ঢাকা (রাত ১:৫৫) শনিবার, ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Join Bangladesh Navy


সিলেটের ফুটপাতে নিম্নবিত্তদের সাথে ঈদের কেনাকাটা করছেন মধ্যবিত্তরাও

মোঃইবাদুর রহমান জাকির মোঃইবাদুর রহমান জাকির Clock শুক্রবার রাত ০২:২২, ২৯ এপ্রিল, ২০২২

করোনার মহামারির দুই বছর কাটিয়ে এবার জমে উঠেছে সিলেটে ঈদবাজার। রমজানের শুরু থেকেই অনেকে কেনাকাটা শুরু করেছেন। ঈদের আর মাত্র ৪-৫ বাকি। নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, আম্বরখানা, লামাবাজারসহ নগরীর অভিজাত শোরুমে কেনাকাটায় ব্যস্ত সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষ। তাদের অনেকে শপিং করতে বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছেন।

কিন্তু ঈদ কেনাকাটায় খেই হারিয়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা। করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরা তাদের কেনাকাটার রুচি পরিবর্তন করেছেন। শোরুম থেকে শপিংমল, শপিংমল থেকে সুপার মার্কেট, সুপার মার্কেট থেকে এখন ফুটপাতে চলছে তাদের কেনাকাটা।

বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন আজিজুল ইসলাম। তিনি দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতেন শহরে। গ্রামে থাকেন বাবা-মা। বেতনের টাকা দিয়ে সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু করোনা তাদের জীবনে নিয়ে আসে দুঃখ। করোনার শুরুর এক বছরের মাথায় তার চাকরিটা চলে যায়। পরবর্তী সময়ে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেলেও আগের প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেতন অনেক কম।

তিনি বলেন, ঈদে পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটার পর গ্রামের অনেকের জন্যও ঈদবাজার করতেন। কিন্তু এখন নিজের চলাই দায়। তারপরও ঈদে কেনাকাটা করতে হয়। আগের মতো না হলেও সামঞ্জস্য রেখে কেনাকাটা করছি। নগরীর বন্দরবাজারে পাইকারি ফুটপাতের দোকান থেকে পরিবারের সবার জন্য পাঞ্জাবি কিনেছি। পাশে জিন্দাবাজার থেকে স্ত্রীর জন্য থ্রি-পিস আর বোরকা নিয়েছি। আল হামরার সামন থেকে বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা করব।

লকডাউনে দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ থাকায় পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা ছেড়েছেন আব্দুল আজিজ বাবুল। স্ত্রী একটি কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেন। আগেই ভালোই চলছিল তার। শবেবরাতের পর থেকেই নিজের দোকানে ব্যস্ত সময় পার করতেন তিনি।

তিনি বলেন, মানুষের দোকানে কাজ করতাম আগে। পরে ঋণ নিয়ে নিজেই দোকান করি। বাড়তি ভাড়ার কারণে দোকানটা ছেড়ে দিয়েছি। সংসার চালাতে এখন নিজের এলাকা থেকে দূরে গিয়ে রিকশা চালাই। ঈদের মধ্যে ছোট বাচ্চা, স্ত্রী আর পরিবারের অন্যদের জন্য চলতি পথে ফুটপাত থেকেই কেনাকাটা করছি। ফুটপাতে অনেক ভালো জিনিস পাওয়া যায়। আমাদের মতো অনেকেই ফুটপাত থেকেই কেনাকাটা করছেন।

সিলেট নগরীর প্রায় প্রতিটি রাস্তা সংলগ্ন ফুটপাতে চলছে ঈদের জমজমাট কেনাবেচা। এর মধ্যে জমে উঠেছে বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, লামাবাজার, জেলরোড ও মদিনা মার্কেট ফুটপাত। সকাল থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাত সেহেরী পর্যন্ত চলে জমজমাট বেচাকেনা।

ফুটপাতে কাপড় বিক্রেতা সেলিম হোসেন বলেন, ২০ রমজানের পর থেকে আমাদের বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। আশাকরি সামনে আরও বাড়বে। কাস্টমারও দিন দিন বাড়ছে। মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে গ্রামের লোকজনও আসে।

আবুল হাসনাত শহরে ইলেকট্রনিক্স এর ব্যবসা করেন। খুব বেশি দামি না হলেও ঈদে বাড়ি যাওয়ার আগে সবার জন্য কাপড় নিয়ে যান তিনি। এবার তার বাজেট কম। এর আগে জিন্দাবাজার থেকে কেনাকাটা করতেন। এবারও জিন্দাবাজার এসেছেন তবে পাশের ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করছেন। তিনি বলেন, চাল-ডালসহ সব দ্রব্যের দাম বাড়ায় এখন লাভ কম। রোজার মধ্যে ব্যবসা হয়নি। বাড়িতে খালি হাতে যেতে পারব না, তাই ফুটপাত থেকে কিছু কেনাকাটা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তানভীর হাসান বলেন, ঈদে বাড়ি যাবেন আগামীকাল। কম দামে ছোট ভাইয়ের জন্য শার্ট ও প্যান্ট কিনেছেন তিনি। ছোট ভাইকে ভালো কাপড় দিতে না পারায় আফসোস তার। একসময় তিন-চারটা টিউশনি ছিল। এখন আছে মাত্র একটা। বোনাসও দিয়েছে সীমিত। তিনি বলেন, নিজের ও ছোট ভাইয়ের জন্য আগে ঈদে মার্কেট করতাম বড় দোকান থেকে। এবার টাকা কম থাকায় ফুটপাত থেকে কিনেছি।

ব্যবসায়ী আবুল মালেক বলেন, করোনার ২ বছরের ধাক্কা কাটিয়ে এবার জমজমাট ঈদবাজার, ক্রেতাদের রয়েছে উপচেপড়া ভিড়। তবে আমাদের ভালো কেনাবেচা হয়েছে। ২০ রমজানের পর থেকে বেড়েছে খুব ব্যস্থতা। কর্মচারীদেরও রয়েছে অনেক ব্যস্থতা। সকাল ১০টা থেকে মধ্যরাত এমনকি সেহেরী পর্যন্ত কাষ্টমারদের ভিড়। তাই আমাদের মনে অনেক আনন্দ ব্যবসায় ভালো বেচাকেনার জন্য। বাজারে রয়েছে ভারতীয় অনেক ধরনের ড্রেস। তবে অন্য বছরের চাহিদায় এবার কাস্টমারদের চাহিদাও বেশি। এবং অন্য বছরের চাইতে দামও একটু বেশি রয়েছে।




শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT