ঢাকা (বিকাল ৪:৫৮) শুক্রবার, ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News নেপালে আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত হলেন নড়াইলের কৃতি সন্তান সোহাগ Meghna News নড়াইল জেলা ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবী মিলনমেলা অনুষ্ঠিত Meghna News বিআরডিবি’র নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন মহিউদ্দিন তালুকদার Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে শাশুড়ী হত্যায় অভিযুক্ত টুটুল পলাতক Meghna News গৌরীপুরে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মোৎসব পালিত Meghna News সিলেট টিটিসি থেকে ২২ বছর পর বদলী : মালিক হলেন লাল লাখ টাকার! Meghna News গৌরীপুরে হুমায়ূন আহমেদের নামে ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবী ভক্তদের Meghna News সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে বালু বোঝাই ট্রাক্টরের ধাক্কায় শিশু নিহত, চালক আটক Meghna News ভোলার চরফ্যাশনে মোটরসাইকেল-নসিমন সংঘর্ষে দুই বন্ধু নিহত

মুক্তির রজনী পবিত্র লাইলাতুল বরাত

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী Clock বুধবার রাত ০২:৩৯, ১৬ মার্চ, ২০২২

সমস্ত প্রশংসা সেই মহান প্রতিপালকের যিনি মানুষকে গোনাহ থেকে মুক্তি লাভের জন্য কিছু সময়কে নির্ধারিত করেছেন; যেন তারা সে সময়ে মহান প্রতিপালক’কে প্রাণভরে ডাকতে পারে ও তাদের পাপ মাফ করাতে পারে, আর প্রতিপালকের প্রিয় পাত্র হতে পারে।

এই নির্দিষ্ট সময়গুলোর মধ্যে মহিমান্বিত, তাৎপর্যমন্ডিত, ফজিলতপূর্ণ ও বরকতময় রাত শবে বরাত। শবে বরাত শাবান মাসের পঞ্চদশ রজনীতে পালিত হয়।

রাসুল (সা:)-এ মহিমান্বিত রাতকে ‘লাইলাতুন্ নিসফি মিন শাবান’ বা ১৫ শা’বানের রাত বলেছেন। ফার্সি শব্দ ‘শব’ অর্থ রাত/রজনী। আর বারাআত অর্থ মুক্তি, নিষ্কৃতি, অব্যাহতি, পবিত্রতা ই্যাদি। শবে বরাতের শাব্দিক অর্থ হল- মুক্তি, নিষ্কৃতি ও অব্যাহতির রজনী। এ রাতে যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা পাপী বান্দাদের ক্ষমা করেন, নিষ্কৃতি দেন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, সেহেতু এ রাতকে লাইলাতুল বারাআত বা শবে বরাত রজনী বলা হয়। যেহেতু এ মাসটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী; তাই এ মাসকে শাবান মাস নামকরণ করা হয়। এ মাসের পূর্ণ নাম হলো ‘আশ শাবানুল মুআযযম’ অর্থ মহান শাবান মাস(লিসানুল আরব, ইবনে মানযূর রহ:)।

মানুষ যদি এ রাতে নিজ কৃতকর্মের জন্য অনতপ্ত হয়ে চক্ষু হতে অশ্রু প্রবাহিত করে তাহলে আল্লাহ তার পাপরাশি মুক্ত করে দেন। ইরশাদ হচ্ছে- হা-মীম, এ স্পষ্ট কিতাবের শপথ! নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে বন্টন করে দেওয়া হয় প্রত্যেক হিকমতের কাজ (সুরাঃ দুখান- ১-৪)।

তাফসীরে জালালাইনে রয়েছে- ‘নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। আর বরকতময় রাত হল লাইলাতুল ক্বদর (ক্বদরের রাত) অথবা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান (শাবানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত)। কেননা এই রাতে উম্মুল কিতাব (কোরআন শরীফ) ৭ম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে (১ম আসমান) নাযিল হয়েছে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী’। (তাফসীরে জালালাইন পৃষ্ঠা-৪১০)।

তাফসীরে বাগভীতে বর্ণিত আছে- নিশ্চয়ই আল্লাহ শবে বরাতের রাতে সকল বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন এবং শবে ক্বদরের রাতে তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত করেন (তাফসীরে বাগভী, ৭ম খন্ড, পৃষ্ঠা-২২৮)।

‘শাবান’ মাসটি বিশেষ মর্যাদার হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর এ মাসেই কিবলা পরিবর্তন হয়; এ মাসে পূর্বের কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে কাবা শরীফের দিকে কিবলা নির্ধারিত হয়। ‘বারবার আপনার আকাশের দিকে মুখমন্ডল আবর্তন আমি অবশ্যই লক্ষ করি। সুতরাং এমন কিবলার দিকে আপনাকে প্রত্যাবর্তন করে দেব, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন। অতএব আপনি মসজিদুল হারাম (কাবা) এর দিকে চেহারা ঘুরান। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন ওই (কাবার) দিকেই মুখ ফিরাও।’ (সুরাঃ বাকারা-১৪৪)।

রাসুল (সা:)-এর প্রতি দুরুদ পাঠের নির্দেশনা সংবলিত আয়াতটি এ মাসেই অবতীর্ণ হয়। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ রাসুল (সা:)-এর প্রতি পরিপূর্ণ রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতারা রাসুল (সা:)-এর জন্য রহমত কামনা করেন; হে মোমিনরা! তোমরাও তাঁর প্রতি দুরুদ পাঠ করো এবং যথাযথভাবে সালাম পেশ করো’। (সুরাঃ আহযাব-৫৬)।

অন্যত্রে ইরশাদ হচ্ছে- ‘তোমরা রমজান মাসের জন্যে শাবান চাঁদের হিসাব রাখো’। রাসুল (সা:) রমজানের রোজা ব্যতীত শাবান মাসে অধিক রোজা রাখতেন, অন্য মাসে ততোধিক রোজা রাখতেন না। রাসুল (সা:) শাবান মাসকে নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন।

আসমা ইবনে জায়েদ (রা:)-হতে বর্ণিত- রাসুল (সা:)-ইরশাদ করেন- ‘শাবান আমার মাস, আর রমজান আল্লাহর মাস’। আবূ মূসা আশয়ারী (রা:) রাসুল (সা:)-হতে বর্ণনা করেন। রাসুল (সা:) ইরশাদ করেন- ‘মধ্য শা’বানের রাত্রিতে আল্লাহ পাক রহমতের তাজাল্লী ফরমান এবং তাঁর সমস্ত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতাপোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না’। (ইবনে মাজাহ)।

আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত- রাসুল (সা:)-হতে তিনি বর্ণনা করেন- রাসুল (সা:) আয়েশা (রা:)-কে জিজ্ঞেস করলেন- ‘হে আয়েশা! শাবান মাসের মধ্য রাতের মর্যাদা ও গুরুত্ব সম্পর্কে তুমি কি জান? তিনি আরজ করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা:) শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতের কি মর্যাদা রয়েছে? রাসুল (সা:) উত্তরে বললেন- আগামী এক বছরে কতজন আদম সন্তান ভূমিষ্ট হবে এবং কতজন মৃত্যুবরণ করবে তা এ রাত্রে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাত্রিতে তাদের আমল আল্লাহ দরবারে উপস্থাপন করা হয় এবং তাদের রিযিক অবতীর্ণ কিংবা নির্ধারণ করা হয়। অত:পর আয়েশা (রা:) বললেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা:) “আল্লাহ রহমত ছাড়া কারো পক্ষে কি জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়? রাসুল (সা:) বললেন- আল্লাহর বিশেষ রহমত ও একান্ত অনুগ্রহ ছাড়া কারো পক্ষে জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়। এ কথাটি রাসুল (সা:) তিনবার বললেন’। (মিশকাত, ফাজায়েলুল আওকাত)।

রাসুল (সা:) ১৫ শা’বানের দিনে রোজা রাখা এবং রাতে ইবাদত করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। আলী (রা:) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা:) ইরশাদ করেন- ‘শা’বানের ১৫তম রজনীতে তোমরা অধিক হারে আল্লাহ ইবাদত করো। অতঃপর দিনের বেলা রোজা পালন করো। সেদিন আল্লাহ সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে প্রথম আকাশে অবতীর্ণ হন এবং আহ্বান করতে থাকেন- আছে কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করবো; আছে কি কোনো রিজিক অন্বেষণকারী, আমি তাকে রিজিক দান করবো; আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত, আমি তাকে বিপদমুক্ত করবো। এমন আরো বিষয়ে কেউ প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তা সবই তোমাদেরকে দান করব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আহ্বান করতে থাকেন’। (মিশকাত)।

আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন- ‘এক রজনীতে আমি রাসুল (সা:)-কে বিছানায় পেলাম না। এই জন্য তাঁর সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। তারপর আমি জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে নবীজিকে আকাশের দিকে মাথা মুবারক উঠানো অবস্থায় দেখতে পেলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি এ ধারণা করছ যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা:) তোমার উপর অবিচার করেছেন? আয়েশা (রা:) বললেন; আমি এমন ধারণা করিনি, ভেবেছিলাম আপনি আপনার অন্য কোন বিবির নিকট গমন করেছেন। তখন রাসুল (সা:) ফরমালেন- ‘নিশ্চয় আল্লাহ পাক শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রে প্রথম আকাশে তাজাল্লী ফরমান- অত:পর তিনি বনী কালব গোত্রের:মেষের পশম সমূহের চেয়েও বেশী লোকের গুনাহ ক্ষমা করেন’। (তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ)।

এজন্য উক্ত রাতে নফল নামাজ, বেশি বেশি কাজা নামাজ আদায়, কোরআন তিলাওয়াত করা, জিকির-আজকার, দূরুদ ও তওবা-ইস্তিগফার করা উত্তম। রাসুল (সা:) ইরশাদ করেছেন- ‘১৫ শাবান রাত জেগে ইবাদাত কর এবং পরদিন রোজা রাখ। এ রাত্রে আপনজন যারা তাদের কবর যিয়ারত কর’। তাই নিজ পিতা-মাতা ও আয়ত্বের ভিতরে আওলিয়ায়ে কেরাম, বুজুর্গানে দ্বীনদের মাজার যিয়ারত করা অতি উত্তম। এতে ফয়েজ ও বরকত হাসেল হয়। তবে কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সারা রাত ব্যয় করা বোকামী। কেনান, ‘রাসুল (সা:)-কে মা আয়েশা (রা:) শা’বানের ১৫ তারিখ রাতে জান্নাতুল বাকীতে মোনাজাতরত অবস্থায় পেয়েছেন’। (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)।

শবে বরাত রজনীতে তওবা-ইস্তেগফার ও ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন মুমিনের কর্তব্য। উক্ত রাতে বোমা ফাটানো, তারাবাজি, আতশবাজি, অতিরিক্ত আলোকসজ্জা, পোলাও-বিরানি ও হালুয়া-রুটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

রাসুল (সা:)-হতে শিখিয়ে যাওয়া এবং সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন এবং যুগে যুগে ওলামা পীর মাশাইখগণ এ রাতে ইবাদাত করে গেছেন। তাদের রেখে যাওয়া আদর্শই হুবহু আমাদের অনুসরণ করতে হবে। এতে বাড়ানো-কমানোর কোনই অবকাশ নেই।

আল্লাহ আমাদের যথাযথভাবে শবে বরাত পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT