ঢাকা (সকাল ১০:১০) শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News গৌরীপুরে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের বর্ণিল বিদায় সংবর্ধনা Meghna News স্বামীর মধুময় স্মৃতি রোমন্থনে দিন কাটছে স্ত্রী মারজিনার Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান সানাউল্লাহ হলেন নির্বাচন কমিশনার Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার মাদক উদ্ধার, আটক-১ Meghna News নাগরপুরে যদুনাথ স. প্রা. বিদ্যালয়ে মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত Meghna News দ্রুত সুমনের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানাল পরিবার Meghna News সাপ্তাহিক বৈচিত্র্যময় সিলেটের সম্পাদক গরম পানিতে ঝলসে গুরুতর আহত Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে খাস জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষে নিহত একজন Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিখোঁজের ৪ দিন পর আদিবাসী শিশুর মরদেহ উদ্ধার Meghna News মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় যুবক নিহত

স্বামীর মধুময় স্মৃতি রোমন্থনে দিন কাটছে স্ত্রী মারজিনার

ওবায়দুর রহমান ওবায়দুর রহমান Clock শুক্রবার বিকেল ০৪:৪০, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

স্বামী শহীদ হওয়ার চার মাস পেরিয়ে গেলেও তাঁর পাঞ্জাবি, টি-শার্ট আর টাওয়ালে জড়িয়ে থাকা মধুময় স্মৃতি রোমন্থনে খুঁজে ফিরছেন স্ত্রী মোছাঃ মারজিনা আক্তার। স্বামীকে ভুলতে পারছেন না এক মুহুর্তের জন্য। প্রতি রাতেই চোখের পানিতে স্বামীকে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন।

এভাবেই দিন কাটাচ্ছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ জোবায়ের আহম্মেদের স্ত্রী মোছাঃ মারজিনা আক্তার। তিনি ঈশ^রগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের বৃ-পাঁচাশি গ্রামের মোঃ শহীদুল্লাহর মেয়ে।

 

বুধবার তার বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মারজিনা আক্তারের বিছানার এপাশ-ওপাশে স্বামীর পাঞ্জাবি-টিশার্ট আর টাওয়েল ছড়িয়ে আছে। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যূত্থানে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে উপজেলার কলতাপাড়ায় ২০ জুলাই পুলিশের গুলিতে শহীদ হন জোবায়ের আহম্মেদ। ২০২৩ সালের জুন মাসে জোবায়ের-মারজিনার বিয়ে হয়।

কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে একই স্থানে আরও ২ জন শহীদ হয়েছেন। তারা হলেন ডৌহাখলা ইউনিয়নের চ‚ড়ালী গ্রামের বাবুল মিয়ার পুত্র বিপ্লব হাসান (১৯) ও রামগোপালপুর ইউনিয়নের দামগাঁও গ্রামের মধ্যপাড়ার আব্দুল হালিম শেখের পুত্র নুরে আলম সিদ্দিকী রাকিব (২২)।

 

কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিয়মিত মুখ ছিলো জোবায়ের আহম্মেদ।

এই আন্দোলনে শরিক হতে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ছুটে গেছেন ময়মনসিংহে। স্ত্রীকে বলতেন তার প্রিয় খেলা ক্রিকেট খেলতে যাচ্ছেন তিনি।

এ দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোছা. মারজিনা আক্তার বলেন, ২০ জুলাই কলতাপাড়ার আন্দোলনে যেতে সকালেই খাওয়া-দাওয়া সেরে জোবায়ের আহম্মেদ বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। এ সময় তার মুঠোফোনে একটি কল আসলে ওই প্রান্তে যারা ছিলো তাদের বলতে শুনেছি একটু দাঁড়া এখনই বের হচ্ছি। যাওয়ার আগে জোবায়ের বলেছে দোকানে পরে যাবে, এখন খেলতে যাবে বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে। চিন্তা করো না, চলে আসব। এ সময় সে ১০০ টাকা চায়, ওরই দেয়া ছিলো। বললাম ৫০ টাকা খরচ হয়ে গেছে, আর ৫০ টাকা নিয়েই সে বেড়িয়ে পড়ে আন্দোলনে।

কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে হাউমাউ করে তিনি বলেন, ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার দেড়-দুই ঘন্টার মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্স আসে। দেখি এ আমার জোবায়ের। ওর নিথর দেহ দেখে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি, হাত-পা অবশ হয়ে যায়। ৮ দিন পর আমার জ্ঞান ফিরে। জোবায়ের, জোবায়ের বলে ডাকি, ও তো সাড়া দেয় না, কথা বলে না, এরপর মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি।

তিনি আরও বলেন, বাবা বাসায় নিয়ে আসেন। তখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলাম না। হাতেও কোনো শক্তি ছিল না। অন্যের সহযোগিতায় কাপড়-চোপড় বদলাতে হতো। আমিও জোবায়েরের সঙ্গে যেতে চাই, সে তো আমাকে নিল না। একাই চলে গেল।

মারজিনার বাবা মো. শহীদুল্লাহ জানান, মেয়ের জামাই নেই; মেয়ে অসুস্থ। মেয়েকে সুস্থ করার জন্য একেকবার একেক ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছি। সে তো মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। আমার ২ ছেলে আর ৩ মেয়ের মধ্যে সে চতুর্থ। তাকে ভালো করার জন্য পরিবারের সবাই অস্থির হয়ে পড়ে। প্রায় ৪০ হাজার টাকা তখন ব্যয় হয়।

 

মারজিনার মা মোছা. মনোয়ারা খাতুন বলেন, টেলিভিশনে বা পত্রিকায় গণঅভ‚্যত্থানের ছবি বা খবর দেখলেই সে হাউমাউ করে কান্না করে। জোবায়েরকে খোঁজে, তখন সে বিয়ের পাঞ্জাবি, টি-শার্ট আর টাওয়ালের গন্ধ শুঁকে। এমন দৃশ্য দেখলে পৃথিবীর কোনো মা স্থির থাকতে পারে না, আমিও মেয়ের জন্য অস্থির হয়ে পড়েছি। ওকে স্বান্তনা দেবার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। ছেলে-মেয়ের বয়স সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় ধর্মীয়-সামাজিকভাবে ২০২৩ সালের জুনে বিয়ে হলেও বিয়ের রেজিস্ট্রি হয় চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল।

শহীদ জোবায়ের আহম্মেদের লাশ আন্দোলনকারীরা বাড়িতে ঘটনার দিনই পৌঁছে দেয়। ছেলের জানাজায় ইমামতি করেন তার বাবা মো. আনোয়ার উদ্দিন।

জোবায়ের ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের পূর্বকাউরাট গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহাম্মদ আনোয়ার উদ্দিনের পুত্র। ৬ কন্যা আর ৩ পুত্র সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন ৮ম।

 

জোবায়ের কাউরাট আকবর আলী দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৮ম শ্রেণি পাশ করেন। এরপর গৌরীপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হন। দিয়েছিলেন এসএসসি পরীক্ষা। এক বিষয়ে ফেল করায় আবারও পরীক্ষা দেন। এই কারিগরি কলেজে পড়া অবস্থাতেই শম্ভূগঞ্জ দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে শুরু করেন পুরাতন মোবাইল ক্রয় যন্ত্রাংশ বিক্রির ব্যবসা। পরে তিনি নিজে ভারত, চীন থেকে মোবাইলের যন্ত্রাংশ এবং নতুন মোবাইল ফোন আমদানী করতেন এবং পুরাতন মোবাইলের যন্ত্রাংশও রপ্তানি করতেন তিনি। তার আয়েই চলতো পুরো সংসার।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT