নিয়তের উপর কাজের ফলাফল নির্ভরশীল
নিজস্ব প্রতিনিধি বুধবার রাত ০১:২৭, ২৪ আগস্ট, ২০২২
জুমার নামাজের আগে দীনি কথা বলা ও শোনার মধ্যে ফায়দা রয়েছে। দীনি কথাবার্তা যে বলে তারও লাভ আর যে শোনে তারও লাভ। তবে বলনেওয়ালার ইখলাস ও মহব্বতের সঙ্গে বলা চাই এবং শ্রোতাদেরও আমলের নিয়তে শোনা চাই। হাদিস থেকে এ কথাই বুঝে আসে।
বুখারির হাদিসে আছে, সমস্ত কাজের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। যদি কাজটা ভালো হয় এবং বিশুদ্ধ নিয়তে করা হয় তাহলে সওয়াব ও উপকার পাওয়া যাবে, আর নিয়তের মধ্যে গরমিল থাকলে অর্থাৎ ইখলাস না থাকলে কাজটি ভালো হওয়া সত্ত্বেও কোনো ফায়দা হবে না, বরং ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। দীনের আলোচনা কত বড় নেক কাজ! কিন্তু এখানেও সেই কথা।
যেমন আল্লাহতায়ালা কোরআনের মধ্যে বলেছেন, (হে নবী!) দীনি বিষয়ের আলোচনা করে পরবর্তীদের জন্য নমুনা কায়েম করুন, মোমিনদের উপকারে আসবে। অনেকে ওয়াজ খুতবা শুনে বলে যে, হুজুর! আজকে আপনার বক্তৃতায় আমার অন্তর ফেটে গেছে অর্থাৎ কষ্ট লেগেছে। কারণ তার চারিত্রিক দোষের কথা আজকের বয়ানে জোরালোভাবে বলা হয়েছে। বোঝা গেল, সে খুব মনোযোগের সঙ্গে পুরো বয়ান শুনেছে, কিন্তু আমলের নিয়তে শোনেনি। তাই উপকার তথা সংশোধনের পরিবর্তে অপকার তথা ক্ষোভ ও অনুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে অবস্থা এমন হয়েছে যে, অসত্য কথায় মনে কষ্ট লাগে না, সত্য ও ভালো কথা বললে কষ্ট লাগে। অথচ ইসলামের শিক্ষা হলো, মানুষকে সত্য কথা বলা, সত্যের দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং বিভ্রান্তি ও বিভেদ সৃষ্টিকারী কোনো কথা না বলা। এ শিক্ষা মোতাবেক না চললে পাকড়াও হতে হবে। দাওয়াত প্রদান থেকে বিমুখ থাকার পরিণতি মানুষকে দীনের কথা বলা ও সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার শক্তি থাকা সত্ত্বেও যদি না দেওয়া হয় তাহলে শাস্তির যোগ্য হতে হবে। যেখানে হাত দিয়ে বাধা দেওয়ার শক্তি আছে সেখানে হাত দিয়েই বাধা দিতে হবে। আর যেখানে শুধু বলার শক্তি আছে সেখানে ততটুকু করতে হবে। কোনো দুনিয়াবি স্বার্থের কারণে বিরত থাকা যাবে না। এটা হাদিসের নির্দেশ।
অনেকে আবার বক্তব্য ভুল বুঝে পরে তা বেঠিকভাবে বর্ণনা করে। যেমন আমি বললাম, ‘কোনো কোনো কাজে নিয়তের প্রয়োজন নেই। কিন্তু একজন শ্রোতা ভালোভাবে কথাটি শোনেনি বা বোঝেনি, পরে অন্যদের কাছে বর্ণনা করল যে খতিব সাহেব বলেছেন, কোনো কাজেই নিয়তের দরকার নেই। দেখুন শোনার সামান্য ভুলের কারণে বিষয়টা কেমন উল্টে গেল! উল্লেখ্য, অনেক কাজে নিয়ত অত্যন্ত জরুরি। যেমন নামাজ, রোজা, জাকাত ইত্যাদির ক্ষেত্রে নিয়ত আবশ্যক। আবার অনেক কাজ আছে নিয়ত ছাড়াই হয়ে যায়।
যেমন অজু ও গোসল করার ক্ষেত্রে নিয়ত ছাড়াই শরীর পবিত্র হয়ে যায়। তবে পরিপূর্ণ সওয়াবের জন্য নিয়ত করা দরকার। এখানে এ নিয়ত করতে হবে যে, আমি পবিত্র হয়ে ইবাদত করব। আমরা যে দীনের কথা বলছি ও শুনছি, এ ধরনের মজলিসে ফেরেশতারাও শরিক থাকে। বিশেষ করে জুমার দিন।
বুখারির হাদিসে আছে, জুমার দিনে কে মসজিদে আগে এলো, কে পরে এলো এবং মসজিদে এসে কী করল ফেরেশতারা গেটে দাঁড়িয়ে এসব লেখে। হাদিসে আরও এসেছে, তারা ইমাম খুতবা শুরু করার আগ পর্যন্ত লিখতে থাকে। যখন ইমাম খুতবা শুরু করেন তখন এ খাতা বন্ধ করে রাখা হয়। এরপর যারা আসে তাদের নাম অন্য এক খাতায় লেখা হয়। কারণ যারা খুতবা শুরু করার আগে এসেছে তাদের বিশেষ মর্যাদা আছে।
জুমার দিন সর্বপ্রথম যে আসবে সে একটা উট কোরবানি করার সওয়াব পাবে, এরপর যে আসবে সে একটি গরু কোরবানির সওয়াব পাবে, এরপর যে আসবে সে একটি বকরি কোরবানির সওয়াব পাবে। এভাবে নিচের দিকে যাবে। যখন মজলিস শেষ হয়ে যায় তখন ফেরেশতারা লিখিত রিপোর্ট আল্লাহর কাছে পেশ করে এবং বলতে থাকে, হে আল্লাহ! এরা তোমার দীনের আলোচনা করেছে, তোমার রসুলের আলোচনা করেছে এবং মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনের সফলতা নিয়ে আলোচনা করেছে এবং খুব রোনাজারির সঙ্গে আপনার দয়া-অনুগ্রহের আবেদন করেছে।
তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসা করবেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? ফেরেশতারা বলবে, না। বরং তারা তোমার কোরআন ও তোমার রসুলের হাদিসের মাধ্যমে তোমাকে জেনেছে, নবীর উত্তরাধিকারী আলেম-ওলামাদের কাছ থেকে বয়ান ও নসিহত শুনে শুনে তোমার বিস্তারিত পরিচয় লাভ করেছে।
তখন আল্লাহ বলবেন, তারা কী চায়? ফেরেশতারা বলবে, তারা হাত তুলে দোয়া করছে তোমার রহমত ও মাগফিরাতের। আল্লাহ বলবেন, তোমরা সাক্ষী থাক আমি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম। এরপর ফেরেশতারা আল্লাহর দরবারে আশ্চর্য ধরনের প্রশ্ন করবে, হে আল্লাহ! আপনি তো সবার ক্ষমা ঘোষণা করেছেন অথচ এদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা মসজিদে শুধু নামাজ পড়ার জন্য এসেছে, বয়ান শোনার জন্য নয়; এরপর বাধ্য হয়ে বয়ান শুনেছে।
যেহেতু নামাজ বয়ান শেষ হওয়ার পরই পড়া হয় এবং এ সময় কথাবার্তাও বলা যায় না, তাই শুনতেই হয়। আল্লাহ বলেন, তারাও আমার ক্ষমার মধ্যে শামিল।
মহান আল্লাহ পাক যেন আমাদের সকলকে উপরোক্ত কথাগুলোর উপর আমল করার তাওফিক দান করেন আমীন।