল ইসলাম (৪৪) ও একই গ্রামের দুলা মিয়ার ছেলে আব্দুল কাদির (৪২)।
এব্যাপারে থানা-পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানাযায়-গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টায় র্যাব ৯এর সদস্যরা জেলার তাহিরপুর সীমান্তের বীরেন্দ্রনগর বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত বাগলী বাজারে ইয়াবা বিক্রির সময় ২৭৫৭ পিছ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম ও আব্দুল কাদিরকে গ্রেফতার করে। পরে রাত ১টায় দুই মাদক ব্যবসায়ীকে থানায় সোপর্দ করা হয়। এঘটনার আগে বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট গ্রামের বিজিবি সোর্স পরিচয়ধারী কালাম মিয়াকে ইয়াবার চালানসহ গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়ে ছিল পুলিশ। বর্তমানে সে জামিনে থেকে সীমান্ত এলাকায় ওপেন মাদক ও চোরাই কয়লার বাণিজ্য করছে। গত এক সপ্তাহ আগে সোর্স কালাম মিয়ার পাচাঁরকৃত অবৈধ মালামালসহ ১টি নৌকা আটক করে বিজিবি। কিন্তু তার নামে কোন মামলা হয়নি। চারাগাঁও সীমান্তের জংগলবাড়ি,কলাগাঁও ও চারাগাঁও এলাকায় র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ ইতিমধ্যে পৃথক অভিযান চালিয়ে ইয়াবা,জালটাকা ও মদসহ সোর্স পরিচয়ধারী দীপকসহ একাধিক মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। কিন্তু বিজিবির নাকের ঢগার উপরে দিয়ে সব সময় সোর্স পরিচয়ধারীরা মাদক ও কয়লা চোরাচালান করার পরও নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে বিজিবি।
তবে মাঝে মধ্যে সোর্সদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে আংশিক চোরাই কয়লা ও কয়েক বোতল মদ জব্দ করে বিজিবি। কিন্তু চোরাচালানী কিংবা সোর্স পরিচয়ধারী মাদক ব্যবসায়ীদের কখনোই গ্রেফতার করেনা। গত রবিবার সন্ধ্যায় সোর্স লেংড়া জামালের পাচাঁরকৃত চোরাই কয়লা নিয়ে জংগলবাড়ি গ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ২ নারীসহ ১২ জন আহত হয়। কিন্তু এব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি বিজিবি। এছাড়া বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত দুধেরআউটা গ্রামে বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী জিয়াউর রহমান জিয়া ও তার সহযোগী আংগুরী বেগম ইয়াবা ব্যবসা করছে দীর্ঘদিন যাবত। তাদের যন্ত্রণায় এলাকাবাসী অতিষ্ট। কিন্তু মিথ্যা মামলা-হামলার হয়রানীর ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে না। তবে ইয়াবাসহ মাদক স¤্রাজ্ঞী আংগুরী বেগমকে একাধিক বার গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
কিন্তু সোর্স জিয়াউর রহমান জিয়া রয়েছে এখন আইনের আওতার বাহিরে। তবে ওয়ান এলিভেনের সময় পাটলাই নদীতে বিজিবির নামে চাঁদা উত্তোলন করার সময় গোয়েন্দা পুলিশ সোর্স জিয়াউর রহমান জিয়াকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়ে ছিল। অন্যদিকে টেকেরঘাট পুলিশ ক্যাম্পের পাশে অবস্থিত লাকমা গ্রামের সোর্স লেংড়া বাবুল দীর্ঘদিন যাবত সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা,মদ ও গাঁজার ব্যবসা করছে। তার ছেলে পুলিশে চাকুরী করার সুবাদে বিজিবি ও পুলিশের সাথে সোর্স বাবুলের সাথে সু-সম্পক রয়েছে বলে জানাগেছে। তবে সোর্স বাবুলের বিরুদ্ধে অস্ত্র পাচাঁর ও চুরিসহ আরো একাধিক মামলা হয়েছে। তার বাড়িতে থেকে মাদক সক্ত হয়ে পড়ে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার তাহিরপুর প্রতিনিধি হাবিব সারোয়ার আজাদের ছেলে সিহাব সারোয়ার শিপু। আর মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে মসজিদের তালা ভেঙ্গে মোটর সাইকেল চুরি করে পালানোর সময় বিজিবির হাতে গ্রেফতার হয় সিহাব সারোয়ার শিপুসহ তার আরো ২ সহযোগী।
বর্তমানে মাদকসক্ত সিহাব সারোয়ার শিপুসহ তার আরো ২ সহযোগী জেলহাজতে রয়েছে। কিন্তু সোর্স লেংড়া বাবুল রয়েছে আইনের আওতার বাহিরে। অপরদিকে লালঘাট ও বাঁশতলা এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী রমজান মিয়া ও শফিকুল ইসলাম ভৈরব তাদের সিন্ডিকেডের সদস্য খোকন মিয়া,শহিদুল্লা,বাবুল মিয়া,জসিম মিয়া ও হারুন মিয়াকে নিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে কয়লা,মদ,গাঁজা পাচাঁর করলেও তাদেরকে আইনের আওতায় নিচ্ছেনা প্রশাসন। তবে সোর্স রমজান মিয়ার মদ ও গাঁজা পাঁচারের বিষয় নিয়ে এলাকায় সালিশ-বিচার হয়েছে। এড়াছা টেকেরঘাট,চাঁনপুর ও লাউড়গড় সীমান্ত দিয়ে বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারীরা একই ভাবে ইয়াবা,মদ,গাঁজা,বিড়ি,অস্ত্র ও গরু পাচাঁর করছে বলে এলাকাবাসী জানান।
এব্যাপারে চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার হাবিলদার শাহালাম বলেন- সীমান্তের বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে আমাদের বিজিবি অধিনায়কের (সিও) নিষেধ আছে,তাই কিছু বলতে পারব না। তাহিরপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ বলেন- সীমান্তে র্যাবের হাতে ইয়াবাসহ আটক হওয়া দুই ব্যক্তিকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আর সীমান্ত এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাচালানীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।