বৃহস্পতিবার পঞ্চম দিনে তৃতীয় সেশনে ড্র মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানরা দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেটে ২৬০ রান নেওয়ার পর ড্র মেনে নেন দুই দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক ও দিমুথ করারত্নে।
২৯ রানে পিছিয়ে থেকে টেস্টের পঞ্চম দিন শুরু করে সফরকারীরা। প্রথম ঘণ্টায় বাংলাদেশের লিড টপকে যায় তারা। তবে পরের ঘণ্টাতেই অতিথিদের চেপে ধরে বাংলাদেশ। তাইজুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসানের স্পিনে জমে ওঠে প্রথম সেশন।
দ্বিতীয় ঘণ্টায় পানি-পানের বিরতির পর দ্বিতীয় বলেই কুসল মেন্ডিসকে বোল্ড করে দেন তাইজুল। ৪৩ বলে ৪৮ রান করে ফেরেন মেন্ডিস। তার ইনিংসটি গড়া ৮ চার ও এক ছক্কায়।
এরপর প্রথম ইনিংস ১৯৯ রান করা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকেও নিজের শিকার বানান তাইজুল। ইনিংসের ৩৬তম ওভারের শেষ বলটি বোলারের মাথার ওপর দিয়ে মারার চেষ্টা করেন ম্যাথুজ। কিন্তু ব্যাটে-বলের টাইমিং ঠিক হয়নি। দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে তাকে সাজঘরে পাঠান তাইজুল। শূন্যতেই বিদায় নিতে হয় ম্যাথুজকে।
এরপর দিনের দ্বিতীয় সেশনে এসে দিমুথ করুনারত্নেও ফেরান তাইজুল। ১৩৮ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলে ফেরেন লঙ্কান অধিনায়ক। তাইজুলের পর লঙ্কান শিবিরে আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিজের ফাঁদে ফেলেন তিনি। লঙ্কানদের ৬ উইকেট হারানোর পর রোমাঞ্চ জাগে চট্টগ্রাম টেস্টে। আশা জাগে ফল আসার।
কিন্তু শক্ত জুটি গড়ে সেই আশা মিলিয়ে দেন দিনেশ চান্দিমাল ও নিরোসান ডিকবেলা। লম্বা সময় ব্যাট করে টেস্টের ভাগ্য ড্রয়ের দিকেই নিয়ে যান দুই লঙ্কান ব্যাটার।
বুধবার নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪৬৫ রান নিয়ে থেমেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার করা ৩৯৭ রান টপকে প্রথম ইনিংসে ৬৮ রানের লিড পায় মুমিনুল হকের দল।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৩৩ রান করেছেন তামিম ইকবাল। ২১৮ বলে তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ১৫টি বাউন্ডারি দিয়ে। আরেক সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক করেছেন ২৮২ বলে ১০৫ রান।
৩১৮ রান নিয়ে টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। লিটন ও মুশফিকের শতরানের জুটিতে দিনের প্রথম সেশনেই সেই রান সাড়ে তিনশ ছাড়ায়। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে লিটন ও মুশফিক দুজনেই সেঞ্চুরির আশা জাগান। কিন্তু লাঞ্চ বিরতির পর কিছুটা মনোযোগ হারান লিটন। বিরতি থেকে ফিরেই উইকেট হারান। ৮৮ রানে থামে তার ইনিংস। ১৮৯ বলে ১০ বাউন্ডারিতে সাজানো তার ইনিংসটি।
লিটন বিদায় নেওয়ার পর সাকিবকে নিয়ে বাংলাদেশকে লিডের পথে নিয়ে যান মুশফিকুর রহিম। দলীয় রান ৪০০ পেরিয়ে তিনিও তুলে নেন সেঞ্চুরি। দিনের দ্বিতীয় সেশনে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেছেন মুশফিক। লঙ্কান বোলার ফার্নান্দোর বলে বাউন্ডারি মেরে শতক তুলে নেন তিনি। সেঞ্চুরি করতে মুশফিক খেলেছেন ২৭০টি বল। শতকটি সাজানো ছিল চারটি বাউন্ডারি দিয়ে।
শুধু তাই নয়, সেঞ্চুরির পাশাপাশি আরেকটি মাইলফলকে পা রেখেছেন মুশফিক। দিনের প্রথম ঘণ্টায় বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৫ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাক্তিগত ৫৩ রান নিয়ে টেস্টের চতুর্থ দিন শুরু করেন মুশফিক। চতুর্থ দিন স্রেফ ১৫ রান দূরে থেকে দিন শুরু করে তিনি। মাঠে নামার পর ছুঁয়ে ফেলেন ৫ হাজার রানের মাইলফলক।
এরপর সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংস বেশি বড় করতে পারেননি। ১০৫ বলেই থেমে যায় তার ইনিংস। মুশফিক ফিরলে শেষ দিকে নাঈম-তাইজুলদের ব্যাটে ৪৬৫ রান করে থামে বাংলাদেশ।
এর আগে তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নেমে হাফ সেঞ্চুরি করেন তরুণ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। ১৪২ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ৫৮ রান করেন তিনি। এ ছাড়া সাকিব আল হাসান ৪৪ বলে ২৬ রান। নাঈমের ব্যাট থেকে আসে ৫৩ বলে ৯ রান।
তার আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে স্কোরবোর্ডে ৩৯৭ রান তুলেছে শ্রীলঙ্কা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করা ম্যাথুজ খেলেছেন ১৯৯ রানের ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ১৭০.১ ওভারে ৪৬৫/১০ (তামিম ১৩৩, মাহমুদুল ৫৮, মুমিনুল ২, শান্ত ১, মুশফিক ১০৫, লিটন ৮৮, নাঈম ৯, সাকিব ২৬, তাইজুল ২০, খালেদ ০, শরিফুল ৩ ; বিশ্ব ৮-০-৪২-০, ফার্নান্দো ২৬-৪-৭২-৩, মেন্ডিস ৪৫-১০-৪৫-০,এম্বুলদেনিয়া ৪৭-৯-১০৪-১, ডি সিলভা ১৯-২-৪৮-১,কাসুন ২৪.১-৬-৬০-৪)।
শ্রীলঙ্কা : ৩৯৭ ও ২৬০/৬ (ফার্নান্দো ১৯, করুনারত্নে ৫২ , মেন্ডিস ৪৮, সিলভা ৩৩, ম্যাথুজ ০ , চান্দিমাল ৩৯, ডিকভেলা ৬১,এম্বুলদেনিয়া ২; সাকিব ২৫-৫-৫৮-১,নাঈম ২৩-৫-৭৯-০,তাইজুল ৩৪-৯-৮২-৪, খালেদ ৭-২-৩৭-০)।
ফল : ড্র