লালমনিরহাট-২ আসন এ নুরুজ্জামান আহমেদ নৌকার প্রার্থী চুরান্ত
মেঘনা নিউজ ডেস্ক রবিবার রাত ০৮:৫২, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
ঈশাত জামান মুন্না, লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ বৃহত্তর রংপুরের ২২টি আসন নিয়ে মহাজোটের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামীলীগের যে ৭টি সংসদীয় আসন চুড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে, তার মধ্যে রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ ৩টি। লালমনিরহাট থেকে ১টি আসনে জনাব আলহাজ্ব নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি মাননীয় সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী (কালীগঞ্জ -আদিতমারী)। নীলফামারী থেকে ১টি আসনে মাননীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নুর এমপি, গাইবান্ধা থেকে ২টি আসনে জনাব ডা: ইউনুচ আলী এমপি ও মাহাবুব আরা গিনি এমপি ।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরের ২২টি আসনের মধ্যে ২১টি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে হবে। সম্প্রতি ঈদুল আজহা উদযাপন করতে এসে দলটির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এমনটাই দাবি করেছেন। জাপা চেয়ারম্যানের এমন দাবিতে নাখোশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, রংপুরে নৌকার শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলেও এবার সদর আসন এরশাদকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। বুঝে শুনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে হবে। তা না হলে দলের ঐক্য নষ্ট হয়ে যাবে। আর জাতীয় পার্টি মনে করছে, রংপুর লাঙ্গলের ঘাঁটি। এটি কেউ ভাঙতে পারবে না। আসন ভাগাভাগি নিয়ে দুই দলের মধ্যে চলছে যুদ্ধ। ঈদুল আজহা উদযাপন করতে রংপুরে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এরশাদ বলেন, ‘বৃহত্তর রংপুরের ২২টি আসনের মধ্যে শুধু পীরগঞ্জ ছেড়ে দিয়েছিলাম আওয়ামী লীগকে। এবারও আশা করি এই ২১টি আসনে আমরা জয়ী হব। এ ব্যাপারে অন্যরা কে কী আশা করল, কে কী দাবি করল তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা রংপুরের সবকটি আসন এবার চাই। রংপুরের মানুষ আমাদের ভোট দেবে, এটা নিশ্চিত।’
এরশাদের এমন দাবিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগে। তাদের স্পষ্ট দাবি, এবার এরশাদকে রংপুর সদর আসনেও ছেড়ে দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলায় ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের দখলে চারটি এবং জাতীয় পার্টির দখলে আছে দুটি। এর মধ্যে রংপুর সদর আসনের এমপি জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনে এমপি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা। রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তী সময়ে আসনটি ছেড়ে দিলে সেখানে উপনির্বাচনে নির্বাচিত হন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী (বর্তমান স্পিকার)। এই ছয়টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দুটি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে রংপুর-৪ আসনে টিপু মুন্সী এবং রংপুর-৫ আসনে এইচ এন আশিকুর রহমান। বাকি চারটি আসনে প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। এই চারটি আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী থাকবে নাকি জোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
নীলফামারীর চারটি আসনই আওয়ামী লীগের দখলে। এর মধ্যে নীলফামারী-২ আসনে আসাদুজ্জামান নূরের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে। বাকি তিনটি আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আছেন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।
লালমনিরহাটে তিনটি সংসদীয় আসন রয়েছে। এর মধ্যে লালমনিরহাট-২ আসনে নুরুজ্জামান আহমেদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে। অন্য দুটি আসনে আওয়ামী লীগের এমপি থাকলেও এখন পর্যন্ত ওই দুটি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি বলে দলের দাবি।
গাইবান্ধায় পাঁচটি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে তিনটি, জাতীয় পার্টির দখলে একটি। একটি আসনে আছেন স্বতন্ত্র এমপি। আওয়ামী লীগ থেকে গাইবান্ধা-২ আসনে মাহাবুব আরা গিনি এবং গাইবান্ধা-৩ আসনে ইউনুচ আলী সরকারের মনোনয়নের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে বলে দলীয় সূত্র দাবি করেছে।
কুড়িগ্রাম জেলায় চারটি আসনের মধ্যে সম্প্রতি দুজন এমপি প্রয়াত হয়েছেন। প্রয়াত দুই এমপিই জাতীয় পার্টির। উলিপুর-চিলমারী আসনে সাবেক এমপি প্রয়াত মাইদুল ইসলামের আসনে উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। কুড়িগ্রামের সদর আসনের এমপি তাজুল ইসলাম চৌধুরী সম্প্রতি ইন্তেকাল করেছেন। সেই আসনে উপনির্বাচনের সম্ভাবনা আর নেই বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-ল জানান, জাতীয় পার্টিকে ২১টি আসন ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। ২০০৮ সালে রংপুর জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সঙ্গে ত্রিমুখী লড়াই করে তিনটি আসন পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এরশাদের জনপ্রিয়তা আগের মতো নেই। তার প্রমাণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ইউপি নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরে জাতীয় পার্টির ভরাডুবি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এবার আমরা সদর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেব। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ অন্য আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
এদিকে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর দলীয় প্রধানের ২১টি আসন চাওয়াকে যুক্তিযুক্ত মনে করে বলেন, জাতীয় পার্টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে বৃহত্তর রংপুরের ২১টি আসন চাওয়া যুক্তিযুক্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ২১টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আগামী নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি।
কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম মঞ্জু ম-ল বলেন, কুড়িগ্রামের চারটি আসনই জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার কুড়িগ্রামে স্মরণকালের উন্নয়ন করেছে। এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে এখানে নৌকার প্রার্থী দিতে হবে।