বেশি সওয়াব পেতে শবে কদরের রাতে যেসব দোয়াগুলো পড়তে হবে
নিজস্ব প্রতিনিধি বুধবার রাত ০২:৪৩, ২৭ এপ্রিল, ২০২২
বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল কদরের রাত। রমজানের মাসের শেষ দিনের যেকোনো বেজোড় রাতটি শবে কদরের।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া অগ্রাহ্য করা হয় না (বরং কবুল করা হয়); পিতার দোয়া, রোজাদারের দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া।” (বায়হাকি, হাদিস: ৩/৩৪৫; সিলসিলাতুস সহিহা, আল বানি: ১৭৯৭)
আর সেই রমজান মাসের শ্রেষ্ঠ রাত কদরের রাত। সারাদিন রোজা রেখে কদরের রাতে রোজাদার যখন আল্লাহর উদ্দেশে দুই হাত তোলেন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা সেই দোয়া কবুল করেন।
তাই, শবে কদরের রাতটি কোনোভাবেই হাতছাড়া করা উচিত নয়।
শবে কদরের রাতে বিশেষ সওয়াব পেতে মাগরিব ও এশার নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে আদায় করা উচিত। এরপর ইতিকাফ করা উচিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আমৃত্যু রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে ইতেকাফ করেছেন।
এ বিষয়ে হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি মহানবীর কাছে যখন জানতে চান, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যদি জানতে পারি, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর—তাহলে তখন কোন দোয়াটি পড়বো?
তখন তিনি বললেন, তুমি বলো-আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম; তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।
অর্থ- হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫১৩)
এছাড়াও, কদরের পবিত্র রাতে আরও কয়েকটি দোয়া বারবার পড়লে বেশি বেশি সওয়াব হাসিল করা সম্ভব।
রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।
অর্থ- হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করো ও আমাদের প্রতি রহম করো। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সুরা মুমিনুন: আয়াত ১০৯)
রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সায়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মাআল আবরার।
অর্থ- হে আমাদের প্রভু! সুতরাং আমাদের গোনাহগুলো ক্ষম করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন। (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১৯৩)
রাব্বানাগফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি।
অর্থ- হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন। (সুরা হাশর: আয়াত ১০)
ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।
অর্থ- হে আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের পাপ মোচন করুন। আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। তুমিই আমাদের প্রভু। (সুরা বাকারাহ: আয়াত ২৮৬)
রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়াংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।
অর্থ- হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন। (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১৪৭)
রাব্বানাগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।
অর্থ- হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর। (সুরা ইবরাহিম: আয়াত ৪১)
রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।
অর্থ- হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো। (সুরা আরাফ: আয়াত ২৩)
রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।
অর্থ- হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর। (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১৬)
রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি।
অর্থ- (হে আমার) প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। (সুরা কাসাস: আয়াত ১৬)
সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির।
অর্থ- আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে। (সুরা আল-বাকারাহ: আয়াত ২৮৫)
রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।
অর্থ- হে আমার প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী। (সুরা মুমিনুন: আয়াত ১১৮)
কুরআনে উল্লেখিত এসকল ক্ষমা প্রার্থনা দোয়াগুলো, নামাজের সেজদায় গিয়ে, তাসবিহ পড়ে কিংবা শেষ বৈঠকে, তাশাহহুদ ও দরূদ পড়ার পর বেশি বেশি পড়ে তওবা করলে, আল্লাহ গুনাহ মাফ করে দেবেন।