মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষের রাজনীতিতে মুজিব আদর্শের একজন সাহসী যোদ্ধা-
সাজাদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি বুধবার সকাল ১০:২৮, ১৯ অক্টোবর, ২০২২
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ছাত্র রাজনীতি থেকে অদ্যাবধি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষের রাজনীতিতে মুজিব আদর্শের একজন সাহসী যোদ্ধার নাম আবু সাঈদ সরকার। উলিপুরের রাজপথ কাপানো দলের সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে যে মানুষটি জীবন উৎসর্গ করে পথ হেটে এসেছেন। তিনি আগামী রবিবার (২৩ অক্টোবর) উপজেলার আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করছেন। দল ও সহযোগি অঙ্গ সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ সভাপতি পদে যোগ্যতম ব্যক্তি হিসেবে মনে করছেন তাকে।
তাকে ঘিরেই এখন একাট্টা হচ্ছেন উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। তাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক রয়েছে সরব। চলছে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা।
তিনি ১৯৭৬ খ্রি. ২৭ আগস্ট উপজেলার পূর্বছড়ারপাড়, নারিকেলবাড়ী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা ওই এলাকার বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী মৃত ময়েন উদ্দিন সরকার। মা মৃত মমতাজ বেগম। স্ত্রী মোছাঃ আনোয়ারা বেগম গৃহীনি শিক্ষাগত যোগ্যতা- বিএসএস। উলিপুর পৌর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।
আবু সাঈদ সরকার বি.এ (পাশ)। তার
পেশা ব্যবসা। তিনি উলিপুর এ্যাগ্রো ফার্ম এর স্বত্বাধিকারী। আয়ের প্রধান উৎস ব্যবসা ও কৃষি খাত থেকে। সাংবাদিকতা তার শখ।
তার দলীয় পরিচয় সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, উলিপুর পৌর শাখা (২০০২ সাল থেকে চলমান), সাবেক সভাপতি- বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, উলিপুর উপজেলা শাখা (১৯৯৪ সাল হইতে ২০০০ সাল পর্যন্ত)।
আবু সাঈদ সরকারের নিকট তার রাজনীতি জীবনের বর্ণনা জানতে চাইলে তিনি সংক্ষিপ্তভাবে জানান,
১৯৮৬ সালে এরশাদ শাসনামলে দলীয় প্রার্থী জনাব আক্তারুল করিম হারুন ভাইয়ের নৌকা মার্কার নির্বাচনে টিনের মাঈকে স্লোগান দিতাম।
১৯৮৭ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উলিপুর মহারাণী স্বর্ণময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ হই।
১৯৯০ সালে ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে এরশাদ পতন আন্দোলনে অংশ নেই।
১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জননেতা আমজাদ হোসেন তালুকদারের বিভিন্ন জনসভায় বক্তব্য ও প্রচার কাজে নিজেকে উৎসর্গ করি। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯৩ সালে উলিপুর সরকারি ডিগ্রী কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্রদল-ছাত্র ইউনিয়ন- ছাত্রলীগ ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। দুপুরে বাজারে একা পেয়ে অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমাকে মারাত্মক নির্যাতন করে। এই নির্যাতনের সংবাদ শুনে আমার আব্বা স্ট্রোক করে। আমি দীর্ঘদিন রংপুর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নেই। পরে
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ, পঙ্গু হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হই। আব্বা সুস্থ্য হলেও বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে। চিকিৎসা শেষে উলিপুর এসে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করি। কাউন্সিলে স্বপন- সোহরাব প্যানেলে ছাত্রলীগ কমিটি গঠন হলে আমি সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হই।
১৯৯৪ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হই। দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকার পর আমার আব্বা ১৯৯৪ সালের ১৪ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ গঠন করলেও উলিপুরে দুই-দুই বার নির্বাচন-উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে জননেতা আমজাদ হোসেন তালুকদার ও জনাব ফুলু সরকারের পক্ষে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলি। এরশাদের জনপ্রিয়তা থাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও তার ছোট ভাই লালু সেবার এমপি নির্বাচিত হন।
১৯৯৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে উপজেলা ছাত্রলীগের কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হই।
১৯৯৯ সালে উলিপুর পৌরসভা নির্বাচনে ৪নং ওয়ার্ডের কমিশনার এবং প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই।
২০০০ সালে উলিপুর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সদস্য পদে অন্তর্ভূক্ত হয়ে দলীয় কার্যক্রম গতিশীল করি।
২০০১ সালে বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলন করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার হামলা-মামলার শিকার হই। বিএনপি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ভাংচুর করে।
২০০২ সালে উলিপুর পৌর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই।
২০০৩ সালে বিএনপি বিদ্যুৎ বিহীন থাম্বার মত আশাহীন রাজনীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক স্বোচ্ছার ও জনমত গড়ে তুলি। তখন বিএনপি’র গ্রিড বিপর্যয়ের ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন বিদ্যুৎ বিহীন কাটাতে হয়। সে আন্দোলনও গণআন্দোলনে পরিণত করি।
২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট যখন গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে তখন বিএনপির চার দলীয় জোটের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলি।
২০০৫ সালে ১৭ই আগস্ট তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি দেশব্যাপী ৬৩টি জেলায় ৫২৫টি বোমা বিষ্ফরণ ঘটায়। বাংলা ভাইয়ের আবির্ভাব ঘটে। তখনও দলমত গঠন করে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করি।
২০০৬ সালে জামাত-বিএনপি তান্ডবলীলায় উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি করে। আমার প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ ভষ্মিভূত হয়। পূজি না থাকায় ব্যবসাটি আর দাড় করাতে পারিনি। রাজনীতিতে সব সময় সক্রিয় থাকার কারণে বিএনপি-জামাতের ক্যাডারদের তোপের মুখে পড়তে হয় প্রায় সময়।
২০০৭ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ সকল উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতি দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশে থেকে নিরোলস কাজ করেছি।
২০০৭-০৮ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটকালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাশে থেকে লগি-বৈঠা আন্দোলনে শরীক হই। আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়। আমিও আহত হই। আমি মামলার আসামী হই।
২০০৮ সালে উলিপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করি। প্রায় ২৮ হাজার ভোট পেয়েও পরাজিত হই। ৩১ হাজার ভোট পেয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক নির্বাচিত হন। তথাপিও বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করি।
২০০৯ সালের বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই মিটমিটে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছিল। আমিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তাদের প্রতিহত করি।
২০১০ সালে উলিপুর পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন প্রার্থী অংশ গ্রহণ করি। প্রায় ৪ হাজার ভোট পেয়ে পরাজিত হই। ৭ হাজার ভোট পেয়ে আব্দুল হামিদ সরকার মেয়র নির্বাচিত হন। ৫ জন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
২০১১ সালে টু মাইনাস ফর্মুলার বিরোধীতা করি। দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগে গড়ে উঠেনি। ফলে মাইনাস টু ফর্মুলার ঘোড়বিরোধীতা করি।
২০১২ সালে উলিপুর পৌর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে দ্বিতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই।
২০১৯ সালে উলিপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই।
২০১৯ সালে উলিপুর পৌর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে তৃতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই।
ছাত্রজীবন থেকে অর্থাৎ ১৯৮৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল সহ বিভিন্ন ধারায় মোট ২৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। যা সত্য প্রমাণ না হওয়ায় সব মামলা থেকে খালাস পেয়েছি, ইনশাআল্লাহ।
রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছি। যেমন:
সম্পাদক ও প্রকাশক সাপ্তাহিক কলমজমিন (২০০০ সাল থেকে অদ্যবধি চলমান), উপজেলা প্রতিনিধি মানবজমিন, সহ সম্পাদক দৈনিক কুড়িগ্রাম খবর, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি দৈনিক আল আমীন, সভাপতি- নারিকেলবাড়ী পন্ডিত মহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, সভাপতি নাগড়াকুড়া দারুল উলুম দাখিল মাদরাসা, প্রধান উপদেষ্টা তিস্তা নদী রক্ষা কমিটি কুড়িগ্রাম জেলা শাখা, উপদেষ্টা মানবতার ঘর, উলিপুর ও মানবিক বাংলাদেশ সোসাইটি, নির্বাহী পরিচালক আরডিএস (সমাজ সেবা অধিদপ্তর কর্তৃক রেজিষ্ট্রেশনকৃত), চেয়ারম্যান দূর্জয় ক্রীড়া সংগঠন, সদস্য উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী, সদস্য মসজিদুল হুদা পরিচালনা কমিটি, সদস্য উপজেলা সোস্যাল সাপোর্ট কমিটি, প্রধান সমন্বয়ক বুড়িতিস্তা বাঁচাও-উলিপুর বাঁচাও আন্দোলন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক উলিপুর প্রেসক্লাব, সাবেক সভাপতি উলিপুর প্রেসক্লাব, সদস্য উলিপুর প্রেসক্লাব।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল’র বিষয়ে বলেন, সর্বপরী আসন্ন উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে আমাকে সভাপতি পদ দেওয়া হলে উলিপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা পত্র প্রদান করবো। তিনি আরো বলেন, আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পর্যালোচনা, জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা ও ভোট ব্যাংকের আঞ্চলিকতা বিবেচনাসহ প্রকাশ্যে ও গোপনে জনমত যাচাই সাপেক্ষে আমাকে উক্ত পদে মনোনীত করা হলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করব, ইনশাআল্লাহ।