ঢাকা (রাত ৮:৩১) রবিবার, ১৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News সাইফুল প্রধানের হাতের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে ঢাকারগাঁও গ্রামের সমাজব্যবস্থা ও উন্নয়নচিত্র Meghna News বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঢাকা প্রতিদিনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিকাশ কর্মীর বাড়ি ফেরা হলোনা Meghna News হাফেজ-এ- কোরআনদের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে অনন্য উচ্চতায়: আব্দুস সাত্তার Meghna News লোহাগড়ায় পুনুরুজ্জীবিত হতে যাচ্ছে ঐতিহাসিক ”জিয়া মঞ্চ” Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষক দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত Meghna News দাউদকান্দিতে যৌথবাহিনীর অভিযানে নগদ অর্থ ও মাদকসহ দুইজন আটক Meghna News জাতীয় সংসদে কোনো সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে না! Meghna News বিস্ফোরক আইনে প্রধান শিক্ষক শফিক গ্রেফতার Meghna News নাগরপুরে বিডি ক্লিনের উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার না করায় শিক্ষক পেটালেন পৌর মেয়র

এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন, 
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি Clock সোমবার সকাল ১০:৪৩, ১৭ অক্টোবর, ২০২২

এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় নকল করার দায়ে বহিস্কৃত দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের তদবির না শোনায় প্রধান শিক্ষককে মারধর ও লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর মেয়র মো. মোখলেসুর রহমান, মেয়রের পেটোয়া বাহিনী ও জেলা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন জেলার ঐহিত্যবাহী রাজারামপুর হামিদুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সামিউল ইসলাম। তিনিও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক। শনিবার (১৫ অক্টোবর) গভীর রাত ১১ টার দিকে পৌর এলাকার ঢাকা বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থিত আরাফাত বোর্ডিং-এ এই মারধরের ঘটনা ঘটে।

 

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, রাজারামপুর হামিদুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে চলছে এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা চলাকালীন সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নকল করছিলো দুই জন ছাত্র। পরে ধরা পড়লে শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনা করে পরীক্ষা রুমে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ ও নকল করার অপরাধে দুই ছাত্রকে নিয়ম অনুযায়ী বহিষ্কার করেন রাজারামপুর হামিদুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে ওই দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য জোড় তদবির করেন পৌর পিতা মোখলেসুর রহমান ও দুই পৌর কাউন্সিলর। কিন্তু নিয়ম লংঘণ হবার কারণে ওই দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের তদবির না শোনায় বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলামকে শনিবার রাতে বেধড়ক মারধর করেন মেয়র ও তার অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আর এতে গুরুতর আহত হন প্রধান শিক্ষক।

 

এ বিষয়ে রাজারামপুর হামিদুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.

সামিউল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ে চলছে এসএসসি টেস্ট পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা চলাকালীন মোবাইলে তুলে নিয়ে আসা ছবি দেখে ডিজিটাল নকল করছিলো এক ছাত্র। আর তার দেখে দেখে অন্য এক ছাত্রও তা লিখছিলো। নকল নকলই, হোক তা এনালগ কিংবা ডিজিটাল। পরে বিষয়টি দেখতে পেয়ে ডিউটিরত শিক্ষকরা মোবাইলে থাকা নকল ও পরীক্ষার খাতায় লেখা উত্তরের মিল পায়। পরে শিক্ষকদের মাঝে আলোচনার মাধ্যমে ওই দুই ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়। এদিকে বহিষ্কৃত ওই দুই শিক্ষার্থীর পরিবার মেয়রের কাছে তাদের সন্তানদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করলে পৌর মেয়রের নির্দেশে পরদিন শুক্রবার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. তৌহিদুল ইসলাম এবং ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শামশুল হক ওই দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আমাকে মোবাইল ফোনে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু এটা অন্যায় হবে এবং এমন অনুরোধ রক্ষা করলে ছাত্ররা পড়াশোনা করবে না এবং এতে স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আমি তাদের বুঝিয়ে বলি। তবে আমার কথা তাদের মন মতো না হওয়ায় শনিবার (১৫ অক্টোবর) পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান নিজে আমাকে ফোন করে ওই দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জোড় অনুরোধ করেন। তাকেও আমি নিয়ম লংঘনের কথা বললেও শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টা দেখবো বলে জানাই। আর এ কথা বলা মাত্রই মোবাইলে মেয়র আমাকে উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমি যা বলছি আপনি তাই করবেন। আপনি এভাবে উত্তেজিত হয়ে কথা বলছেন কেন ? জানতে চাইলে মেয়র একই সুরে বলেন আমি কে বলছি, এটা কি আপনি জানেন ? আর আমাকে তার জোসনারা পার্কে ডাকেন। তখন আমি যেতে না চাইলে আমি কোথায় আছি জানতে চান। এ সময় আমি আরাফাত বোর্ডিং-এ আছি বলে জানাই। এ কথা বলার কিছু পরেই দলবল নিয়ে এসে সেখানে হাজির হন মেয়র মোখলেসুর ও তার দলবল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম। এ সময় মেয়রের নির্দেশেই তার পিএস আব্দুল জলিল, ছাত্রলীগ নেতা ফয়সালসহ মেয়রের বাহিনী আমাকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে মেয়রও উত্তেজিত হয়ে আমাকে আঘাত করেন। তখন আমি প্রাণ রক্ষার্থে মৌখিকভাবে ওই দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের কথা বলে জানে রক্ষা পাই। তারপরও সঠিকভাবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হলে রোববার থেকে স্কুলে না যাবার হুমকি দেন তিনি। আর তাই আমি এখনও চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি বলে রোববার রাতে জানান সামিউল ইসলাম। প্রধান শিক্ষক আরও জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করলেও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামসুজ্জামান বাবুকে জানিয়েছি। আলোচনা সাপেক্ষে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

 

এদিকে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়-বাউবি’র চাঁপাইনবাবগঞ্জ উপ-আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বয়কারী মো. শামসুজ্জামান বাবু জানান, প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলাম মারধরের বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। তবে দাপ্তরিক কাজে ঢাকা আসায় কোনো প্রকার ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এলাকায় গিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

 

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলামের বড় ভাই ও পৌর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মারধরের পর সেখানে উপস্থিত হলে পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমানসহ সেখানে তার লোকজন উত্তিজিত অবস্থায় উপস্থিত ছিল। পরে সেখান থেকে সবাইকে সরে যেতে বলি এবং প্রধান শিক্ষক যাতে আবারো লাঞ্ছিত না হন সেজন্য লোক মারফত তাকে নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করি। তবে প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে কোন অভিযোগ করলে দলীয়ভাবে মেয়রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কয়েকটি মটরসাইকেল যোগে ঢাকা বাস স্ট্যান্ডের আরাফাত বোর্ডিং-এ আসেন মেয়র মোখলেুসর রহমান ও তার দলবল। এসে মেয়রই প্রথম প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলামকে মারধর শুরু করেন। পরে তাকে অফিসে ঢুকিয়েও আরেক দফা মারধর করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা উপস্থিত হয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

 

তবে প্রধান শিক্ষককে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান বলেন, কেউ অভিযোগ করলেই তো সত্য হয়ে যায় না। আর এমন ঘটনায় আমি জড়িত নই।

 

এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস জানান, প্রধান শিক্ষককে মারধরের বিষয়টি আমি শুনেছি। প্রধান শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন। প্রত্যেকেরই এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ করা উচিত। আইনের উর্দ্ধে কেও হতে পারেননা। যদিও এখন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আমাকে কিছুই জানায়নি। তবে জানানো উচিত ছিল। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

এদিকে প্রধান শিক্ষক রোববার (১৬ অক্টোবর) বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে বিষয়টি নিয়ে সভা করেছেন। শিক্ষকরা মেয়র কর্তৃক শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার প্রত্যাহারের তদবির-তাগিদ এবং প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিচারের দাবিও জানিয়েছেন।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT