ঐশী’র জাতীয় পতাকা অবমাননায় ক্ষুব্ধ ভক্তরা
রায়হান জামান,কিশোরগঞ্জ মঙ্গলবার রাত ১১:১৯, ২২ ডিসেম্বর, ২০২০
জাতীয় পতাকা একটি দেশের পরিচয়,স্বাধীনতা ও সার্বভৌ্মত্বের প্রতীক। এটি শুধু একটি কাপড় নয়, বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতীক হচ্ছে আমাদের প্রিয় লাল সবুজ পতাকা। তাই জাতীয় পতাকা ব্যবহারে রয়েছে বিভিন্ন বিধি-বিধান ।পতাকার অবস্থা ব্যবহারযোগ্য না হলে তা মর্যাদাপূর্ণভাবে সমাধিস্থ করতে হবে। তা না-হয় জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করা বা জাতীয় পতাকার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করলে ওই ব্যক্তিকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে ।
জেনে হোক বা অজ্ঞতার কারণে হোক, জাতীয় পতাকার অবমাননা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জাতীয় পতাকা কীভাবে ব্যবহৃত হবে, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট আইন থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত অজ্ঞতার কারণে তা লঙ্ঘন হচ্ছে।
সম্প্রতি বিজয় দিবসকে উল্লেখ করে বাংলাদেশী সুন্দরী ঐশী তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে আপলোড করেন পতাকা আকৃতি একটি ছবি, যাকে কেন্দ্র করে ফেসবুক পাড়ায় উঠেছে ঝড়। তাঁর কমেন্ট বক্স ঘাটলে দেখা যায় নানান প্রতিক্রিয়া ও পতাকার মর্যাদা ক্ষুন্ন নিয়ে কথা।
লক্ষাধিক শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের অর্জিত এই পতাকার সম্মান রাখার দায়িত্বটা বাঙালির, সেখানে বাংলাদেশের পতাকার অবমাননাকে বরদাস্ত করতে নারাজ তার ফ্যান ফলোয়ার্স। এর আগেও যারা বাংলাদেশের পতাকার মর্যাদা নিয়ে কথা তুলেছেন তাদেরকে জননেত্রী শেখ হাসিনা কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করেছেন। তাঁর এই প্রতিনিধিত্ব কে সামনে রেখে আজ চেয়ে আছে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা। পাবে কি ফিরে তার সেই মর্যাদা?
আজকাল অনেকেই জাতীয় পতাকায় নকশা করে ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহার করেন। কিন্তু জাতীয় পতাকার ওপর কোনো কিছু লেখা বা মুদ্রিত করা যাবে না অথবা কোনো অনুষ্ঠান বা উপলক্ষে কোনো চিহ্ন অঙ্কন করা যাবে না; এমনকি জাতীয় পতাকাকে পোশাক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না এবং গায়ে জড়িয়ে রাখা যাবে না।
জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ (সংশোধিত ২০১০)-এ জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিভিন্ন বিধি-বিধান বর্ণিত হয়েছে। জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের নিদর্শন। তাই সব সরকারি ভবন, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভবনে সব কর্মদিবসে পতাকা উত্তোলনের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া কিছু কিছু অনুষ্ঠান উপলক্ষে যেমন-ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও সরকার প্রজ্ঞাপিত অন্য যেকোনো দিবসে বাংলাদেশের সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের প্রাঙ্গণে এবং কনসুলার কেন্দ্রগুলোয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা বাধ্যতামূলক। তা ছাড়া শহীদ দিবস ও জাতীয় শোক দিবসে বা সরকার প্রজ্ঞাপিত অন্যান্য দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকার বিধান করা হয়েছে।
অর্ধনমিত রাখতে হলে পতাকা উত্তোলনের নিয়ম হলো,অর্ধনমিত অবস্থায় উত্তোলনের প্রাক্কালে পতাকাটি পুরোপুরি উত্তোলন করে অর্ধনমিত অবস্থানে আনতে হবে এবং পতাকা নামানোর প্রাক্কালে পতাকাটি শীর্ষে উত্তোলন করে নামাতে হবে।
ইচ্ছা করলেই যে কেউ গাড়িতে পতাকা ব্যবহার করতে পারে না। কোন কোন ভবনে ও কারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন, এ সম্পর্কে ওই আইনের ৬ ধারায় বলা হয়েছে। ওই ধারায় বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ও অফিসে সব কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ৬ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে, নৌযানে ও বিমানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবে। এ ছাড়া স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা, মন্ত্রী সমমর্যাদার ব্যক্তি, বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের প্রধানের গাড়িতে ও তাদের নৌযানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন। প্রতিমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, উপমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাজধানীর বাইরে ভ্রমণকালে গাড়িতে ও নৌযানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
৭ ধারায় জাতীয় পতাকার মর্যাদা রক্ষার কথা বলা হয়েছে। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জাতীয় পতাকার প্রতি যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। যদি পাশাপাশি ২টি পতাকা উত্তোলন করা হয়, সে ক্ষেত্রে জাতীয় পতাকা ভবনের ডান দিকে উত্তোলন করতে হবে। জাতীয় পতাকার ওপর অন্য কোনো পতাকা উত্তোলন করা যাবে না।