তরুণকে পাঠানোর কথা মালয়েশিয়ায়, পাঠানো হলো দুবাই!
মোবারক হোসাইন, ধর্মপাশা, সুনামগঞ্জ বুধবার রাত ১১:৪৩, ৫ অক্টোবর, ২০২২
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের সাগর মিয়া (২২) নামের এক তরুণকে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে দুবাই পাঠিয়ে দিয়ে ওই তরুণের মায়ের কাছ থেকে সাড়ে চারলাখ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।
উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামের বাসিন্দা দবির তালুকদার এ ঘটনায় জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী ওই তরুণের বিধবা মা কুকিলা আক্তার (৪৪) গতকাল মঙ্গলবার (৪অক্টোবর) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনওর) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী ওই নারীর দেওয়া লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের কুকিলা আক্তারের স্বামী রমজান মিয়া পাঁচবছর বছর আগে মারা যাওয়ার পর তাঁর ছেলে মেয়েদের নিয়ে সিলেটের ভোলাগঞ্জ এলাকায় শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বিধবা ওই নারীর দ্বিতীয় ছেলে সাগর মিয়া (২২)কে মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য নানাভাবে উৎসাহিত দিয়ে তাকে প্রলোভিত করে আসছিলেন একই উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামের দবির তালুকদার (৪২)। সাগর মিয়া মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য তাদের বিধবা মায়ের ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ছেলের আবদার মেটাতে ওই বিধবা নারী তাঁর ছেলেকে মালয়েশিয়া পাঠাতে সম্মত হন। দবির তালুকদার মালয়েশিয়ার হোটেলে হোটেল বয় হিসেবে তিনবছর মেয়াদে সাগর মিয়াকে বৈধভাবে কাজ দেওয়ার শর্তে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজাপুর গ্রামের কয়েকজন গ্রাম্য মাতব্বরের সামনে সাড়ে চারলাখ টাকা দবির তালুকদারকে বুঝিয়ে দেন ওই নারী। দবির টাকা বুঝে পেয়ে চলতি বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে বিধবা ওই নারীর ছেলে সাগর কে ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই পাঠিয়ে দেন। দুবাই গিয়ে ওই তরুণ বিপদে পড়ে যান। খাবার,থাকাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। দুবাইয়ে থাকা নিজ গ্রামের কয়েকজন আত্বীয় সাগরকে আশ্রয় দেন এবং থাকা খাওয়াসহ বৈধভাবে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।
বিধবা ওই নারী কুকিলা আক্তার বলেন,সিলেটের ভোলাগঞ্জে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আমাদের পেটে ভাত জুটে। ধারদেনা করে আমি গ্রাম্য মাতব্বরদের সামনে আমার ছেলে সাগর মিয়াকে মালয়েশিয়ায় হোটেলে তিনবছরের জন্য কাজ দেওয়ার শর্তে দবির তালুকদারের হাতে আমি সাড়ে চারলাখ টাকা তুলে দিয়েছিলাম।দবির আমার ছেলেকে মালয়েশিয়ায় না পাঠিয়ে দুবাই পাঠিয়ে দিয়ে সাড়ে চার লাখ আত্মসাত করেছে। আমার ছেলে দুবাই গিয়ে খুবই বিপদে পড়েছিল। সেখানে আমাদের গ্রামের কয়েকজন আত্বীয় আমার ছেলেকে খা্ওয়া দাওয়া ও বৈধভাবে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। আমি এ নিয়ে সুবিচার চেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে ইউএনও স্যারের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি।
উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামের বাসিন্দা দবির তালুকদার বলেন, আমি মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে কারও কাছ থেকে কোনোরকম টাকা পয়সা নিইনি। বৈধভাবে দুবাই পাঠানোর কথা বলে টাকা নেওয়া হয়েছিল। আমি বৈধভাবে তাকে দুবাই পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। এখন আমাকে জড়িয়ে নানাধরণের মিথ্যা অপবাদ রটানো হচেছ।
ইউএনও মো.মুনতাসির হাসান সাংবাদিকদের বলেন,এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ আমি পেয়েছি। তদন্ত করে এ ব্যাপারে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।