ঢাকা (রাত ১০:৪৯) শনিবার, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News হাফেজ-এ- কোরআনদের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে অনন্য উচ্চতায়: আব্দুস সাত্তার Meghna News লোহাগড়ায় পুনুরুজ্জীবিত হতে যাচ্ছে ঐতিহাসিক ”জিয়া মঞ্চ” Meghna News দাউদকান্দিতে যৌথবাহিনীর অভিযানে নগদ অর্থ ও মাদকসহ দুইজন আটক Meghna News জাতীয় সংসদে কোনো সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে না! Meghna News বিস্ফোরক আইনে প্রধান শিক্ষক শফিক গ্রেফতার Meghna News নাগরপুরে বিডি ক্লিনের উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে আবারো মারা গেছে মাদ্রাসা ছাত্র Meghna News নেপালে আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত হলেন নড়াইলের কৃতি সন্তান সোহাগ Meghna News নড়াইল জেলা ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবী মিলনমেলা অনুষ্ঠিত Meghna News বিএনপির সাবেক এমপির’র বিরুদ্ধে হামলা-দখলের অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন

একমাত্র মনোনীত ধর্ম হলো ইসলাম

ইসলাম ধর্ম ২৪৩৯ বার পঠিত

মেঘনা নিউজ ডেস্ক মেঘনা নিউজ ডেস্ক Clock শনিবার রাত ০২:০০, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

প্রিয় পাঠকের কাছে আজকে আমার আলোচনা হলো প্রকৃত মুসলমান কাকে বলে,বা প্রকৃত মুসলমানের পরিচয় কী।
আমরা মুসলিম জাতি; আমাদের ধর্ম ইসলাম। আমরা কি প্রকৃত মুসলমান হতে পেরেছি এবং প্রকৃত মুসলমানের পরিচয় কি? সেই সম্পর্কে আজ আপনাদের কাছে বিস্তারিত আলোচনা করব।
একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম:
ইসলাম শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণ করা। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গভাবে কুরআন-হাদিসের আলোকে জীবন পরিচালনার জন্য আত্মা তথা মনকে সমর্পণ করা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম।’
অর্থাৎ আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য ধর্ম মানেই ইসলাম। অন্য কোনো ধর্মের মাধ্যমে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি অসম্ভব। ইসলামের উপমা হলো একটি তাঁবুর ন্যায়। তাবু যেমন তার ভেতরের মানুষকে রোদের সময় রোদ, শীতের সময় ঠাণ্ডা, প্রচণ্ড বাতাসের সময় ধুলা-বালি থেকে রক্ষা করে, তদ্রূপ ইসলাম মানুষকে পরকালীন আযাব থেকে রক্ষা করে।
ইসলামের দৃষ্টিতে যারা প্রকৃত মুসলমান:
ইসলামের দৃষ্টিতে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে যারা কুরআন-সুন্নাহর পরিপূর্ণ অনুসরণ করে তারাই প্রকৃত মুসলমান। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর।’
উক্ত আয়াতের মধ্যে প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তিকে ঈমান আনার পর ইসলামের বিধান তথা কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমে ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় শুধু মুমিন তথা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী ব্যক্তিকে প্রকৃত মুসলমান বলা যাবে না।
প্রকৃত মুসলমানের দৃষ্টান্ত একটি দেয়াল ঘড়ির ন্যায়। যার সেকেন্ডের কাঁটা, মিনিটের কাঁটা এবং ঘণ্টার কাঁটা আছে। ব্যাটারিতে আছে পূর্ণ চার্জ। বেতার কেন্দ্রের সময়ের সাথে সেটার সময়ের মিল রয়েছে। এ ধরনের ঘড়ির সময় দেখে কেউ যদি কোনো মিটিংয়ে যোগ দিতে চায়, তাহলে সে প্রস্তুতি নিয়ে ঠিক সময়ে মিটিংয়ে উপস্থিত হতে পারবে। ঈমানও তেমনি বিষয়। ঈমান গ্রহণ করার পর ঘণ্টার কাঁটার মত ফরয, মিনিটের কাঁটার মত ওয়াজিব এবং সেকেন্ডের কাঁটার মত সুন্নতের অনুসরণ করতে হবে। জীবনের কোনো অসস্থাতেই ফরয-ওয়াজিব বাদ দেয়া যাবে না। যেমন ঘণ্টা কিংবা মিনিটের কাঁটা যদি কিছু সময়ের জন্য থেমে যায় তাহলে ঘড়ি যেমন সঠিক সময় নির্ণয় করতে পারবে না, ঠিক তেমনি ফরয বা ওয়াজিব যদি ছুটে যায় তাহলে ঈমানও ব্যক্তিকে পূর্ণ ঈমানদার বানাতে পারবে না। ঘড়ির ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে গেলে যেমন পুনরায় সচল করার জন্য নতুন ব্যাটারি লাগাতে হয়, তদ্রƒপ শয়তানের ধোকায় পড়ে মানুষের মনের অবস্থার পরিবর্তন হয়। সে জন্য মাঝে মধ্যে ওলীদের মজলিসে অথবা ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে মনের ব্যাটারিতে চার্জ দিয়ে ঈমান তাজা করতে হয়। তাহলেই প্রকৃত মুসলমান হওয়া যাবে, আখেরাতের প্রস্তুতি নেয় যাবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টি অর্জন করে হাজির হওয়া যাবে আল্লাহর দরবারে।
আর যারা ইসলামের কিছু বিধান পালন করে আর কিছু পালন করে না, যেমন; নামায পড়ে তবে নিয়মিত পড়ে না। রোযা রাখে, সবগুলো রাখে না। অন্যান্য আমলের বেলায়ও কিছু করে কিছু করে না। আবার করলেও নিয়মিত করে না। এদের দৃষ্টান্ত হলো এমন দেয়াল ঘড়ির ন্যায়, যার সেকেন্ডের কাঁটা, মিনিটের কাঁটা, ঘণ্টার কাঁটা আছে, কিন্তু ঘড়ির সময়ের বেতার কেন্দ্রের সময়ের সাথে মিল নেই। এমন ঘড়ি দূর থেকে ঘড়ি মনে হলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। এ ঘড়ির সময় দেখে কোনো কাজ করলে বিভ্রান্তির স্বীকার হতে হবে তাকে। তদ্রূপ যে ব্যক্তি ইসলামের সকল বিধন মানে না, সে দূর থেকে দর্শকের দৃষ্টিতে মুসলমান, কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলমান নয়।
প্রকৃত মুসলমানের গুণাবলী:
কুরআনের মধ্যে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন জায়গায় প্রকৃত মুমিন মুসলমানের গুণ এভাবে বর্ণনা করেন।
‘যাদের সামনে আল্লাহর কথা স্মরণ করা হলে তাদের অন্তর ভীত হয়, যারা তাদের বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করে, যারা নামায কায়েম করে ও আমি যা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।’
এছাড়াও সূরা মুমিনুনের প্রাথমিক আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাআলা প্রকৃত মুমিন মুসলমানের গুণ এভাবে বর্ণনা করেছেন,
যারা নিজেদের নামাযে নম্র।
যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত।
যারা যাকাত দান করে।
যারা নিজেদের যৌনাঙ্গ সংযত রাখে।
যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে।
যারা তাদের পালনকর্তার ভয়ে সন্ত্রস্ত।
যারা তাদের পালনকর্তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে।
যারা তাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করে না।
যারা যা দান করবার তা ভীত কম্পিত হৃদয়ে এ কারণে দান করে, তারা তাদের পালনকর্তার নিকট প্রত্যাবর্তন করবে।
হাদীসে প্রকৃত মুসলমানের পরিচয়:
হাদিস শরীফে রাসূল (সা.) এরশাদ করেন,
‘প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যক্তি যার জিহ্বা [মুখ] ও হাত থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।’
অর্থাৎ যখন কোনো ব্যক্তির মুখের কথা অপর মুসলমানের জন্য কষ্টদায়ক না হয়, তার সম্মানহানির কারণ না হয় এবং তার হাতের মাধ্যমে যত প্রকার অন্যায় সম্ভব সেগুলো থেকে অন্য মুসলমান নিজেকে নিরাপদ মনে করে, তখনই সে প্রকৃত মুসলমান হিসেবে গণ্য হবে।
বাস্তব থেকে প্রকৃত মুসলমানের পরিচয় :
বাস্তবে দেখা যায়, গরু একটি অতি উপকারী প্রাণী। যেমন, গরুর গোশত আমরা খাদ্য হিসেবে আহার করি। তার হাড় জ্বিন জাতির খাবার। শিং দিয়ে শিঙ্গা বানানো যায়। গোবর আমরা চাষাবাদে প্রয়োগ করি। তার পশম দিয়ে পশমি কাপড় তৈরি করি। চামড়া দিয়ে জুতা ও বিভিন্ন প্রকার আসবাব তৈরি করা যায়। এমনকি চামড়া ধোয়া পানিও কেমিক্যাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
ঠিক তেমনিভাবে প্রকৃত মুসলমানের সকল প্রকার কাজ-কর্ম থেকে মানুষ এবং প্রাণীকুল কোনো না কোনোভাবে উপকার লাভ করবে। আর যখন সে সবার জন্য উপকারের কারণ হবে তখনই তাকে প্রকৃত মুমিন বলা যাবে।
তাকওয়া অর্জন:
প্রকৃত মুমিন মুসলমানের অন্যতম একটি গুণ হলো, তাকওয়া অর্জন করা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
‘নিশ্চয়ই তারা তোমাদের মধ্য থেকে আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত, যারা অধিক তাকওয়া অবলম্বনকারী তথা খেদাভীরু।’
তাকওয়ার শাব্দিক অর্থ ক্ষতি থেকে বাঁচা। শরীয়তের পরিভাষায় তাকওয়া হলো, শুধু আল্লাহর ভয়ে পরকালীন জীবনে ক্ষতিকর সব বিষয় ও জিনিস থেকে বেঁচে থাকা। তাকওয়ার সাতটি স্তর রয়েছে,
১. শিরক ও কুফর থেকে বাঁচা।
২. বিদআত থেকে বাঁচা।
৩. কবীরা গোনাহ থেকে বাঁচা।
৪. কবীরা ও সগীরা উভয় গোনাহ থেকে বাঁচা।
৫. সেসব মুবাহ যা হারামের দিকে পৌঁছে দেয় সেগুলো থেকে বাঁচা।
৬. সন্দেহজনক জিনিস থেকে বাঁচা।
৭. গাইরুল্লাহ থেকে পরহেয করা।
মোটকথা, তাকওয়ার বিভিন্ন স্তর রয়েছে। সর্বনিম্ন স্তর হলো, শিরক ও কুফর থেকে বাঁচা আর সর্বোচ্চ স্তর হলো, গাইরুল্লাহ থেকে পরহেয করা। অর্থাৎ প্রতিটি কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য হওয়া। এটা হলো সবচেয়ে খাস স্তর। এ স্তরটি নৈকট্যপ্রাপ্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ তথা নবী ও ওলীগণের তাকওয়া।
প্রকৃত মুমিন মুসলমানের আরেকটি গুণ হচ্ছে, নিজেকে আল্লাহর নিকট তুচ্ছ ও অপরাধী মনে করা। নিজের গোনাহের কারণে লজ্জিত হয়ে তার নিকট কান্নাকাটি করা।
সুতরাং আমদের প্রত্যেক মুসলমানের উচিত নিজের কৃত গোনাহের কারণে তাওবা করা, কান্নাকটি করা এবং পূর্ণ ঈমানের উপর অবিচল থাকা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে প্রকৃত মুমিন হওয়ার তাওফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ছাহেব।



শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT