গৌরীপুরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতির ঘটনায় নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ শনিবার রাত ১১:৩০, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
ময়মনসিংহের গৌরীপুরের চল্লিশা কড়েহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মঞ্জুরা আক্তারকে জালিয়াতির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ আনোয়ার হোসেন ২০১৩ সালে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এবং ২০২০ সালে ২৫জানুয়ারি দুটি তদন্ত হয়। কিন্তু ৮ বছর পার হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার মাওহা ইউনিয়নে ১৯৭২ সালে চল্লিশা কড়েহা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন আজিম উদ্দিন। ২০১১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে গেলে বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক দীপক কুমার দত্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। ২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি নেন। পরে বিদ্যালয়ের এসএমসি সহকারি শিক্ষক মোঃ আনোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব প্রদান করেন। ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ চাকরিরত অবস্থায় দীপক কুমার দত্ত মারা যান।
২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল মোঃ আনোয়ার হোসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি নেন। পরে এসএমসি সহকারি শিক্ষক মঞ্জুরা আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব দেন। এদিকে অনিয়ম ও জালিয়াতি করে ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মঞ্জুরা আক্তারকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পত্র দিয়ে ২ অক্টোবর যোগদান দেখানো হয়। ২০১২ সালের যে রেজ্যুলেশনে তার নিয়োগ দেখানো হয় সেটি সভার মন্তব্য বহির ৪৪-৪৬ পৃষ্ঠায় করা হয়েছে। যা ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিলের সভার রেজুলেশনের পর। রেজ্যুলেশন বহির পৃষ্ঠা ৪০-৪১।
চল্লিশা কড়েহা নব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শাহগঞ্জ ক্লাস্টারের অধীনে। তৎকালীন সময়ে ওই ক্লাস্টারে দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ সিরাজুল ইসলাম। কিন্তু অনিয়ম করে মঞ্জুরা আক্তারের সকল কাগজপত্রে ডৌহাখলা ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারি শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্বাস আলী স্বাক্ষর করেন।
২০১৩ সালের ১ লা জানুয়ারী নব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণের পর ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসের ৬ তারিখে গেজেট প্রকাশিত হয়। সেই গেজেটে মঞ্জুরা আক্তার সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১২ সালের ২ অক্টোবর মঞ্জুরা আক্তার প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান দেখিয়েছেন। কিন্ত ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলের বিভিন্ন নথি ও হাজিরা খাতা মূলে তিনি সহকারি শিক্ষক ছিলেন। ২০১৪ সালে একদিন হঠাৎ স্কুলে এসে তিনি বলেন যে, আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার অনিয়ম ও জালিয়াতির বিষয়ে আমি অভিযোগ করার পর ২০১৬ সালে বিদ্যালয় থেকে বদলি হয়ে মাওহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে যান।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিকা পারভীন বলেন, এ ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম চলমান, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরা আক্তার বলেন, তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। এরকম কোন জালিয়াতির ঘটনা তিনি জানেন না।