ঢাকা (ভোর ৫:২৩) বুধবার, ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কোরবানির হাটে ব্যাপারীদের চড়া দামের বিপরীতে ক্রেতাদের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি নিজস্ব প্রতিনিধি Clock বৃহস্পতিবার রাত ০২:৪০, ৭ জুলাই, ২০২২

গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা সামিউল ইসলাম। গাবতলী পশুর হাট থেকে এবার ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছেন। তিনি বলছেন, গত বছর এ আকারের গরুর দাম প্রায় লাখ টাকা কম ছিল। এবার দাম অনেক বেশি। এরপরও গরুর ব্যাপারী ও গৃহস্থরা সহজে গরু বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।

সামিউল বলেন, এবার ২ লাখ ৯০ হাজার টাকায় গরু কিনলাম। আগেরবারের থেকে দাম অনেক বেশি। আগেরবার যে গরুর দাম দেড় লাখ টাকা ছিল এবার তা আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা চায়। এবার গরুর দাম অনেক বাড়তি।

তিন মণ মাংস মিলবে এমন একটি গরু নিয়ে গাবতলী হাটের মাঝখানে দাঁড়িয়ে শমসের ব্যাপারী। তিনি গরুটি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে এনেছেন, দাম হাঁকছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। মিরপুর থেকে আসা ক্রেতা সাইদুর রহমান ১ লাখ টাকা দাম বললেও গরুটি বিক্রি করতে রাজি হননি শমসের ব্যাপারী। অথচ মাংসের বাজারদর হিসেবে গরুটির দাম হওয়ার কথা ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা।

এ পরিস্থিতি দেখে শহিদুল নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এবার গরুর দাম বাড়তি। ব্যাপারী ও গৃহস্থরা গরু আঁকড়ে ধরে আছে। আমাদের হিসাব মতে ন্যায্যমূল্য বললেও তারা গরু ছাড়ছেন না।

বাজেট ও পছন্দ অনুযায়ী গরু কেনার জন্য দুদিন ধরে হাটে ঘুরেছেন আব্দুল মান্নান। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী।

আব্দুল মান্নান বলেন, গতবারের থেকে এবার গরুর দাম অনেক বাড়তি। গো-খাদ্যের দাম বাড়ছে, এমন দোহাই দিয়ে বাড়তি দাম হাঁকা হচ্ছে কোরবানির পশুর। আমি একটা গরু কিনেছি। সেটা যদি মাংসের দামে হিসাব করা হয় তাহলে ১২শ থেকে ১৩শ টাকা কেজি পড়বে।

সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম প্রতি মণে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে। দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের ছোট আকারের যে গরু গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকায়, এবার তার দাম চাওয়া হচ্ছে লাখ টাকার বেশি।

দাম বেশি চাওয়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতাদের দাবি, গবাদিপশুর খাবারের দাম বাড়তি। দাম বেশি গরুর মাংসেরও। সংসারে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দামও দফায় দফায় বেড়েছে। সবকিছুর মিলিত প্রভাব পড়েছে কোরবানির বাজারে।

চুয়াডাঙ্গার আনিস ব্যাপারী এবার হাটে ৬৫টি গরু তুলেছেন। চার থেকে ৯ মণ পর্যন্ত মাংস হবে একেকটি গরুর। চার মণ ওজনের একটি গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

আনিস বলেন, এক বছরের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে প্রায় ১৫০ টাকা। শুধু মাংসের হিসাবেই এক মণে (৪০ কেজি) দাম ছয় হাজার টাকার বেশি। এর সঙ্গে গো-খাদ্য ও মানুষের খাবারের দামও বাড়তি। সব মিলিয়ে স্থানীয় হাটবাজারেই এবার গরুর দাম বেশি।

স্থানীয় হাট থেকেই আড়াই থেকে ৩ মণ ওজনের গরু ৭৩ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে। সঙ্গে একেকটি গরুর পেছনে পরিবহন খরচ আরও দুই হাজার টাকা করে। একেকটি গরুতে যদি কিছু টাকা লাভ না করি তবে ঘরে বউ থাকবে না।

ব্যাপারী ও গৃহস্থদের আশা, শুক্রবার ও শনিবার বড় ক্রেতারা আসবেন হাটে। তখন গরুর ভালো দাম মিলবে। এ আশায় তারা গরু আঁকড়ে ধরে আছেন।

কুষ্টিয়া থেকে গাবতলী হাটে ৫০টি গরু এনেছেন আবুল ব্যাপারি। ৫০টির মধ্যে বিক্রি করেছেন মাত্র ৫টি। এখনো ৪৫টি গরু রয়েছে তার। তার আশা, শেষ দিকে গরুর দাম বাড়বে।

আবুল ব্যাপারী বলেন, গরুর ব্যবসা হচ্ছে লটারির মতো। গত কয়েক বছর বড় লস করেছি। দরকার হয় এবারও লস করবো। তারপরও পানির দরে গরু বিক্রি করবো না। আশা করছি শুক্র ও শনিবার হাটের সব গরু বিক্রি হবে।

তবে হাটে ভারতীয় গরু নেই বলা চলে। কিছু ভারতীয় সাদা বলদ গরু দেখা গেছে। এক বছর অথবা ছয় মাস আগে এসব গরু ভারত থেকে এসেছে। এরপর খামারি ও ব্যাপারীরা সেগুলো পেলে এখন হাটে তুলেছেন। ১৫ থেকে ১৬ মণ মাংস পাওয়া যাবে এমন একেকটি সাদা গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।



শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT