বান্দরবানের লামায় অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত ৩৩, হাসপাতালে ভর্তি
নিজস্ব প্রতিনিধি মঙ্গলবার দুপুর ০১:২৭, ১৭ মার্চ, ২০২০
সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, বান্দরবান প্রতিনিধিঃ বান্দরবানের লামা উপজেলার ১নং সদর ইউনিয়নের দুর্গম লাইল্যা মুরুং পাড়ায় অজ্ঞাত রোগে আক্তান্ত ৩৩ জনকে লামা হাসপাতালে আনা হয়েছে। অসুস্থ ৩৩ জন শিশু, নারী ও পুরুষকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদ, স্থানীয় লোকজন ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সোমবার (১৬ মার্চ) সকালে টলি ট্রাক্টর দিয়ে অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে আনা হয়।
লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদুল হক জানিয়েছেন, প্রাথমিক ধারনা মতে ও রোগের আলামত দেখে মনে হচ্ছে রোগটি হাম। তারপরেও আমরা নিশ্চিত হতে আক্রান্তদের কাছ থেকে নমুনা রক্ত সংগ্রহ করে ঢাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের গবেষনাগারে পাঠানো হবে।
এদিকে গতকাল রোববার খবর পাওয়া মাত্র আমরা তিন সদস্যের একটি মেডিকেল টিম সেখানে পাঠিয়েছিলাম। তারা তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে। আমার পুরো মেডিকেল টিম আক্রান্তদের সেবা দিচ্ছে। হাসপাতালে ২টি ওয়ার্ডকে আইসোলেশন সেন্টার করা হয়েছে। ৩৩ জন রোগীকে সেখানে আলাদা করে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে লামা হাসপতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা হল, তাতাই ম্রো (১৩), মাছিং ম্রো (১১), তোম পাউ ম্রো (১), ছিদ্দিক ম্রো (২), রুই রাউ ম্রো (২), কাই কোম ম্রো (৫), মিং পুং ম্রো (৮), কাই তন ম্রো (৬), সংসোং ম্রো (৩), মিলং ম্রো (২), মেন লং ম্রো (৫), রা রুই ম্রো (২), ওরা উ ম্রো (৪), মেন পাও ম্রো (১৩), কাইং ওয়াই ম্রো (১৭), চং ক্রং ম্রো (১৫), পাউ চুং ম্রো (৯), সুলং ম্রো (১০), চিং অং ম্রো (১৯), অই রা ম্রো (২০), মাংলে ম্রো (১৮), বাই টেপ ম্রো (১৫), কাই ওয়াই ম্রো (১৯), মেন লং ম্রো (১১), কাতাই ম্রো (১৩), কাই চুই ম্রো (১৮), লংপা ম্রো (২০), তাইলিং ম্রো (১২), ওরোরিং ম্রো (১৩), দুই লু ম্রো (১১), কংচিং ম্রো (১৮), রই ম্রো (২০) ও চিংরা ম্রো (১৩)। অসুস্থদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা।
লাইল্যা মুরুং পাড়ার পাড়া প্রধান লাতুং কারবারী বলেন, গত ১ মাস ধরে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে দুতিয়া ম্রো (৮) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পাড়ার লোকজন প্রায় সকলে অসুস্থ।
লামা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, আমরা খবর পেয়ে সোমবার সকালে ট্রাক্টর নিয়ে তাদের বুঝিয়ে লামা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসি। না হলে আরো কয়েকজন মারা যেত। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ হতে তাদের সকল চিকিৎসা ও খাবারের খরচ বহন করব।
এদিকে রোগীদের হাসপাতালে আনা হলে লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি, লামা পৌরসভার মেয়র ও লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। তাদের সবকিছুর খোঁজখবর নেন।
বান্দরবান সিভিল সার্জন ডা. অংসুই প্রু মারমা জানিয়েছেন, আক্রান্তদের শরীরে হামের মত গুটি উঠেছে। তারা মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে পাড়ার আশেপাশে যাতে রোগ আরো ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য সেখানে একটি মেডিকেল টিম কাজ করছে।