ধর্মপাশায় রহস্যজনক কারণে ৩টি জলমহাল ইজারা দিতে সময়ক্ষেপণ;বিপাকে মৎস্যজীবিরা
মোবারক হোসাইন,ধর্মপাশা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ০৬:৩৯, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২
নির্ধারিত সময়ের পাঁচমাস পেরিয়ে গেলেও সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জালধরা, বারিয়া নদী ও কোদালিয়া-পেকুয়া-দেবুয়ার খাল এই তিনটি জলমহাল ইজারা প্রদানে রহস্যজনক কারণে উপজেলা প্রশাসন বিলম্ব করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় ওই তিনটি জলমহাল অরক্ষিত থাকায় স্থানীয় মানুষজন জলমহালগুলোতে দিনে রাতে নিষিদ্ধ কারেন্ট, মশারি (খনা) জালসহ নানাভাবে অবাধে মা ও পোনা মাছ নিধন করে আসছে।
ফলে জলমহাল ইজারা পাওয়ার জন্য অনলাইন আবেদনে অংশগ্রহণকারী মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সদস্যরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছ।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দিঘা বিল, হরিবন্দের বিল ও দাইড়, ইজারা বিল, উব্দাখালী নদী তৃতীয় খন্ড, আলনীড় দাইড়, জালধরা, বারিয়া নদী, কোদালিয়া-পেকুয়া-দেবুয়ার খাল ও লম্বা বিলের ঢালা এই নয়টি জলমহাল ১৪২৯ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ থেকে ১৪৩১ বঙ্গাব্দের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত তিনবছরের জন্য ইজারা দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সরকারি বিধি মেনে এসব জলমহালগুলোর ইজারামুল্যসহ অন্যান্য পাওনাদি পরিশোধ সাপেক্ষে এটি চলতি বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখের (১৪এপ্রিল) মধ্যে তীরবর্তী যোগ্য সমিতিকে বুঝিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে।
ধর্মপাশার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সালমুন হাসান বিপ্লব, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা শরীফ আহম্মদ ও তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেদুয়ানুল হালিম স্বাক্ষরিত গত ২৮ এপ্রিল জলমহালগুলোর আবেদনকৃত সমিতিগুলোর প্রতিবেদন তৈরি করেন।
গত ৪ আগস্ট উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় এখানকার নয়টি জলমহালের মধ্যে ছয়টি জলমহালকে তীরবর্তী যোগ্য ছয়টি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির অনুকুলে ইজারা দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় জালধরা,বারিয়া নদী ও কোদালিয়া-পেকুয়া-দেবুয়ার খাল এই তিনটি জলমহালের পুনরায় তদন্ত করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। এই তিনটি জলমহালের জন্য তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সমিতির কার্যালয় ও যাবতীয় কাগজপত্রাদি ঠিক থাকায় এবং তীরবর্তী হওয়ায় তদন্ত কমিটি জালধরা জলমহালটি স্থানীয় দক্ষিণ সলপ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড এর অনুকুলে ও বারিয়া নদী জলমহালটি স্থানীয় বালজুড়ী মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির অনুকুলে এবং কোদালিয়া-পেকুয়া-দেবুয়ার খাল জলমহালটি স্থানীয় চুনাই মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির অনুকুলে ইজারা দেওয়ার জন্য গত ১৩সেপ্টেম্বর উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি (ইউএনওর) কাছে পৃথক প্রতিবেদন জমা দেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে ইউএনওর কার্যালয়ে উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপানা কমিটির সভায় উপস্থিত থাকার ইচ্ছে পোষন করায় উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা পিছিয়ে দেওয়া হয়। তবে কবে উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হবে এ নিয়ে এখনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের দক্ষিণ সলপ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সম্পাদক সৈয়দ সবুজ বলেন, আমাদের সমিতিটি জালধরা জলমহালের তীরবর্তী যোগ্য সমিতি। ১৪২৯ বাংলার পাঁচ মাস চলে গেছে। সবকিছু ঠিক থাকার পরও রহস্যজনক কারণে উপজেলা প্রশাসন এই জলমহালটি আমাদেরকে ইজারা দিচেছ না। তালবাহানা করে সময় পার করে চলেছে। এতে আমাদের চরম ক্ষতি হচেছ। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ইউএনও মো. মুনতাসির হাসান বলেন, প্রভাবশালীদের চাপে পড়ে নয়, নানাবিদ সমস্যায় জলমহালগুলো যথাসময়ে ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ইজারা না হওয়া তিনটি জলমহালের তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা স্থানীয় সাংসদ মহোদয় জলমহাল কমিটির সভায় থাকায় ইচেছ পোষন করেছেন। তাই সভা স্থগিত করে দিয়েছি। পরে সভার তারিখ জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদেরকে জানিয়ে দেয়া হবে।