ঢাকা (সন্ধ্যা ৬:২৬) বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিচারক নিয়োগে ব্যক্তি মূল্যায়নে প্রধান বিচারপতি মুখ্য ব্যক্তি

Court

Khabir Sabuj Khabir Sabuj Clock মঙ্গলবার ১২:৩১, ২৩ মে, ২০১৭

বিচারপতি নিয়োগের বিদ্যমান প্রক্রিয়া প্রধান বিচারপতি আরও উন্নত করতে পারেন। নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনজীবী ও অধস্তন আদালতের বিচারকদের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তি মূল্যায়নে প্রধান বিচারপতি মুখ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তি বলে মত দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি নিয়োগ বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া এক রায়ে এমন মত এসেছে। সংবিধানের ৯৫ (২) অনুচ্ছেদ তুলে ধরে যোগ্যতার বিষয়ে সাত দফা পর্যবেক্ষণসহ হাইকোর্টের দেওয়া ৪৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি আজ সোমবার প্রকাশ করা হয়।

 

রায়ে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হতে একজন ব্যক্তির ন্যূনতম বয়স ৪৫ হওয়া উচিত। বিচারকদের ক্ষেত্রে জেলা ও দায়রা আদালতে বিচারিক অভিজ্ঞতা তিন বছরের কম হলে উচ্চতর বিচারিক ক্ষেত্রে তাঁরা সুপারিশের জন্য গণ্য হবেন না।

 

বিচারক নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দিক-নির্দেশনা প্রণয়নে নির্দেশনা চেয়ে করা এক রিট আবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১৩ এপ্রিল বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। কিছু পর্যবেক্ষণসহ রুল নিষ্পত্তি করে দেওয়া রায়টি আজ প্রকাশ পায়। ২০১০ সালের ৩০ মে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী ওই রিট আবেদনটি করেন।

 

সাত দফার প্রথম পর্যবেক্ষণে বলা হয়, একজন ব্যক্তি, যিনি বাংলাদেশের নাগরিক ও যিনি সংবিধানের ৮ অনুচ্ছেদে বর্ণিত বাংলাদেশের চারটি রাষ্ট্রীয় মূল নীতি যথা জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার ওপর এবং মুক্তিযুদ্ধের ওপর আস্থা রাখেন, তাঁকে নিয়োগে সুপারিশ করা যাবে। তবে কেউ এই মূলনীতি ও ভাবধারার ওপর আস্থাহীন হলে তাঁকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা যাবে না।

 

দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সুপারিশ করা ব্যক্তির শিক্ষাজীবনে দারুণ ফলাফল, সমৃদ্ধ পেশাগত দক্ষতা, আইনগত বিচক্ষণতা ও একাগ্রতা থাকতে হবে। তৃতীয় দফায় বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আগ্রহী প্রার্থীর জীবন বৃত্তান্ত সংরক্ষণ করা যেতে পারে, যাতে প্রধান বিচারপতি ইচ্ছে করলে প্রাথমিক বিবেচনার জন্য ওই ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ সাক্ষাৎকারের জন্য তাদের সম্পদ ও দায়-দেনার বিবরণসহ হাজির হতে পারেন, যা কার্যকর, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভাবমূর্তির মধ্য দিয়ে যথার্থ সুপারিশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুবিধা দেবে।

 

চতুর্থ দফায় বলা হয়, পেশাগত ক্ষেত্রে সময় দেওয়ার মধ্য দিয়ে একজন ব্যক্তি পেশাগত দক্ষতা এবং যোগ্যতা অর্জন করেন। তাই সাধারণভাবেই প্রার্থীর বয়স সুপারিশের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত। ভারতীয় আইন কমিশনের ৮০ তম প্রতিবেদনে বিচারকদের নিয়োগের বিষয়ে দেওয়া পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, একজন বিচারকের জন্য পরিপক্বতা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বহু বছরের চমকপ্রদ পেশাগত কৃতিত্বের কোনো বিকল্প নেই। এ বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে আদালতের মত, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হতে চাওয়া একজন ব্যক্তির ন্যূনতম বয়স ৪৫ হওয়া উচিত।

 

পঞ্চম দফায় বলা হয়, ভালো মানের নিয়োগ নিশ্চিত করতে প্রধান বিচারপতির সুপারিশের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে নিযুক্ত আইনজীবীদের অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। তবে খুব ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে হাইকোর্টে নিযুক্ত আইনজীবীদেরও তাদের কাজের পরিধি, চর্চার অভিজ্ঞতা, সততা ও আন্তরিকতাকে আমলে নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের জন্য তাঁদের সুপারিশ করা যেতে পারে।

 

ষষ্ঠ পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, অধস্তন বিচারিক ক্ষেত্রে কর্মরত বিচারকদের ক্ষেত্রে জেলা ও দায়রা আদালতে বিচারিক অভিজ্ঞতা তিন বছরের কম হলে তাঁরা উচ্চতর বিচারিক ক্ষেত্রে সুপারিশের জন্য গণ্য হবেন না। সপ্তম দফায় বলা হয়, অধস্তন বিচারিক ক্ষেত্রে কর্মরতদের সুপারিশের ক্ষেত্রে মেধা এবং একাগ্রতাও অন্যতম বিবেচ্য হবে। এটা মাথায় রাখতে হবে যে উচ্চ মেধা সম্পন্ন একজন ব্যক্তির একাগ্রতা না থাকলে তিনি প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর হন।

 

রায়ে বলা হয়, হাইকোর্ট বিভাগ থেকে কাউকে নিয়োগের ক্ষেত্রে মতামত গঠন এবং যথার্থ, কার্যকর ও স্বচ্ছ সুপারিশের জন্য প্রধান বিচারপতি যদি মনে করেন, তাহলে তিনি আপিল বিভাগের দুজন এবং হাইকোর্ট বিভাগের দু’জন জ্যেষ্ঠতম বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। প্রধান বিচারপতি এই সুপারিশকে মতামত হিসেবে দেওয়ার পরে ওই সিদ্ধান্তকে অনুমোদন না করার কোনো উপায় থাকবে না, যদি না সুপারিশকৃত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ কোনো রাষ্ট্র বিরোধী বা সমাজবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকেন।

 

রায়ে বলা হয়, দশ বিচারপতির মামলায় আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণ অনুসারে প্রধান বিচারপতির দেওয়া সুপারিশ অযৌক্তিক কারণে গোপন রাখা যাবে না।

 

ওই আইনজীবীর করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১০ সালের ৬ জুন হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে বাছাই-প্রক্রিয়ায় ‘স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা’ আনতে কেন সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা তৈরি করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। এই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি রায় হয়। এই মামলায় অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ড. কামাল হোসেন, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, শফিক আহমেদ ও এ এফ হাসান আরিফ মতামত দেন।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT