সান্তাহারে করোনাকালেও খুলে দেওয়া হলো শখের পল্লী
নিজস্ব প্রতিনিধি সোমবার রাত ০৮:৩৯, ৮ জুন, ২০২০
আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি: সরকার যেখানে করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বন্ধ করেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল প্রকার বিনোদন পার্ক। সেখানে বগুড়ার আদমদীঘিতে মহামারী করোনাভাইরাসের মধ্যেও খুলে দেওয়া হয়েছে ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত বিনোদন পার্ক শখের পল্লী।
উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের বশিপুর এলাকায় অবস্থিত এই বিনোদন পার্কটি। এই পার্কের স্বত্বাধিকারী ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে এই বিনোদন পার্কটি পরিচালনা করেন। জেলার কোথাও কোনো বিনোদন পার্ক খোলার কোন অনুমতি না থাকলেও সান্তাহারের পার্কটি খুলে দেওয়ায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পার্কটি খুলে দেওয়ার কারণে শত শত লোক বিভিন্ন এলাকা থেকে সেখানে আসা যাওয়া করবে। এর ফলে সেখানে কতটুকু স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে, কতটুকুই বা মানা হবে সামাজিক দূরত্ব।
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে দেশে করোনাভাইরাস সমগ্র এলাকাজুড়েই বিস্তার করে রয়েছে। দিনের পর দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যু হারের সংখ্যাও। যার কারণে আতংকের মধ্যে রয়েছে সকলেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিনোদন পার্ক শখের পল্লীর সদর গেটে স্বাস্থ্য বিধি অনুসারে সামাজিক দূরত্ব মেনে শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় ও হাত ধোয়ার পরে ভিতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। তবে ভিতরে প্রবেশ করে দেখা গেলো অন্যকিছু। ছেলেমেয়ে একত্রে বসে সময় কাটাচ্ছে। যতোগুলো ছেলেমেয়েদের দেখা গিয়েছে তাদের একজনের মধ্যেও কোনো সামাজিক দূরত্ব নেই। গেটের বাহিরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেও ভিতরে কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বিনোদন পার্ক শখের পল্লীর স্বত্বাধিকারী ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম বলেন, কারিগরি স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিপত্র অনুযায়ী পার্কটি খোলা হয়েছে। এবিষয়ে নেটে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে কোন অনুমতি নেওয়া আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাদের নিকট থেকে অনুমতি নেওয়ার কোন দরকার নেই। তাছাড়া এই পরিপত্র বিষয়ে উনারা হয়তো খেয়াল করেননি। আমি সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিধি মেনেই পরিচালনা করছি বলে তিনি জানান। সান্তাহার পৌর মেয়র তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু বলেন, সরকার স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে বললেও বিনোদন পার্ক খুলতে বলেছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে তিনি বলেন এই সময়ে পার্কটি খোলা যুক্তিসঙ্গত হয় নি।
তাছাড়া পৌর এলাকার মধ্যে হলেও আমাদের কাছ থেকে কোন অনুমতি নেয়নি। মেয়রের কথায় সম্মতি দিয়ে একই মন্তব্য করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর প্যানেল মেয়র জার্জিস আলম রতন। তিনি আরও বলেন, সরকারিভাব অনুমতি নিয়ে থাকলেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। তিনিও পার্ক খোলার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে কোন অনুমতি নিয়েছেন কিনা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। সান্তাহার নাগরিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবিন বলেন, এই করোনা ভাইরাসের মধ্যে পার্ক খোলা ঠিক হয়নি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে পারবেনা। বাচ্চারা পার্কে গিয়ে যে বিনোদন উপভোগ করবে সরকারি স্বাস্থ্য বিধি তা কখনো নিয়ন্ত্রণ হবেনা। ফলে আক্রান্ত সংখ্যা বেড়ে যাবে।
আরেক সচেতন নাগরিক দাউদুল হক বলেন, পার্কতো বিনোদনের জন্য হলেও মহামারীতে জীবনের থেকে বিনোদন বড় কিছু নয়। এসময়ে পার্ক খুলে দেয়া ঠিক হয়নি। পার্কে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদের সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি। বিনোদন পার্ক খোলা বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ বলেন, এসময়ে পার্ক খোলার কোন অনুমতি নাই। সান্তাহারে বিনোদন পার্ক শখের পল্লী খোলা হয়েছে জানালে তিনিও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।