ঢাকা (বিকাল ৩:১৪) বুধবার, ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম

৩৪ বছর ধরে জীবনের রসদ যুগিয়ে চলেছেন প্রতিবন্ধী হাবিবুর

ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ Clock রবিবার রাত ০১:০৯, ৩ এপ্রিল, ২০২২

শারীরিক প্রতিবন্ধী (খর্বাকৃতি) হলেও সংসারের বোঝা হতে চাননি হাবিবুর রহমান। ভিক্ষাবৃত্তি করে ৩৪ বছর ধরে যুগিয়ে চলেছেন জীবনের রসদ। সংসারে স্ত্রী ও পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া এক মেয়ে থাকলেও তাদেরকে কাজ করতে দেননি। নিজের ভিক্ষাবৃত্তির আয়ে একাই টেনে নিয়েছেন সংসার ও মেয়ের পড়াশোনার খরচ। কিন্ত বয়স বেড়ে যাওয়ায় আগের মত চলতে পারছেন না পঞ্চাশোর্ধ হাবিবুর। এই অবস্থায় সরকার ও হৃদয়বানদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

হাবিবুর রহমানের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের বোকাইনগর ইউনিয়নের বাঘবেড় গ্রামে। তার বাবা মৃত ফজর আলী। চার ভাই-বোনের মধ্যে হাবিবুর তৃতীয়।

স্থানীয়রা জানান, হাবিবুরের মা ও এক বোন শারীরিক প্রতিবন্ধী। হাবিবুর জন্মগত ভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিলেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য পড়াশোনা করা হয়নি তার। স্বাভাবিক ভাবে কোন কাজ করতে পারেন না। চলাফেরা করেন লাঠিতে ভর দিয়ে। তার উচ্চতা ৩৬ ইঞ্চি ও ওজন ২৫ কেজি।

হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধী হয়ে সংসারে বোঝা হতে চাইনি। নিজের খরচ নিজে চালাতে ১৯৮৮ সাল থেকে গৌরীপুর রেলস্টেশন ও ট্রেনে ট্রেনে ঘুরে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করি। ৩৪ বছর ধরে এভাবেই চলছে। কিন্ত বয়স হওয়ায় এখন আগের মত চলতে পারছিনা। বিছানায় পড়ে গেলে পরিবারকে কে দেখবে এটাই দুশচিন্তা।
গ্রামে একটি টিনশেড ঘর ছাড়া হাবিবুরের তেমন কিছু নেই। প্রতিবন্ধী ভাতার যে টাকা পান সেটা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। দাম্পত্য জীবনে তার স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ে শারীরিক সমস্যাগ্রস্থ বলে জানিয়েছেন পরিবার।

প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে রিকশা কিংবা ইজিবাইকে চড়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে গৌরীপুর স্টেশনে আসেন হাবিবুর। পরে গৌরীপুর স্টেশন হয়ে চলাচলকারী ময়মনসিংহ-জারিয়া, মোহনগঞ্জ-ঢাকা, ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রেলপথের ট্রেনগুলোতে ভিক্ষাবৃত্তি করেন হাবিবুর। ঘুরে বেড়ান এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশন। দিন শেষে যা আয় হয় সেটা দিয়েই চলে সংসার ও মেয়ের পড়াশোনার খরচ। তবে সে সকল স্টেশনে প্লাটফর্ম থেকে যেসব ট্রেনের উচ্চতা বেশি ওই স্টেশনগুলোতে ট্রেনে উঠা-নামা করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন হাবিবুর।

হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আমেলা খাতুন বলেন, আমার স্বামী ভিক্ষা করে কোন দিন তিন/ চারশ টাকা আয় করতে পারে আবার কোন দিন করতে পারে না। এর মধ্যে বাড়ি থেকে স্টেশনে আসা-যাওয়া করতে খরচ হয় ১শ টাকার বেশি। দিন শেষে যা থাকে সেটা দিয়ে সংসার ও মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানো কষ্টকর। কেউ যদি মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নিত তাহলে খুব উপকার হতো।

গ্রামের বাসিন্দা সাহেদ আলী বলেন, প্রতিবন্ধী হলেও সংসারের বোঝা পঞ্চাশোর্ধ হাবিবুরকেই টানতে হয়। মাঝে মাঝে সে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকে। তখন আয়-রোজগার বন্ধ থাকে। তার একমাত্র মেয়েও শারীরিক সমস্যাগ্রস্থ। সবাই যদি সহযোগিতা না করে হাবিবুরের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে যাবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ সাংবাদিকদের বলেন, হাবিবুর রহমান প্রতিবন্ধী ভাতা পান। শুনেছি তার মেয়েটিরও শারীরিক সমস্যা রয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা তাকে সহযোগিতা করার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে।




শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT