ঢাকা (সন্ধ্যা ৬:১৯) সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম

Join Bangladesh Navy


শবে বরাতের তাৎপর্য : আল্লামা মুফতী মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.)

ইসলাম ধর্ম ২২১৪ বার পঠিত
হযরত আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.) হুজুর
হযরত আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.) হুজুর

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী Clock মঙ্গলবার সকাল ১০:৫৯, ৭ মার্চ, ২০২৩

যাদের ধারণা রয়েছে যে, শবে বরাত এবং পনেরই শা’বান রাতের কোন অস্তিত্ব, কোন হাকিকত, ফযিলত এবং কোনরূপ বিশেষত্ব নেই, তারা যেন শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে সিহাসিত্তার বিশ্বস্ত কিতাব জামে তিরমিযির ২য় খণ্ড ৭৩৯নং হাদিস খুলে দেখেন। তাদের জন্য উচিৎ হল এ সম্পর্কে জানা, হাদিসের কিতাবসমূহ খুলে দেখা এবং অজ্ঞতা বশতঃ মিথ্যা ফতওয়াবাজী করার পূর্বে এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান লাভ করার জন্য উস্তাদদের শরণাপন্ন হওয়া।
ইমাম তিরমিযি (র.) পনেরই শা’বান রাতের ফযিলত সম্পর্কে পরিচ্ছদ ঠিক করেছেন এবং শিরোনামও ঠিক করেছেন পনেরই শা’বান রাত। এই শিরোনামের সাথে এ সম্পর্কে হাদিস বর্ণনা করেছেন যার বর্ণনাকারণী হলেন উম্মুল মু’মিনিন হযরত আয়েশা (রা.) এবং তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন হযরত উরওয়াহ (রা.)। হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন যে, আমি একদা রাত্রিবেলায় রাসূলে মকবুল (সা.) কে হারিয়ে ফেলি, তখন আমি হুজুর (সা.) এর তালাশে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বের হয়ে পড়ি, যখন আমি বের হলাম তখন নবীজী (সা.)কে জান্নাতুল বাকীতে আকাশের দিকে মাথা মোবারক উত্তোলন অবস্থায় পাই। হুজুর (সা.) আমাকে দেখে ইরশাদ করতে লাগলেন, হে আয়েশা! তুমি কি এই বিষয়ে ভয় করছ যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর জুলুম করবেন? হযরত আয়েশা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি ধারণা করছিলাম যে সম্ভবতঃ আপনি আপনার  অপর কোন বিবি মুহতারামার ঘরে তাশরিফ নিয়ে গেছেন। তখন আল্লাহর রাসূল ইরশাদ করলেন, হে আয়েশা! নিশ্চিয়ই এটি শা’বান মাসের পনেরই রাত। এই রাতে আল্লাহতায়ালা এক বিশেষ শানের সাথে দুনিয়ার আকাশের দিকে অবতরণ করেন এবং বনী কলব গোত্রের ছাগল গুলোর গায়ে যত সংখ্যক লোম আছে এর থেকে বেশি সংখ্যক গুনাহগার বান্দাহগণকে ক্ষমা করে দেন। (মুসনাদে আহমদ) এই হাদিস শরীফ থেকে দু’টি বিষয় প্রমাণিত হলো, একটি হল, ইমাম তিরমিযি (র.) পনেরই শা’বান রাতের শিরোনামে পূর্ণ অধ্যায় ঠিক করা, অন্যটি হল আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) হতে হুজুর (সা.) এর সুন্নাত এর বর্ণনা করা যে, পনেরই শা’বানের রাতে উঠে ইবাদত করা হুজুর (সা.) এর বিশেষ অভ্যাস ছিল এবং শুধু ইবাদত নয়, এই রাতে হুজুর (সা.) জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে তাশরীফ নিয়েছেন। কোন কোন লোক এমন ভুল পথে আছে যে, তারা একথা বলে বেড়ায় যে কবরস্থানে যাওয়া এবং ফাতেহা পড়া কোথাও প্রমাণিত নেই। তবে ওদের জবাবে বলা যায় যে, তিরমিযি শরীফের অধ্যায় দ্বারা এটি প্রমাণিত এবং নবী করীম (সা.) এর সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত। এছাড়া সায়্যিদুনা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এবং উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) উভয়ের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত।
এবার সুনানে ইবনে মাজা দ্বিতীয় খণ্ড পৃষ্ঠা ১০৮ হাদিস নম্বর ১২৩৩। এটিও সিহাসিত্তার অন্যতম কিতাব। এর অধ্যায় হল, শা’বান মাসের পনেরই রাত সম্পর্কে বর্ণনা। সায়্যিদুনা হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) থেকে হাদিস বর্ণিত যে, যখন পনেরই শা’বানের রাত আসে (যাকে শবে বরাত বলা হয়) হে লোকেরা এই রাতে তোমরা দাঁড়িয়ে নফল নামায পড়তে থাক ইবাদত বন্দেগী কর এবং দিনে রোযা রাখ। কারণ আল্লাহতা’য়ালা এই রাতের শুরু থেকে দুনিয়ার আকাশে এক বিশেষ শানের সাথে অবতরণ করেন এবং ফজর পর্যন্ত বান্দাদের বখশীশ এবং মাগফিরাতের ঘোষণা দিতে থাকেন। এমনভাবে বলেন, আছো কোন ক্ষমা তলবকারী তাহলে আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। আছো কোন রোজি তলবকারী আমি তাকে রোজি দান করব। আছো কোন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি আমি তাকে আরোগ্য করে দিব। এমনিভাবে বিভিন্ন প্রকারের প্রার্থীদের প্রয়োজনের কথা স্মরণ করিয়ে  দিয়ে  ফজর পর্যন্ত আপন দান দক্ষিণার হাত বিস্তার করে থাকেন (ইবনে মাজা, হাদিস নং ১৩৮৮)।
অন্যান্য রাত এবং পনেরই শা’বানের রাতের মধ্যে পার্থক্য হল এই যে, প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তা’য়ালা রহমত নাযিল করেন এবং সে সময় দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে বান্দাদের বখশিশের জন্য আহব্বান করতে থাকেন। আর পনেরই শা’বানের   রাত অর্থাৎ শবে বরাতের বৈশিষ্ট্য হল এই যে, আল্লাহতা’য়ালা সূর্য ডুবার সাথে সাথেই দুনিয়ার আকাশে এক খাছ শানের সাথে তজলি ফরমান এবং ফজর পর্যন্ত বান্দাদের বখশিশ ও মাগফিরাত করতে থাকেন। যখন হাদিসের কোন ইমাম শুধু একটি হাদিসই বর্ণনা করেননি বরং এর উপর অধ্যায় ঠিক করেন এবং এর অধীনে একাধিক হাদিস উল্লেখ করেন, এতে সন্দেহ নেই যে, এর দ্বারা তিনি কেবলমাত্র তাঁর কিতাবের মধ্যে শুধু একটি অধ্যায়ই ঠিক করেননি বরং এটি ছিল ইমাম ইবনে মাজার আক্বিদা ও বিশ্বাস। অনুরূপভাবে ইমাম নাসায়ী ও ইমাম তিরমিযি (র.) এর আক্বিদাহ বিশ্বাসও তদ্রুপ ছিল। তারা স্বয়ং রাতের বেলায় ইবাদত করতেন এবং তা উৎযাপিতও করতেন এবং গুরুত্ব সহকারে ইবাদত বন্দেগি আন্জাম দিতেন।গতানুগতিক ভাবে তারা কোন হাদিসকে অধ্যায়ে স্থান দেননি বরং নিয়মিত ভাবে অধ্যায় ঠিক করেছেন। মুহাদ্দিসীনে ক্বেরামের অভ্যাস হল যখন কোন অধ্যায়ের উপর শিরোনাম ঠিক করেন তখন সেটি নিজ নিজ আক্বিদা বিশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতেই হয়ে থাকে। শিরোনাম যে বিষয়ের উপর ঠিক করা হয় সে শিরোনামের অধীনে ঐ সব হাদিস গুলো সংগ্রহ করা হয়, যে গুলো প্রকৃত পক্ষে শিরোনামকেই সমর্থন করে এবং উক্ত আক্বিদাকে প্রমাণিত করে।
এরই প্রেক্ষিতে ইমাম ইবনে মাজা, ইমাম তিরমিযি, ইমাম নাসায়ী এবং মুহাদ্দিসিনে ক্বেরাম নিজ নিজ হাদিসের কিতাবাদীতে:- এর উপর শিরোনাম ঠিক করেছেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত মুহাদ্দিসিনে কেরামের আক্বিদাহ বিশ্বাস যে, উহা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফদ্বীলত বিশিষ্ট রাত যা সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত। তারা এই রাত গুরুত্ব সহকারে পালন করতেন এবং ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকতেন ও অন্যদেরকে এর প্রতি উৎসাহিত করতেন।
অনুরূপ অধ্যায়ের উপর ইমাম ইবনে মাজা (র.) হযরত আবু মুসা আশআরী (রা.) এর সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেন, আল্লাহপাক পনেরই শা’বান রাতে দুনিয়ার আকাশে তশরীফ এনে মুশরিক এবং যাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ ও উম্মতের প্রতি শত্রুতা রাখে এরূপ ব্যক্তি ব্যতীত সমস্ত মাখলুককে ক্ষমা করে দেন। উল্লেখিত এবারত সহ হযরত মাআয ইবনে জাবাল (রা.) এর সূত্রে ইমাম তাবারানী (র.) ও ইমাম ইবনে হিব্বান (র.) বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র.) আপন সনদে বর্ণনা করেছেন। এবং তিনি হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে হযরত আলী মর্তোজা (রা.) থেকেও বর্ণিত আছে। এছাড়া ইমাম বায়হাকী (র.) আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এবং এতে রয়েছে, জিবরিল এসে এরশাদ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটি পনেরই শা’বানের রাত এটি আপনার জন্য উপঢৌকন স্বরূপ, এই রাত আল্লাহ তাআলা দোযখের আগুন হতে লোকদিগকে মুক্তি দান করেন।
ফারসি-উর্দূ ভাষায় উক্ত রাতকে, শবে বরাতের নামে উল্লেখ করা হয়। এটি হল হাদিসে বর্ণিত ‘উতাক্বাউ মিনান্নার’। এর অনুবাদ, এটি প্রিয় নবীজী (সা.) কর্তৃক প্রদানকৃত উপাধী। উক্ত পনেরই শা’বান রাতের হাদিস আট জন সাহাবি থেকে বর্ণিত। এ হাদিস বর্ণনা করার পর এর উপর হাদিস সংক্রান্ত গবেষণামূলক আলোচনা হয়েছে। উক্ত হাদিস সঠিক বলে তার অনেক স্বাক্ষী আছে। উল্লেখিত হাদিস ইবনে আবি শায়বা শুআবুল ঈমান কিতাবে বর্ণনা করেছেন। যাকে ইমাম বাযযার (র.) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর হযরত আউফ ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেছেন। যাকে ইমাম বাযযার (র.) আট জন সাহাবী থেকেও বিভিন্ন সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন। প্রায় পঞ্চাশটি পৃথক পৃথক হাদিসের কিতাবে নিসফে শা’বান তথা শবে বরাতের ফযিলত সম্পর্কে হাদিস বর্ণিত আছে। মুহাদ্দিসগণ বলেন, এমন কথা বলা যে অমুক হাদিস  যয়ীফ, তমুক হাদিসে দুউফ আছে এগুলি ঠিক নয়। যদি একটি মাত্র সনদের সাথে হাদিস বর্ণিত হয় তবে এক্ষেত্রে কিছু কথা বার্তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তবে উক্ত হাদিস তো আট জন সাহাবী হতে বর্ণিত। প্রত্যেক সাহাবী এবং হাদিসের ইমামগণ পৃথক পৃথক সনদে হাদিস বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া তাবেয়ী ও পৃথক, তবে-তাবেয়ী ও পৃথক, সম্পূর্ণ  সনদ এত বেশি। একটি কারণে যদি কোন সনদে দুর্বলতা আসে তবে অপর শক্তিশালী সনদের কারণে এর দুর্বলতা দূর হয়ে যায়। ২য় টি দূর্বল হলে ৩য় টি দ্বারা এর শক্তি বেড়ে যায়। অতঃপর হাদিস বিশারদগণ বিরাট একটি দল কর্তৃক পৃথক পৃথক বর্ণনা করেছেন যাতে করে সনদ সহ হাদিসের দূর্বলতার মোটেই কোন সুযোগ থাকেনা।
তা ছাড়া ফাদ্বাইলে আমলের ক্ষেত্রে দূর্বল হাদিস দ্বারা আমল করা উসুলে হাদিসের সর্ববাদী নিয়ম রয়েছে। এবার আরো বিভিন্ন প্রমাণাদি দ্বারা প্রমাণ করতে প্রয়াস পাব, যেমন উপরে এ বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে । সাহাবাদের একটি দল এ বিষয়ে বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম মোহাম্মদ (রঃ) তার আপন কিতাব কিতাবুস্ সুন্নাহর মধ্যে:- শবে বরাতের শিরোনাম দিয়ে অধ্যায় ঠিক করেছেন, সুতরাং একথা বলার উদ্দেশ্য যে, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ) শবে বরাতের অধ্যায় ঠিক করেছেন। অনুরূপ ইমাম বায্যার (রঃ) ও অধ্যায় ঠিক করেছেন। তাছাড়া মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক (রঃ) এর মধ্যে এ বিষয়ে অনেক হাদিস বর্ণিত আছে এবং হাদিস বিশারদ ইমামগণ এ বিষয় বস্থুর নাম দিয়ে অধ্যায় ঠিক করেছেন। এর পরেও যদি বলা হয় শবে বরাতের কোন ভিত্তি, হক্বিকত ও অস্তিত্ব¡ নেই তবে এটি মূর্খতা , অজ্ঞতা এবং হাদিসের কিতাবাদী ও এর মূল্যবান ভান্ডার থেকে বেখবর হওয়ার প্রমাণ ছাড়া অন্য কোন কিছু হতে পারেনা।
ইমাম মোহাম্মদ ইবনে হাসান শায়বানী (রঃ) এ বিষয়ে বর্ণনা করতঃ ঘোষনা দিয়েছেন যে, বর্ণিত হাদিসগুলো সবই সহীহ:- কারণ সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন তবে-তাবেয়ীনের একটি বড় দল হাদিসগুলো বর্ণনা করে আসছেন। এক হাদিস অপর হাদিসের শক্তি বৃদ্ধি করে। এবার দেখার বিষয় হলো হযরত মায়া’জ ইবনে জাবল (রাঃ) হযরত আবু সা’লাবা (রাঃ) হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ) হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণ সনদ সহ ইমাম মোহাম্মদ ইবনে হাসান শায়বানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
আর এমনি ভাবে ঐ সাহাবী গণ থেকে ইমাম ইবনে হিব্বান (রঃ) নিজ সহীহ এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন এবং সর্বপ্রথম তিনি সায়্যিদুনা হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। বস্তুতঃ এইসব হাদিসের কিতাবের রেফারেন্স, এগুলোর সনদ সূত্র, বিশ্বস্ততা, সামঞ্জস্যতা ও সর্বপরি নির্ধারিত হাদিস উল্লেখ করার উদ্দেশ্য শুধু একটিই যে, কোন একটি সনদ ও বর্ণনা দেখে ধারনা করা ঠিক নয় যে লিখে দিলাম এতে দুউফ বা দূর্বলতা আছে। অনেকের এ কথা ধারনাই নাই যে, দুউফ বা দূর্বলতা কাকে বলে? জাল হাদিসকে যয়ীফ বলা হয়না। এবং একথা স্বরণ রাখা প্রয়োজন যে, দূর্বলতা কোন সময়ই হাদিসের মতনের বা বিষয় বস্তুর মধ্যে হয়না। সনদের মধ্যে কোন কারনে দূর্বলতা আসে। একটি কারণে যদি কোন সনদে দূর্বলতা আসে তবে অপর শক্তিশালী সনদের কারনে এর দূর্বলতা দুর হয়ে যায়।
কোন কোন লোক অজ্ঞতাবশতঃ উসুলে হাদিস ও হাদিস শাস্ত্রের ব্যাপারে জ্ঞান না থাকার কারণে তাদের বক্তব্য ও কথাবার্তা দ্বারা সমাজে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়। এগুলো ঠিক নয়। এ ধরনের লোকদের ব্যাপারে উপদেশ হলো, তারা যেন শবে বরাত সম্পর্কে মন গড়া বক্তব্য দিয়ে সমাজে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ করে না দেন, মানুষ মনে করবে শবে বরাত একটি রসম ও রেওয়াজ ছাড়া আর কোন কিছু নয়। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র.) এই হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন যে, এসব বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত। হযরত আয়েশা (রা.) পৃথক সনদে এটিকে বর্ণনা করেছেন। এই হাদিসকে হযরত মায়ায ইবনে জাবাল (রা.), হযরত আবু মুসা ইশআরী (রা.)ও বর্ণনা করেছেন। এরপর ইবনে হিব্বান (র.)ও বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনে আসিম (র.)  সায়্যিদুনা হযরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম বায়হাকী (র.) শুয়াবুল ঈমানের মধ্যে বর্ণনা করেছেন। এরপর ইমাম বাযযার (র.) এটিকে সায়্যিদুনা হযরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনে খুযায়মা (র.)ও বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া সাহাবি হযরত আবু সালাবা (রা.)ও বর্ণনা করেছেন, যাকে ইমাম আসিম (র.) কিতাবুস সুন্নাহর মধ্যে বর্ণনা করেছেন।
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (র.) যিনি পুরো সৌদি আরবের উলামাদের নিকট বিশ্বস্ত ও গ্রহণযোগ্য বলে পরিচিত, তিনি তার ফতওয়ার ৩০ নম্বর খন্ডের ১৪২ নং পৃষ্ঠায় শবে বরাত সম্পর্কে লিখেন, শা’বানের পনেরই রাত যার ফযিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে এবং সাহাবায়ে কেরামদের অনেক আছার তথা তাদের বাণী বর্ণিত আছে। আর এমনিভাবে সলফে সালেহীন, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীনগণের প্রচুর সংখ্যক ব্যক্তিবর্গের বক্তব্য এসেছে এবং এ কথা প্রমাণিত যে তারা সে রাতে গুরুত্ব দিয়ে নামাজ ও ইবাদত বন্দেগি করতেন।
এ ছাড়া হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রঃ) তাঁর গভর্ণরদের প্রতি নির্দেশ দেন যে, শবে ক্বদর ব্যতীত চারটি রাতকে যেন গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয়। তন্মধ্যে রজব মাসের প্রথম রাত ও শা’বানের পনেরই রাত অন্তর্ভূক্ত।
হযরত ইমাম শাফেয়ী (রা.) বলেন- শবেকদর ব্যতীত পাঁচটি রাত এমন আছে যাতে দোয়া করলে তা ফিরায়ে দেয়া হয় না- ১) জুমার রাত, ২) উভয় ঈদের রাত, ৩) রজব মাসের প্রথম রাত, ৪) শা’বানের পনেরই রাত। শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (র.) বর্ণনা করেন, মাছাবাতা বিস সুন্নাহ নামক কিতাব অর্থাৎ সে বিষয়বস্তু যা সুন্নত দ্বারা প্রমাণিত অত্র কিতাবে তিনি শা’বান ও শবে বরাতের ফযিলত সম্পর্কে পৃথক অধ্যায় ঠিক করেছেন এবং এ বিষয়ে সব ইমাম হাদিস বিশারদগণের ইজমা বর্ণনা করেছেন।
হযরত সায়্যিদুনা গাউসুল আজম শায়েখ আব্দুল কাদির জিলানী (র.) যিনি হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন তিনি তাঁর রচিত গুনয়াতুত তালিবীন এর মধ্যে পৃথক অধ্যায় ঠিক করেছেন এবং গুনয়াতুত তালিবীনের ৩৩৯ পৃষ্ঠায় শবে বরাত সম্পর্কে অনেক হাদিস জমা করেছেন। ইমাম জালাল উদ্দিন সায়ুতী (র.) তাঁর রচিত কিতাব আদ্দুররুল মানছুর এর মধ্যে শবে বরাত সম্পর্কে ২৫টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। উক্ত তাফসীরের কিতাবের শেষে আলোচনা প্রসঙ্গে একটি সুক্ষ ঈমান প্রজ্জ্বলিত তথা যা গুনয়াতুত তালিবীন গ্রন্থে আমাদের সকল ওলী আব্দাল, গাউস, কতুবগণের শায়খ সায়্যিদুনা গাউসুল আজম শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী (র.) লিখেছেন তা এভাবে বর্ণনা দেন যে, ৫টি অক্ষরের সমন্বয়ে গঠিত (শব্দ সমষ্টি) সায়্যিদুনা গাউসুল আজম (র.) বলেন, শা’বানের শীন অক্ষরে আল্লাহতায়ালা মান-সম্মান নিহিত রাখছেন, শা’বানের আইন অক্ষরে আল্লাহতায়ালা উচ্চ মর্যাদা ও উন্নতি প্রগতি নিহিত রাখছেন এবং শা’বানের বা অক্ষরে আল্লাহতায়ালা পূর্ণ ও তাকওয়া লুকায়িত রেখেছেন আর শা’বানের আলিফের মধ্যে আলাহতায়ালা প্রেমপ্রীতি লুকায়িত রেখেছেন এবং শা’বানের নুন অক্ষরে আল্লাহতায়ালা আলো নিহিত রেখেছেন। এ ছাড়া তিনি বলেন, এতে খায়রাত খুলে দেয়া হয়, বরকত সমূহ নাজিল হয়। গুনাহ খাতা পরিত্যাগ করা হয় এবং গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়া হয় এবং প্রচুর পরিমাণে হুজুর (সা.) এর উপর রহমত হতে থাকে। ইমাম কুসতুলানী (র.) একটি মূল্যবান কথা বলেছেন যে, মুওয়াহিবে লাদুনিয়ার ভাষ্যকর ইমাম যুরকানী (র.) বর্ণনা করেন যে, শা’বানের ফযিলতের মধ্যে অন্যতম ফযিলত এটিও আছে যে, এটি সেই মাস যাতে আল্লাহতায়ালা হুজুর (সা.) এর উপর দুরুদ আর সালামের আয়াত নাযিল করেছেন। তিনি বলেন যে, উক্ত আয়াত শা’বান মাসে নাযিল হয়েছে কাজেই শা’বানের সম্পর্ক হুজুর (সা.) এর দুরুদ আর সালামের সাথে বেশি এবং আল্লাহর বখশিশ, মাগফেরাত ও তওবার সাথেও অনেক বেশি। সুতারাং এ রাতের ইবাদতের দ্বারা প্রিয় নবিজী (সা.) এর দরবারেও নৈকট্য অর্জন হয়, বিশেষ করে আল্লাহতায়ালার দরবারে নৈকট্য অর্জন হয়।
আল্লাহ তাবারাকা ও তা’য়ালা যেন আমাদের উক্ত বিষয়ের তত্ত্ব অন্তর্নিহিত সারাংশের বুঝ দান করেন এবং সাথে সাথে উক্ত বরকত এবং নিয়ামতগুলো দ্বারা উপকৃত হওয়ার তৌফিক দান করেন। আমীন!



শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT