বিজ্ঞ পার্লামেন্টেরিয়ান এ্যাড. ফজলে রাব্বীর চির বিদায়
আসাদ খন্দকার,সাঘাটা,গাইবান্ধা রবিবার রাত ০১:৪৪, ২৪ জুলাই, ২০২২
জাতীয় সংসদের মাননীয় ডেপুটি স্পিকার ও গাইবান্ধা-৫ সাঘাটা ফুলছড়ি আসন হতে সাতবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ এ্যাড. ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
তিনি গত শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় আমেরিকার মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না…রাজিউন।
মৃত্য কালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি তিন কন্যা সন্তান রেখে যান। তার মৃত্যুতে সাঘাটার ফুলছড়িবাসি একজন অভিভাবক শুন্য হলেন। তার মৃত্যুতে দুই উপজেলায় নেতা কর্মীসহ আপামর জনগন শোকে বিহবল হয়ে পড়েছেন।
ডেপুটি স্পিকারের ছোট ভাই বোনারপাড়া সরকারি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ফরহাদ রাব্বী বলেন, আমার বড় ভাই পিতৃতুল্য ছিল। আজ থেকে আমরা অভিভাবক শুন্য হয়ে গেলাম।
তিনি আরো বলেন, বড় ভাইয়ের মরদেহ আগামী সোমবার গ্রামের বাড়িতে আনা হবে। তবে হেলিকাপ্টার যোগে বোনারপাড়া হাই স্কুল কিংবা গাইবান্ধার নেওয়া হতে পাড়ে।
তার বাল্য বন্ধু রেলওয়ের অবঃ গার্ড আলহাজ হোসেন আলী মুন্সি তার বাল্য স্মৃতি স্বরন করে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, বাল্যকালে তিনি খুব দূরুন্তপনা ছিলেন, ভালো ছাত্রও ছিলেন। একদিন একটি গাছের সব আম বন্ধুদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে ছিলো। সেটা নিয়েও সেই সময় ভিষণ হই-হুল্লর হয়েছিলো। সর্বপরি সে সৎ, আদর্শ এবং একজন সাধারন ঠিলেঠালা মানুষ ছিলো আমার বন্ধু। তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনঃ-
ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা নাম ফয়জার রহমান এবং মাতার নাম হামিদুন নেছা। ১৯৬১ সালে তিনি গাইবান্ধা কলেজে ভর্তি হন। তিনি বিএ এবং এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। পেশায় আইনজীবী ফজলে রাব্বী মিয়া রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন।
ব্যক্তিজীবনে তিনি একজন আইনজীবী ও বিজ্ঞ পার্লামেন্টেরিয়ান। ১৯৬৮ সালে তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সনদ লাভ করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সদস্য হন। ১৯৫৮ সালে রাজনীতিতে আসেন ফজলে রাব্বী মিয়া। তখন তিনি অষ্টম শ্রেণীতে পড়তেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান পাকিস্তানের মার্শাল ল’ চালু করেছিলেন। সে সময় ফজলে রাব্বীর চাচা উক্ত ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন।
চাচার মাধ্যমে তিনি মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পরেন। এভাবেই তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬২-৬৩ সালে শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন করেছিলেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফজলে রাব্বী মিয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। তিনি ১১ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তুলতে তিনি কাজ করেছেন।
ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয় ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর পূনরায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে যোগ দিয়ে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন। ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
দশম সংসদ থেকে তিনি ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হয়েছিলেন গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।
নিরহংকার এ নেতার মৃত্যুতে আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। এছাড়াও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন আওয়ামীলীগের সাঘাটা উপজেলা শাখার সভাপতি এ্যাড. সামশীল আরেফীন টিটু ও সাধারন সম্পাদক নাছিরুল আলম স্বপন।