ঢাকা (বিকাল ৫:২১) সোমবার, ২০শে মে, ২০২৪ ইং

দাবিদারহীন ১০৮ কোটি টাকা পড়ে আছে রাষ্ট্রীয় অ্যাকাউন্টে



ইসলামী ব্যাংকের বিশ্বনাথ শাখার গ্রাহক জাহেদ মিয়ার অ্যাকাউন্টে ৬৩ হাজার ৬০০ টাকা ছিল। কিন্তু গত ১০ বছর ধরে তার অ্যাকাউন্টে কোনো লেনদেন হয়নি। অবশেষে তার দেওয়া ঠিকানায় নোটিশ পাঠাতে বাধ্য হয় ব্যাংক।

এরপরেও কেউ ওই টাকার মালিকানা দাবি না করায় শেষ পর্যন্ত সব টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যায়।

দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে এ ধরনের দাবিহীন টাকার পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। গত দুই বছরে প্রায় ৭২ কোটি টাকার কোনো মালিকানা খুঁজে পায়নি ব্যাংকগুলো।

২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা পড়া দাবিহীন অর্থের পরিমাণ ১০৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বিভিন্ন ব্যাংক এ ধরনের দাবিহীন ১৫ কোটি ২১ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে তা ছিল ১০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, ২০১৯ সালে দাবিবিহীন অর্থের পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

কিন্তু তারপর থেকে এই অর্থের পরিমাণ আরও বাড়তে শুরু করে। পরের বছর ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা পড়া দাবিহীন অর্থের পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেড়ে যায়।

২০২০ সালে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩৪ কোটি ৪৫ লাখ এবং ২০২১ সালে ৩৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ অর্থের পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। ১০ বছর লেনদেন না হওয়ার পরও অনেক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে এ ধরনের টাকা ও তাদের লকার থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র জমা দিচ্ছে না।

আবার কোনো কোনো ব্যাংক সঠিকভাবে তথ্য ও সুদ হিসাব করছে না। ব্যাংকগুলো বছরের পর বছর ধরে এই তহবিলগুলোকে তাদের নিজস্ব সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, “কয়েক বছর আগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দাবিহীন আমানত পরিশোধ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা করছে।”

তিনি আরও বলেন, “তবে এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। কোনো ব্যাংকে এ ধরনের অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ব্যাংকিং কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (সংশোধিত ২০১৬) এর ধারা ৩৫ অনুযায়ী, যদি ১০ বছরে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোনো লেনদেন না হয় এবং আমানতের গ্রাহক খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকে সেই টাকা জমা দিতে হবে।

দাবিহীন আমানত ও মূল্যবান জিনিসপত্র জমার বিবরণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক থেকে টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়ার পরও দুই বছরের মধ্যে দাবিদার এলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

এজন্য সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থানান্তরিত দাবিহীন আমানত এবং মূল্যবান জিনিসপত্রের তালিকা তাদের ওয়েবসাইট, সরকারি গেজেট এবং এক বছরের জন্য প্রতি তিন মাসে একবার অন্তত দুটি সংবাদপত্রে প্রকাশ করবে।

এক বছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটেও এ সংক্রান্ত তথ্য প্রদর্শিত হবে। এর পরেও যদি দুই বছরের মধ্যে কোনো দাবি না উত্থাপন করা হয়, তাহলে অবশিষ্ট অর্থ বা মালামালে ওপর প্রকৃত মালিকের আর কোনো দাবি থাকবে না। পরবর্তীতে তা সরকারের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT