ঢাকা (সকাল ১১:৫৭) শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Join Bangladesh Navy


ইতিকাফের নিয়ম কানুন ও ফজিলত-আব্দুল্লাহ আল-মামুন

নিজস্ব প্রতিনিধি নিজস্ব প্রতিনিধি Clock বৃহস্পতিবার রাত ১০:৪৮, ২১ এপ্রিল, ২০২২

আরবি ‘ইতিকাফ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আটকে পড়া বা আবদ্ধ হয়ে থাকা। শরিয়তের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষ দশক বা অন্য কোনো দিন জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইবাদতের নিয়তে মসজিদে বা ঘরে নামাজের স্থানে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতিকাফ বলে।

ইতিকাফের উদ্দেশ্য হলো মসজিদে বসে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আনুগত্য করা, তাঁর অনুগ্রহ লাভের আকাঙ্ক্ষা করা, সওয়াব অর্জনের প্রত্যাশা করা এবং লাইলাতুল কদর লাভের আশা করা।

রমজান মাসে এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, বিশেষত রমজানের শেষ দশ দিনের জন্য। রমজান মাসের শেষ ১০ দিন মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার মানসিকতা নিয়ে পুরুষের জন্য মসজিদে এবং নারীর জন্য নিজ নিজ ঘরে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে ইবাদত করাই হলো ইতিকাফ। এই ইবাদত পবিত্র রমজান মাসের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিতে পবিত্র রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ পালন করা সুন্নত। ইতিকাফের উদ্দেশ্য আত্মশুদ্ধির চর্চা ও আত্মার পবিত্রতা অর্জন করাসহ ইতিকাফ পালন করার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এ ছাড়া রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করার আরো বিশেষ একটি উদ্দেশ্য রয়েছে, তা হলো শবে কদরের তালাশ করা। এ সময় ইতিকাফ করার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে মহিমান্বিত এ রাতে আমলের সুযোগ লাভ করা যায়।

একজন মুসলিম ইতিকাফ পালন করে ইসলামের বিধান মান্য করার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে পারেন। তিনি পাশবিক প্রবণতা ও অহেতুক কাজ থেকে দূরে থাকার চর্চা করতে পারেন এবং মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এছাড়া একজন মুসলিম দুনিয়ামুখী মানসিকতা ত্যাগ ও বিলাসিতা থেকে দূরে থাকা জন্যও ইতিকাফ পালন করতে পারেন।

ইতিকাফের গুরুত্ব হলো আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জন এবং আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভ করার উত্তম পন্থা হলো ইতিকাফ। মানবিক সব চিন্তা-ভাবনার ঊর্ধে অবস্থান করে একজন মানুষ ইতিকাফে একান্তে আল্লাহর ধ্যানে বসার সুযোগ লাভ করেন। এই একান্ত যাপন প্রক্রিয়ার প্রভাব সীমাহীন। ইতিকাফ একজন মানুষের ওপর এমনভাবে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক প্রভাব বিস্তার করে, যা তাকে দীর্ঘদিন আল্লাহর পথে পরহেজগারির সঙ্গে পরিচালিত হতে সহযোগিতা করে।

ইতিকাফের প্রকারভেদঃ-

ইতিকাফ তিন প্রকার-

সুন্নত : রমজান মাসের শেষ দশকের ইতিকাফ।

নফল : যেকোনো সময় সেই ইতিকাফ করা যায়। ৩ ওয়াজিব : মানতের ইতিকাফ। (আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৪৯৮, বাহরুর রায়েক ২/৪২১, বাদায়েউস সানায়ে ২/১০৯)।

সুন্নাতে মুআক্কাদা কিফায়া: রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুআক্কাদা কিফায়া। ২০শে রমজান সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বেই ইতিকাফের স্থানে পৌঁছতে হবে। কয়েক মিনিট দেরি হলেও সুন্নাতে মুআক্কাদা আদায় হবে না, বরং ওই ইতিকাফ নফল হয়ে যাবে। রমযানের সর্বশেষ দিনের সূর্যাস্তের পর মসজিদ থেকে বের হতে হয়। অর্থাৎ ইতিকাফের বিধিসম্মত সময় মাহে রমজানের ২০ তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছু আগে থেকে শুরু হয় এবং ঈদের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই তা শেষ হয়ে যায়। এ ইতিকাফ সুন্নাতে মুআক্কাদা কিফায়া।

অর্থাৎ বড় শহরের মহল্লার যেকোনো মসজিদে এবং কোনো গ্রামের যেকোনো একটি মসজিদে এক ব্যক্তি ইতিকাফ করলে সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। আর কোনো ব্যক্তি ইতিকাফ না করলে সকলের গুনাহ হবে। কোনো ব্যক্তিকে পারিশ্রমিক দিয়ে ইতিকাফে বসানো নাজায়েয। মসজিদে একাধিক লোক ইতিকাফে বসলে সকলেই সাওয়াব পাবে।

নফল ইতিকাফ: নফল ইতিকাফের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই এবং এজন্য রোজা রাখাও শর্ত নয়। নফল ইতিকাফ যেকোনো সময় যেকোনো মসজিদে (সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত হোক বা না হোক) করা যায়। ইতিকাফের নিয়ত করে নামাজের জন্য অথবা যেকোনো প্রয়োজনে মসজিদে প্রবেশ করলে ইতিকাফের সাওয়াব পাওয়া যায়। নফল ইতিকাফকারী যতক্ষণ মসজিদে অবস্থান করে ততক্ষণ তার ইতিকাফ থাকে।

ওয়াজিব ইতিকাফ: ইতিকাফ করার মানত করলে ওই ইতিকাফ ওয়াজিব হয়। যেমন-আমার অমুক ইচ্ছা পূরণ হলে কিংবা অমুক কাজ সম্পন্ন হলে আমি ইতিকাফ করব। তদ্রূপ সুন্নাত ইতিকাফ ভঙ্গ করলে তার কাযা ওয়াজিব হয়। ওয়াজিব ইতিকাফের ক্ষেত্রে রোজা রাখা জরুরি।

তাই ইতিকাফ রমজানে করা হোক কিংবা রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে যতদিনের ইতিকাফ করার নিয়ত করা হবে তত দিন ও তত রাত ইতিকাফ করতে হবে। একাধিক দিনের ইতিকাফের মানত করলে ধারাবাহিকভাবে ইতিকাফ করা ওয়াজিব। মাঝখানে কোনো দিন বাদ পড়লে ইতিকাফ শুদ্ধ হবে না। নির্দিষ্ট কোনো সময় বা স্থানের মানত করে থাকলে ওই নির্দিষ্ট সময় ও ওই নির্দিষ্ট স্থানেই ইতিকাফ করতে হবে। ওয়াজিব ইতিকাফের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি।

আল কোরআনের আলোকে ইতিকাফ মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “যখন আমি কাবা গৃহকে মানুষের জন্য সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহিমের দাঁড়ানোর জায়গাকে (মাকামে ইব্রাহিম) নামাজের জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। আর যতক্ষণ তোমরা ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করো, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সঙ্গে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেওয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেয়ো না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন আল্লাহ তাঁর আয়াতগুলো মানুষের জন্য, যাতে তারা তাকওয়া লাভ করতে পারে।” সুরা-২ [৮৭] আল বাকারা )।

হাদিসের আলোকে ইতিকাফ লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান ও এর ফজিলত লাভের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ (সা:) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। জীবনের শেষ রমজান পর্যন্ত তিনি এ সময়কাল ইতিকাফ পালন করেছেন। মাহে রমজানের শেষ দশক এলে তিনি স্ত্রীদের কাছ থেকে দূরে থাকতেন এবং ইবাদতে মশগুল হতেন।

ইতিকাফের সর্বনিম্ন সময়সীমা এক রাত বলে হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে। তবে ইতিকাফ দীর্ঘ সময় ধরে করা উত্তম, বিশেষত মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ অবস্থায় থাকায় ‘লাইলাতুল কদর’ বা হাজার মাসের শ্রেষ্ঠতম ভাগ্যের রজনী লাভের সৌভাগ্য হতে পারে।

নবীজি (সা:) ইতিকাফের এত বেশি গুরুত্ব দিতেন যে, কখনো তা ছুটে গেলে ঈদের মাসে আদায় করতেন। হজরত আয়েশা (রা:) বলেছেন, “রাসুলুল্লাহ (সা:) প্রতি রমজানের শেষ দশক (মসজিদে) ইতিকাফ করতেন। এ আমল তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত কায়েম ছিল। নবী করিম (সা:) এর ওফাতের পর তাঁর বিবিগণও এ নিয়ম পালন করেন।”(বুখারি ও মুসলিম)।

হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা:) এক বছর ইতিকাফ করতে পারেননি, পরবর্তী বছর তিনি ২০ রাত ইতিকাফ করেন।’ (তিরমিজি)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, ‘নবী করিম (সা:) প্রতি রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিফাক করতেন । তারপর যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর ২০ দিন ইতিফাক করেন।’ (বুখারি)।

রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা সুন্নত এবং এর ফজিলত অপরিসীম।

নবী করিম (সা:) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করবে, তার জন্য দুই হজ ও দুই ওমরার সওয়াব রয়েছে।’ (বায়হাকি)। তিনি আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এক দিনের ইতিকাফ করল, তার ও দোজখের মধ্যখানে আল্লাহ এমন তিনটি পরিখা তৈরি করে দেবেন, যার একটি থেকে অপরটির দূরত্ব হবে পূর্ব ও পশ্চিমেরও বেশি।’ (তিরমিজি)। যে ব্যক্তি ইবাদত মনে করে সওয়াবের নিয়তে ইতিকাফ করেন, তাঁর সব সগিরা গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

নবী করিম (সা:) আরো বলেন, ‘ইতিকাফকারী ব্যক্তি যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত থাকে আর ইতিকাফে লিপ্ত থাকার জন্য কোনো ব্যক্তি বাইরের কোনো নেক কাজ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকলেও ওই নেক কাজগুলোর পূর্ণ নেকি সে লাভ করবে।’ (ইবনে মাজা)।

হাদিস শরীফে আরো বর্ণিত আছে, ‘ইতিকাফকারী মূলত গুনাহ থেকে দূরে থাকে এবং তাকে ইতিকাফের বিনিময়ে এত বেশি নেকি দেওয়া হবে, যেন সে সব নেকি অর্জনকারী।’ (ইবনে মাজা)।

পুরুষ ও নারীদের ইতিকাফ পুরুষদের ইতিকাফ ইতিকাফকারী পুরুষ ২০ রমজান আসরের নামাজের পর সূর্যাস্তের আগে মসজিদে পৌঁছাবেন এবং কোণে একটি ঘরের মতো পর্দা দিয়ে ঘেরাও করে অবস্থান নেবেন; এমনভাবে যেন প্রয়োজনে জামাতের সময় পর্দা খুলে মুসল্লিদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা করা যায়। এ স্থানে পানাহার ও শয়ন করবেন এবং বিনা প্রয়োজনে এখান থেকে বের হবেন না। তবে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বা ফরজ গোসল প্রভৃতি কাজে অথবা শরিয়তের প্রয়োজনে যেমন জুমার নামাজ প্রভৃতির জন্য বের হওয়া জায়েজ।

জাগতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগের জন্য পুরুষদের মসজিদে এবং নারীদের জন্য গৃহে অবস্থান করাই ইতিকাফ।

নারীদের ইতিকাফ নারীরা বাড়ির যে অংশে নামাজ আদায় করে থাকেন তারা সেখানে ইতিকাফ করবেন। অতি প্রয়োজন ব্যতীত নামাজের ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে পারবেন না। ঘরে নামাজের জন্য কোনো স্থান নির্দিষ্ট না থাকলে কোনো একটি স্থান নির্দিষ্ট করে সেখানে ইতিকাফ করবেন। মহিলাদের ইতিকাফের ক্ষেত্রে অন্যান্য মাসায়েল পুরুষদের ইতিকাফের মতোই। স্ত্রীলোকের মসজিদে ইতিকাফ করা মাকরুহ। স্বামীর অনুমতি ছাড়া মহিলাদের ইতিকাফ জায়েজ হবে না। মহিলাদের মাসিক শুরু হওয়ার কারণে ইতিকাফ ভেঙ্গে যায়। ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে, যেখানে তিনি নামাজ আদায় করেন, সেখানেই ইতিকাফ করবেন। বাড়িতে নির্দিষ্ট স্থান না থাকলে যেকোনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে ইতিকাফ করবেন এবং ঈদের চাঁদ উদয় না হওয়া পর্যন্ত ইতিকাফের স্থান ত্যাগ করবেন না।

ইতিকাফের জন্য সর্বোত্তম স্থান হলো বাইতুল্লাহ শরিফ। বাইতুল্লাহ শরিফের পর মসজিদে নববি। এরপর বাইতুল মাকদিস বা মুকাদ্দাস। তারপর জুমা আদায় করা হয় এমন মসজিদ। এরপর মহল্লার যে মসজিদে নামাজির সংখ্যা বেশি হয়, সে মসজিদে ইতিকাফে সওয়াব বেশি।

শুদ্ধভাবে ইতিকাফ করার জন্য এর বিধান জানা জরুরি। ইতিকাফের শর্ত, আদব ও ইতিকাফে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না এসব বিষয় না জানা থাকলে সঠিকভাবে ইতিকাফ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। শুদ্ধভাবে ইতিকাফ আদায় হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। অন্যতম শর্ত হলো নিয়ত করা। নিয়ত ছাড়া ইতিকাফ সহিহ হবে না। ইতিকাফ অবস্থায় বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আযকার, দুআ-দরূদ করা এবং ইসলামি বইপুস্তক পড়া উচিত। দশ দিন দশ রাতের ২৪ ঘণ্টা রুটিন করে পুরো সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো উচিত।

ইতিকাফ অবস্থায় এই কাজগুলো করা যেতে পারে – (১) নামাজের মধ্যে বিশেষভাবে তাহিয়্যাতুল অযু, তাহিয়্যাতুল মসজিদ, ইশরাকের নামাজ, চাশতের নামাজ, আউয়াবীন নামাজ এবং তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া উচিত। সম্ভব হলে সলাতুত তাসবীহ নামাজও পড়া যেতে পারে।

(২) বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত। বিশেষভাবে ফযীলতপূর্ণ সূরাসমূহ পড়া যেতে পারে। যেমন-ফজরের নামাজের পর সূরা ইয়াসীন, জোহরের নামাজের পর সূরা ফাতাহ, আসরের নামাজের পর সূরা নাবা, মাগরিবের নামাজের পর সূরা ওয়াকিআ এবং ইশার নামাজের পর সূরা মুলক পড়া যেতে পারে। তাছাড়া সূরা কাহাফ, সূরা আর-রহমান, সূরা কদর, সূরা যিলযাল, সূরা আদিয়াত, সূরা তাকাসুর, সূরা কাফিরূন, সূরা নাসর, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস, আয়াতুল কুরসী ইত্যাদি বেশি বেশি তিলাওয়াত করা যেতে পারে।

(৩) বিভিন্ন ধরণের যিকির এবং বেশি বেশি দরূদ শরীফ পাঠ করা করা যেতে পারে।

(৪) ইসলামি বইপুস্তক পড়া যেতে পারে

ইতিকাফ অবস্থায় জায়েয কাজকর্ম: খাওয়া-দাওয়া (মসজিদ যেন নোংরা না হয়), ঘুমানো, কাপড়-চোপড় বদল করা, আতর মাখা, তেল লাগানো, মাথা আছড়ানো, প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা, রোগী দেখা বা রোগীকে ওষুধ লিখে দেওয়া (টাকার বিনিময়ে হলে মাকরুহ হবে), ইতিকাফকারী আরামের জন্য চাদর ঝুলিয়ে নিতে পারবে, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র-বইপুস্তক ইত্যাদি মসজিদে রাখতে পারবেন। মহিলারা ইতিকাফ অবস্থায় শিশুদেরকে দুধ পান করাতে পারবেন। ইতিকাফরত ব্যক্তি পেশাব-পায়খানার জন্য মসজিদের বাইরে গেলে আসা যাওয়ার সময় সালাম আদান-প্রদান করতে পারবেন। এ সময় কারো সাথে অল্পস্বল্প কথাও বলতে পারবেন। এতে ইতিকাফের ক্ষতি হবে না। কোনো কারণে যদি মসজিদ ভেঙে যায় অথবা জোরপূর্বক মসজিদ থেকে বের করে দেয়া হয় তাহলে ইতিকাফকারী ব্যক্তি মসজিদ থেকে বের হয়ে সঙ্গে সঙ্গে অন্য মসজিদে চলে যাবে, এতে ইতিকাফ নষ্ট হবে না। জান বা মালের ক্ষতির আশঙ্কা হলেও এই হুকুম প্রযোজ্য হবে। ইতিকাফকারী ব্যক্তি মুয়াজ্জিন হোক বা অন্য কেউ হোক, আজানের জন্য মিনারে আরোহণ করলে (মিনার মসজিদের বাইরে হলেও) ইতিকাফ নষ্ট হবে না।

ইতিকাফ অবস্থায় নিষিদ্ধ ও মাকরূহ কাজকর্ম: অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা, অশ্লীল গল্প-নভেল কিংবা পত্র-পত্রিকা পড়া বা শ্রবণ করা, প্রয়োজনাতিরিক্ত জিনিসপত্র মসজিদে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা, মসজিদের বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির অপচয় করা, মসজিদে বিড়ি-সিগারেট পান করা, বিনা প্রয়োজনে মোবাইলে গল্পগুজব করা, বিনা কারণে ইন্টারনেট ব্রাউজ করা-চ্যাটিং করা ইত্যাদি। অসুস্থ ব্যক্তিকে সেবা করার জন্যও মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। কোনো মৃত ব্যক্তিকে দেখার উদ্দেশ্যে বা তার জানাজা আদায়ের উদ্দেশ্যে ইতিকাফ থেকে বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। ইতিকাফের স্থানকে ব্যবসাস্থল বানানো মাকরুহ।

শেষ কথা ইতিকাফ স্বেচ্ছায় পালন করতে হবে। ইসলামী শরিয়তে বিনিময় দিয়ে ভাড়া করে ইবাদত পালন করার সুযোগ নেই। তাই কাউকে দিয়ে টাকার বিনিময়ে ইতিকাফ করানো সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এভাবে ইতিকাফ করানোর দ্বারা মহল্লাবাসী দায়মুক্ত হতে পারবে না। কোনো গ্রামের মসজিদে অন্য গ্রামের লোকের ইতিকাফের দ্বারা ওই গ্রামের সবার পক্ষ থেকে ইতিকাফের সুন্নাতে মুয়াক্বাদায়ে কেফায়া আদায় হয়ে যাবে। তবে গ্রামবাসীর জন্য উচিত, তাদের মধ্য থেকে কেউ ইতিকাফে বসা।

ইতিকাফকালীন সময়ে পরিবারের সকল খরচাদি ও প্রাথমিক সমস্যা সমাধান করে আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে রমজানের শেষ দশ দিন সপে দেয়ার জন্য আমরা এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করি।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে ইতিকাফের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি হাছিলের ও মাগফেরাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।




শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT