কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন
ডেক্স রিপোর্ট শুক্রবার রাত ০১:৫৯, ২ জুলাই, ২০২১
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন শেষ হলো। এই দিনে রাজধানীতে লকডাউন বাস্তবায়নে সড়কের মোড়ে মোড়ে সেনা সদস্য, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা টহল দিয়েছেন।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি টহলের মধ্যেও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিনা প্রয়োজনে মানুষ ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়েছেন। অনেকে লডকাউনে ঢাকার ফাঁকা রাস্তার দৃশ্য দেখতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (০১ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ৭৫৫ জনকে আটক ও গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২১২ জনকে জরিমানা করা হয়। মুচলেকা নিয়ে ৩৯১ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে পুলিশের টহল গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহৃত সীমিত সংখ্যক যানবাহন ছাড়া তেমন যানবাহন চোখে পড়েনি। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বাঁশ দিয়ে অনেক সড়কের প্রবেশ পথ আটকে দিয়েছে পুলিশ। শিল্পকারখানা, ব্যাংক, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা পরিচয়পত্র নিয়ে বের হতে দেখা গেছে। তবে যারা রিকশায় চলাচল করেছেন তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে গার্মেন্টস কারখানা খোলা রাখা এবং গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখায় ভোগান্তিতে পড়েছিলেন শ্রমিকরা। মাইলের পর মাইলে হেঁটে যান শ্রমিকরা।
রাজধানীর মূল সড়কে লোকজনের আনাগোনা কম দেখা গেলেও অলিগলিতে কিছু চায়ের ও মুদি দোকান খোলা থাকায় মানুষ ঘর ছেড়ে বের হয়েছে। কুড়িল বিশ্বরোড, শনিরআখড়া, মাতুয়াইল, পশ্চিম রামপুরা হাজীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকাল অলিগলিতে মুদি দোকানগুলো সার্টার অর্ধেক খোলা রেখে চলতে দেখা গেছে। যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পান সঙ্গে সঙ্গে শাটার নামিয়ে কিছু সময়ের জন্য উধাও হয়ে যান মালিকরা।
জরুরি পরিসেবা খোলা রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় গণপরিবহনের অভাবে বাধ্য হয়েই মানুষকে পায়ে হেঁটে কিংবা রিকশায় কর্মস্থলে যেতে হয়েছে। বিশেষ করে শিল্প-কারখানায় কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের কর্মস্থলে যেতে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
কাঁচাবাজারগুলোতে ক্রেতা খুব একটা দেখা যায়নি। মুখে মাস্ক পড়ে বাজারগুলোতে দোকানদাররা পণ্য বিক্রি করছেন। অনেকে স্যানেটাইজারও ব্যবহার করেছেন। বাজারে ক্রেতাদের চাপ কম থাকায় কাঁচাবাজারের দোকানও কম খোলা ছিল।
চট্টগ্রাম, সিলেটের প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, মাতুয়াইল মেডিক্যাল, সাইনবোর্ড, চিটাগাংরোডে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে সাইবোর্ড চেকপোস্টে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ, র্যাব, বিজিবিকে সমন্বিতভাবে দায়িত্বপালন করতে দেখা গেছে।
হোটেল-রেস্তোরাঁ: পুরান ঢাকার বাবুবাজার, নয়াবাজার, বংশাল, গুলিস্তান, পল্টন, বিজয়নগর, শান্তিনগর, মালিবাগসহ বিভিন্ন এলাকার বেশিরভাগ হোটেল ও রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেসব হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো খোলা ছিল সেগুলোতেও বেচা বিক্রি নেই। কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন,করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের দেওয়া কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে যৌক্তিক কারণ ছাড়া যারা বাইরে বের হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে।
সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউন শুরুর দিনই সারাদেশে গত চব্বিশ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪৩ জন মানুষ মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৪৬ জন। আর এই দিন ৮ হাজার ৩০১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। করোনায় মোট শনাক্তের সংখ্যা ৯ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯ জন হয়েছে।