মাহে রমজানের ফজিলত:-আব্দুল্লাহ আল মামুন
নিজস্ব প্রতিনিধি রবিবার রাত ০২:২৭, ৩ এপ্রিল, ২০২২
সৌদি আরবে শুরু হয়ে গেছে রমজান মাস। আজ থেকে বাংলাদেশেও শুরু হবে রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজান। তাই আসুন আমরা শারীরিক ও মানসিক সব ধরণের প্রস্তুতি শেষ করে নিজেদের তৈরী রাখি। রমজান ও ঈদের সবধরণের কেনাকাটা দ্রুত সম্পন্ন করে ফেলি, যাতে শপিং মলে গিয়ে ইবাদতের মূল্যবান সময় নষ্ট না হয়।
এই মাসের মতো ফজিলতের মাস আর নেই। এই মাসের একটা ফরজ ইবাদত হবে সত্তরটা ফরজের সমান। একটা নফল ইবাদত হবে একটা ফরজ ইবাদতের সমান। এই মাসে দান করলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সেটাকে সত্তর থেকে সাতশো গুন বাড়িয়ে দিবেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, “রোজাদারের পুরস্কার আমি নিজে দিবো”। মহাবিশ্বের পালনকর্তার নিজে দেওয়া পুরস্কার কেমন হতে পারে, সেটা কল্পনা করাও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এই মাসের প্রতিটা মুহূর্ত আমাদের কাজে লাগানো উচিত।
রোজা শুধু রাখলেই হবে না। রোজাকে হেফাজত করতে হবে। এজন্য রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে, গীবত, পরনিন্দা, পরচর্চা, হিংসা, ঘৃণা, রিয়া, অহংকার, চোগলখোরি প্রভৃতি থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করতে হবে। নারী-পুরুষ উভয়কেই তাদের নজর/ দৃষ্টি হেফাজত করতে হবে এবং পর্দার বিধান পালন করতে হবে।
কেউ যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তখন তাকে বলতে হবে,’আমি রোজাদার!’
বর্তমান স্মার্ট ফোনের যুগে একটা পাপ আমরা হরহামেশাই করি, সেটা হলো কারণে-অকারণে ছবি তোলা। এটা আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা উচিত। যতদূর জানি বুখারী শরীফের হাদিস অনুযায়ী কোনো প্রাণীর ছবি তোলা হারাম। আর কেয়ামতের দিন ছবি তোলা ব্যক্তিকে এই ছবির মাঝে প্রাণ বা জীবন দিতে বলা হবে এবং জীবন দিতে না পারার কারণে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে।
বর্তমানে হজ্জ ও ওমরা পালন করতে গিয়ে প্রত্যেকটা স্টেপের যেভাবে আমরা ছবি তুলি, তাতে মাকবুল হজ্জ ও ওমরা আমাদের কতখানি নসিব হয় এটা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে জরুরত সাপেক্ষে বা বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা ইসলামে অবশ্যই জায়েজ আছে।
রোজা রেখে অন্যের হক নষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যার যে অধিকার সেটা তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। অধীনস্ত লোকদের কাজের বোঝা যথাসম্ভব হালকা করে দিতে হবে। মাপে কম দেয়া ও পণ্যে ভেজাল দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সবার সঙ্গে বিনয়ের সাথে আচরণ করতে হবে। অন্যের দোষ-ত্রুটি যথাসম্ভব গোপন রাখতে হবে, তাহলে কেয়ামতের দিন আল্লাহ আমাদের অনেক দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। জবানে সবসময় জিকির জারি রাখতে হবে এবং বেশি বেশি নফল ইবাদত করতে হবে।
খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি না করে যতখানি সম্ভব সংযম পালন করতে হবে। তাহলে আশা করা যায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের মাফ করে সদ্য ভুমিষ্ট শিশুর মতো নিষ্পাপ বানিয়ে দিবেন।
আর এটা বজায় রাখার জন্য এই এক মাসের ট্রেনিং বা শিক্ষা বছরের অন্য মাসগুলোতেও চালু রাখতে হবে। তাহলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পরকালের অনন্ত জীবনে আমাদের জান্নাত দান করবেন। আর আমাদের প্রত্যেকের এই পরিবর্তনের প্রভাব সমাজের উপরও পড়বে এবং এটা ইহকালীন জীবনকেও অনেক সহজ করে দেবে।
বর্ণিত বিষয়গুলো বলা যেমন সহজ, বাস্তবে পরিপালন করা তত কঠিন। এজন্য প্রচুর ধৈর্যধারণ করতে হবে, অত্যধিক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে এবং সর্বোপরি, কঠিন অধ্যবসায়ের মাধ্যমে এগুলো রপ্ত করতে হবে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের তাওফিক দান করুন এবং মাহে রমজানের পূর্ণ খায়ের-বরকত আমাদেরকে প্রদান করুন, আমিন।