ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের
ক্রীড়া প্রতিবেদক বুধবার রাত ১১:১৩, ৭ ডিসেম্বর, ২০২২
ভারতের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে বাংলাদেশ ৫ রানে জিতেছে। এর ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করল বাংলাদেশ।
রোহিত শর্মা মেলাতে পারলেন না এক বলে এক ছক্কার সমীকরণ। ফলে যেন আবারো ফিরে এলো ২০১৫। আরো একবার বাঘের ডেরায় বিধ্বস্ত ভারত, আরো একবার বাঘেদের কাছে সিরিজে পরাজয়।
এই নিয়ে পরপর দু’বার বাংলাদেশের মাটিতে সিরিজ হারলো বিরাট কোহলিরা। বিপরীতে ‘অঘটন’ শব্দ মুছে সত্যিকার বাঘের রূপে ফিরেছে সাকিব-লিটনরা।
ব্যাটে বলে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশী অলরাউন্ডার; বাক্যটা শুনে হয়তো আপনার মানসপটে সাকিব আল হাসানের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠবে। তবে আজকের জন্য অন্তত আপনি ভুল, আজ এই স্বীকৃতি উঠেছে মেহেদী হাসান মিরাজের শিরে। দলের বিপদে ব্যাট হাতে বিধ্বংসী শতক, অতঃপর বল হাতেও ফিরিয়েছেন প্রতিপক্ষের সেরা দুই ব্যাটারকে। তার এমন অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ভারতকে ৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
এইদিন মাত্র ১৩ রানে ভারতের ২ উইকেট আর ৬৫ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে বল হাতে শুরু থেকেই দারুণ কিছুর আভাস দিচ্ছিল টাইগার বোলাররা। ক্যাচ ধরতে গিয়ে আজ বাঁহাতের বুড়ো আঙুলে চোট পান রোহিত শর্মা, যেতে হয় হাসপাতালে। ফলে শিখর ধাওয়ানের সাথে ওপেনিংয়ে আসেন বিরাট কোহলি। তবে প্রথম ম্যাচের মতো এদিন ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এবাদতের শিকার হয়ে ফিরেছেন মোটে ৫ রানে।
দলীয় ৭ রানেই দলের সেরা ব্যাটসম্যানকে হারানোর পর আরো ৫ রান যোগ করতেই হারায় শিখর ধাওয়ানকেও। ৮ রান করে মোস্তাফিজুর রহমানের শিকার তিনি। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ২৬ রান সংগ্রহ করে ফের উইকেট হারায় ভারত, ১১ করে সাকিবের শিকার ওয়াশিংটন সুন্দর। আগের ম্যাচের পারফর্মার লোকেশ রাহুল ৫ নম্বারে নেমে সুবিধা করতে পারেননি, ফিরেছেন ১৪ রানে, মিরাজের শিকার হয়ে।
তবে এরপর দলের হাল নিজের হাতে তুলে নেন শ্রেয়াস আইয়ার। অক্ষর প্যাটেলকে সাথে নিয়ে গড়ে তুলেন শতাধিক রানের জুটি। তাদের দুজনের ১০৭ রানের জুটি ভাঙেন মিরাজ, ৮২ রান করা আইয়ারকে ফিরিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। দলীয় ১৮৯ রানে ভয়ংকর হতে থাকা অক্ষর প্যাটেলকে ফেরান ইবাদত। আউট হবার আগে অক্ষর করেন ৫৬ রান।
দ্রুত শার্দুল ঠাকুর আর দীপক চাহারকে হারালে ৪৩ ওভারে ২১৩ রানে ৮ উইকেটে পরিণত হয় ভারতের স্কোরকার্ড। সেখান থেকে মোহাম্মদ সিরাজকে সাথে নয়ে ২৫ বলে ৩৯ রানের জুটি গড়ে খেলা জমিয়ে তুলেন ইনজুরি থেকে ফেরা রোহিত শর্মা। শেষ ওভারে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২০ রান। ২ চার আর ১ ছক্কায় ৫ বলে ১৪ রান তুলে ফেললে শেষ বলে সমীকরণ দাড়ায় ১ বলে ৬ রান। তবে মোস্তাফিজের সেই বলে রান নিতে পারেননি রোহিত শর্মা। ফলে ৫ রানের শাসরুদ্ধকর জয় পায় বাংলাদেশ।
বলের আগে ব্যাট হাতেও ঝলক দেখিয়েছেন মিরাজ। তুলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম শতক। তার ৮৩ বলে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংসে ভর করে ৭ উইকেটে ২৭১ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ করেন ৭৭ রান।
টস ভাগ্য আজও সায় দিয়েছে লিটন দাসের পক্ষে। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও টসে জিতেছেন তিনি। তবে আজ আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ অধিনায়কের। প্রথম ম্যাচ জিতে ফুরফুরে অবস্থায় থাকা বাংলাদেশের একাদশেও আসে এক পরিবর্তন। হাসান মাহমুদের বদলে একাদশে ফিরেন নাসুম আহমেদ।
বড় লক্ষের পথে হাঁটতে থাকলেও পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে এসে হিসেবে গোলমাল পাকিয়ে দেয় মোহাম্মদ সিরাজ। ব্যাট হাতে আজ স্মুখখ নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ লিটন কুমার দাস। ফিরেন ২৩ বলে মাত্র ৭ রান করে। মোহাম্মদ সিরাজের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। লিটনের আগে সিরাজ ফিরিয়েছেন আরেক ওপেনার এনামুল হক বিজয়কেও। শুরু থেকে আগ্রাসী মেজাজে খেলতে থাকা বিজয় ফিরেন ৯ বলে ১১ রান করে। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে ৪৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।
তবে এরপরউ জম হয়ে দেখা দেন উমরান মালিক।দারুণ খেলতে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তকে ২১ রানে ফেরান তিনি। খানিক বাদে ফিরেছেন সাকিব আল হাসানকেও। ওয়াশিংটন সুন্দরের শিকার হয়ে সাকিব ফেরেন ৮ রান করে। ভাইরা-ভাইয়ের জুটি আজ জমে উঠেনি, তাদের ৩ রানের জুটি ভাঙে ১২ রান করে মুশফিকুর রহিম বিদায় নিলে। আফিফ হোসেনও ফিরেন ব্যক্তিগত ০ রানে।
৩ রানের ভেতর ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। মাত্র ১৯ ওভারে ৬৩ রানে ৬ উইকেট হারানো দলটাকে বের করে আনেন মেহেদী মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দুজনে ১৬৮ বলে ১৪৮ রানের জুটি। মাহমুদউল্লাহ ৭৭ করে বিদায় নিলে ভাঙে এই জুটি। তবে থামেননি মিরাজ, নাসুম আহমেদকে সাথে নিয়ে ঝড়ো জুটি গড়ে দলকে এনে দেন ২৭১ রানের সংগ্রহ। ২৪ বলে হার না মানা ৫৪ রানের জুটিতে নাসুম আহমেদের অবদান ১১ বলে ১৮ রান। শেষ বলে শতক তুলে মিরাজ অপরাজিত থাকেন।