ঢাকা (সকাল ১০:৩৪) বুধবার, ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Join Bangladesh Navy


সিলেটে শিশু তানহার সংবাদ সম্মেলন

সিলেট জেলা ২৩৫৬ বার পঠিত

ইবাদুর রহমান, সিলেট ইবাদুর রহমান, সিলেট Clock রবিবার রাত ০৯:৫৯, ১৬ আগস্ট, ২০২০

সিলেটের জকিগঞ্জ কসকনকপুর ইউনিয়নের উত্তর আইয়র গ্রামের নজরুল ইসলামের মেয়ে তানহা আক্তার তান্নী তার অসুস্থ পিতাকে নির্দোষ দাবি করে মামলা থেকে অব্যাহতি দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রায় অর্ধমাস ধরে কারাগারে থাকা তার মা-বোনসহ তাদের বাড়িতে কাজে থাকা প্রতিবেশী দুই ইলেকট্রিক মিস্ত্রীর মুক্তির দাবি জানিয়েছেন এবং মা-বোন ও পিতার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মাদক মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করেছেন। তিনি বলেন, জকিগঞ্জ থানার একদল পুলিশ গত ২৯ জুলাই তার পিতার খোঁজে বাড়িতে গিয়ে তার মা-বোনসহ বাড়িতে ইলেকট্রিকের কাজে থাকা দুই যুবককে ধরে নিয়ে আসে। এরপর থেকে তারা কারাগারে আছেন। তাদেরকে মাদকব্যবসায়ী দাবি করে সাজানো ঘটনায় মামলার আসামি করা হয়েছে। এই মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি ও কারাগারে থাকা মা-বোন ও অন্যদের মুক্তি দাবি করেন শিশু তানহা।
রোববার (১৬ আগস্ট) বিকেল ৩টায় জিন্দাবাজারে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তানহা এমন দাবি করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া তানহা তার বক্তব্যে বলেন, আমার বৃদ্ধ বাবা নজরুল ইসলাম সততা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের সংসার চালাচ্ছেন। তিনি কোন অন্যায় কাজে জড়িত নয়। একটি প্রভাবশালী মহল পরিকল্পিতভাবে তাকে মামলার আসামি করিয়েছে। আরেকটি মামলায় ওই চক্রই আমার মা ফাতেহা বেগম, আমার বোন নুসরাত বেগম এবং আমাদের গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রী কিবরিয়া ও রাসেল আহমদকেও আসামি করিয়েছে। মামলার সাক্ষীরাই আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন বলে আমরা মনে করি। লিখিত বক্তব্যে তানহা আক্তার দাবি করেন, পুলিশ আমাদের বাড়িতে সন্ধ্যায় গিয়েছিল। এজাহারে উল্লেখ করা হয় মধ্যরাতে গিয়েছে। পিতাসহ পরিবারের সকল সদস্যই আইনকে শ্রদ্ধা করেন। তবুও মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে বৃদ্ধ পিতাকে। তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে, ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হচ্ছে। ভয়ে, আতঙ্কে তিনি এলাকায়ও আসতে পারছেন না।
গত ২৯ জুলাই বাড়িতে কোনো রকম মাদকদ্রব্য উদ্ধার করার ঘটনাই ঘটেনি। আমাদের বাড়িতে কোনো মাদকও ছিলো না। তবুও আটককৃতদের কাছ থেকে ১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে এমন কথা এজাহারে উল্লেখ করা হয়। যা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি জানাচ্ছি। তদন্তের মাধ্যমে আমাদের পরিবার মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে চলাফেরা করতে পারবে। কারাগারে থাকা আমার বোনের অপেক্ষমাণ বিয়ের আয়োজনও সম্পন্ন হবে। তানহা আবেগাপ্লুত হয়ে দাবি করেন, ‘আজ অর্ধমাস ধরে মাকে-বোনকে ছাড়া দিন কাটাচ্ছি। পিতাও প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মামলার সাক্ষীদের ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কিংবা তাদের ফোনের কললিস্ট দেখলে প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করি। তাদের সাথে পূর্বেকার জায়গা-জমি নিয়ে তাদের সাথে মামলা ছিল। তাতে আমাদের পক্ষে রায় এসেছে। সেজন্যই হিংসের বশবর্তী হয়ে তারা আমাদের বিপদে ফেলতে মামলায় ফাঁসিয়েছে। তারা এলাকায় খুব প্রভাবশালী।’ সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. আব্দুন নাসেরসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে সহযোগিতা করছেন না। তারা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করছেন। পুলিশ যদি ঘটনাটি ভালোভাবে তদন্ত করে ও যাচাই-বাচাই করে তবে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। ঘটনার দিন পুলিশ সদস্যরা আমাদের বাড়ির প্রতিটি কক্ষ তল্লাশি করেছেন। এসময় আমাদের বাড়িতে নগদ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ছিল। কিন্তু সেই টাকার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ওই টাকাগুলো আমার বোনের বিয়ের জন্য আমার পিতা জমিয়ে রেখেছিলেন।’ এছাড়া আমার পিতার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর পুলিশ পরিচয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি আমাদের কাছে নগদ ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমরা টাকা দিতে অপারগতা জানাই।
এ বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেও অবগত করি। কিন্তু আমার পিতাকে নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। ক্রসফায়ারের ভয়ও দেখানো হচ্ছে। এসব কারণে আমরা চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছি। এই করোনাকালীন সময়ের এই বিপদজনক সময়েও আমার পিতাকে দিনের পর দিন ঘরের বাইরে কাটাতে হচ্ছে। জকিগঞ্জে সম্প্রতি একটি ক্রসফায়ারের ঘটনাও ভয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নিজের মা-বোনের মুক্তির দাবি জানিয়ে এবং পিতাকে মামলা থেকে অব্যাহতির দাবি জানিয়ে তানহা আক্তার তান্নী বলেন, ‘আমি একজন শিশু হিসেবে জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীতভাবে দাবি জানাচ্ছি আমার মা-বোনকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। ক্রসফায়ারের হুমকিতে প্রাণের মায়ায় ঘরের বাইরে থাকা আমার পিতা নজরুল ইসলামকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। প্রভাবশালী মহলটি আমাদের বিরুদ্ধে আরও মামলা দায়ের করতে পারে। এ বিষয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে অবগত করছি। পাশাপাশি গণমাধ্যমের মাধ্যমে দাবি জানাচ্ছি- ‘যদি আমার পিতা সত্যিই মাদকব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তবে এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করুন। তিনি অপরাধী হলে তার যথাযথ শাস্তি হোক।’
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে শিশু তানহার সাথে উপস্থিত ছিলেন লাইলী বেগম, নিপা বেগম, রাহেল মিয়া, রজিমুদ্দিন, সুলতানা বেগম, সুফিয়া বেগম, জয়নব, রাহেনা বেগম, তসলিমা বেগম সোনারা, পারভেজ, হাজারী জয়নাল, শাহীন, মিজান মিয়া, জলিল হোসেন বাবু প্রমুখ। এরা সকলেই নজরুল ও ফাতেহা বেগমের নিকটাত্মীয়।



শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT