অনিয়ম অভিযোগের মধ্য দিয়েই শুরু পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) ফসল রক্ষা বাধের কাজ
মোবারক হোসাইন,ধর্মপাশা(সুনামগঞ্জ) রবিবার দুপুর ০১:৩১, ৩১ জানুয়ারী, ২০২১
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ পুন নির্মাণ ও মেরামত কাজ শুরু করার নির্ধারিত সময়সীমার একমাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় ফসলরক্ষা বাঁধের সবকটি প্রকল্পে এখনো কাজ শুরু করা হয়নি।
এখানকার আটটি হাওরের ১৬৯টি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র কয়েকটি প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) দাবি, হাওর থেকে বিলম্বে পানি নামার কারণে জরিপ,প্রাক্কলন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)গঠন যথা সময়ে করা যায়নি। ফলে কাজ তুলনামূলকভাবে কিছুটা পিছিয়েছে।বিলম্বে বাঁধের কাজ শুরু হওয়ায় এখানকার কৃষকেরা বোরো ফসল রক্ষা নিয়ে আতংকে রয়েছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড,উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল ,ধানকুনিয়া, জয়ধনা, সোনামড়ল, গুরমা, গুরমার বর্ধিতাংশ, ঘোড়াডোবা, কাইলানী এই আটটি হাওর সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে রয়েছে। এই আটটি হাওরে প্রকল্প কাজের সংখ্যা ১৬৯টি। এসব প্রকল্প কাজের বিপরীতে বরাদ্দ রির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩২কোটি টাকা।
নীতিমালা অনুযায়ী, গত বছরের ৩০নভেম্বরের মধ্যে জরিপ,প্রাক্কলন তৈরি ও পিআইসি গঠন শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু পিআইসি কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ১১জানুয়ারি। আর গত বছরের ১৫ডিসেম্বরের মধ্যে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করে তা চলতি বছরের ২৮ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। এ উপজেলার আটটি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ১৬৯টি প্রকল্প কাজের মধ্যে গত ১৬ডিসেম্বর থেকে শুরু করে গত বুধবার পর্যন্ত ৭০টি প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে পাউবোর দাবী। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায় এর অর্ধেক কাজও শুরু হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, কাগজে কলমে পিআইসি গঠন করার কাজ শেষ দেখানো হলেও বাস্তবে পিআইসি গঠনসহ সবকাজ এখনো শেষ হয়নি। প্রতিটি পিআইসির কাজ নিতে গিয়ে এ সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ঠদের ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদেরকে ৫০হাজার থেকে ৭০হাজার করে উৎকোচ দিতে হয়েছে। আর এ জন্য আজকাল করতে করতে বাঁধের কাজ পিছিয়েছে। ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেলে মাশুল গুনতে হবে কৃষকদের। তাই আর দেরি না করে অবিলম্বে সবকটি প্রকল্পে কাজ শুরু করা উচিত,এছাড়াও কয়েকজন বঞ্চিত কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা কর্মচারীর মাধ্যমে যারা আর্থিক লেনদেন করেছে তারাই পিআইসি কমিটি পেয়েছেন,আমরা যারা টাকা দিতে পারিনি আমাদের কেউ পিআইসি কমিটি নিতে পারেনি।এমন কি প্রয়োজনের বেশি বাজেটের বেশ কয়েকটি পিআইসি কমিটি রয়েছে মন্তব্য করেন তাঁরা।বঞ্চিত আরও কয়েকজন কৃষক জানান পকৃত কৃষক এবং পুর্বে কাজের অভিজ্ঞতাও রয়েছে এমন বেশ কয়েকটি পিআইসি কমিটি ওয়ার্ক অর্ডার পাওয়ার পরেও পিআইসি কমিটি থেকে বাদ পরেছে কারন তাঁরা কোন আর্থিক লেনদেন ও মাধ্যম ব্যবহার করেনি ।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের ধর্মপাশা উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলা উদ্দিন বলেন, হাওরে একবার ফসলডুবি হলে এই বিপর্যয় পাঁচবছরেও কাটিয়ে ওঠা যায় না। তাই কোন অবস্থাতেই আর দেরি না করে দ্রুত সময়ে সবকটি প্রকল্পের কাজ শুরু করে তা যথাসময়ে শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।
হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ পুন নির্মাণ ও মেরামত কাজের তদারকির জন্য গঠিত উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব ও সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইমরান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, হাওর থেকে দেরিতে পানি নামার কারণে বাঁধের যাবতীয় কাজ কিছুটা পিছিয়েছে। ১৬৯টি প্রকল্প কাজের মধ্যে ৭০টি প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ৩-৪দিনের মধ্যে এখানকার সবকটি প্রকল্পে পুরোদমে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। সব কাজ নীতিমালা অনুযায়ী করা হচ্ছে। কোথাও কোনো অনিয়ম করা হচ্ছে না।
ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক গোলাম আজহারুল ইসলাম পিকে সাংবাদিকদের বলেন,আমার জানামতে,প্রকৃত কৃষকদের নিয়েই পিআইসি কমিটি গঠন করা হয়েছে।আমার দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আনা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগটি বিত্তহীন যদি এমন অভিযোগ কেউ প্রমাণ করতে পারেন আমরা দলীয় ভাবে সভাপতি ও সম্পাদক মহোদয়দের নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।তিনি আরও জানান এ উপজেলায় ১৬৯ টি পিআইসি কমিটি গঠনকরা হয়েছে এর বিপরীতে ২৫০ জনেরও অধিক আবেদন করেন এবং আমার জানামতে আজ ৩০-০১-২০২১ শনিবার পর্যন্ত কোন পিআইসি প্রথম কিস্তির পাননি, তন্মধ্যে পঞ্চাশের অধিক পিআইসির কাজ চলমান কাজের কার্যাদেশ পাওয়ার সাপেক্ষে ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.মুনতাসির হাসান বলেন,প্রকৃত কৃষকদের নিয়ে পিআইসি গঠনসহ সবকাজ নীতিমালা অনুযায়ী করা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম করা হয়নি।এমন অনেকেই রয়েছেন, যারা আমার কাছ থেকে বিভিন্নভাবে বাঁধের প্রকল্প কাজ নেওয়ার চেষ্ঠা করেও বেআইনিভাবে তা নিতে পারেননি। নিজেদের সুবিধা হাসিল হয়নি এমন সব ব্যক্তিরা বাঁধের কাজ নিয়ে যে কোন ধরনের গুজব রটাতে পারেন। হাওরের কৃষকদের ফসলরক্ষায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করার জন্য আমাদের সর্বরকম প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে।