উলিপুরে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী পুরাতন উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপীঠ উলিপুর সরকারি কলেজ শিক্ষক-কর্মচারী সংকটে পাঠদান ব্যাহত
সাজাদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি রবিবার রাত ০৮:১৪, ২০ নভেম্বর, ২০২২
অসম্ভব সুন্দর মনোরম পরিবেশ, সবুজ শ্যামলের সমারোহে যার বিস্তৃতি, সুচারু ক্যাম্পাস, বিশাল মাঠ কুড়িগ্রামের উলিপুরে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী পুরাতন উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপীঠ উলিপুর সরকারি কলেজ। উপজেলা সদরে মনোরম সৌন্দর্যের কলেজটি ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রয়াত মরহুম আব্দুর রব সরদার। ১৯৮৭ সালে কলেজটি জাতীয়করণ হয়। ঐতিহ্যবাহী এই কলেজটির হাজারো শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য সরকারি-বেসরকারি দফতরের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত।
শিক্ষক-কর্মচারী সংকটে বিপাকে আছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে বিপর্যয়ের মুখোমুখী এখানকার শিক্ষার্থীরা। ধমকে আছে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষক সংকট থাকা সত্ত্বেও সাফল্যের দিক থেকে পিছিয়ে নেই উলিপুর সরকারি কলেজ। শিক্ষক সংকটের ফলে যাতে শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কার্যক্রম থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেয় তাই, কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু অতিথি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
শহরের গুরুত্বের সাথে সাথে পুরোনো এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় সুযোগ সুবিধা বাড়েনি। শিক্ষক-কর্মচারী স্বল্পতাসহ প্রয়োজনের তুলনায় শ্রেণি কক্ষের অভাব রয়েছে কলেজটিতে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজটিতে বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগে ৩’শ ৮০জন, মানবিক বিভাগে ৩’শ ৫০জন ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে ১’শ ৫০জন, ডিগ্রি (পাস কোর্স) পর্যায়ে ১’শ ৮০জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। ১ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর জন্য বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকের সৃষ্ট পদ রয়েছে ২৭জন। অথচ তার বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ১২জন। যার বেশির ভাগ ১৫টি পদই রয়েছে শূন্য। এছাড়াও পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান ও জীব বিজ্ঞান বিষয়ের প্রদর্শকের ৩টি পদই শূন্য। বর্তমানে বিজ্ঞান বিভাগে ৮টি পদে ৪জন শিক্ষক কর্মরত শূন্য রয়েছে ৪জন ও মানবিক বিভাগেও ৮টি পদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ৪জন এখানেও শূন্য পদ ৪টি। দুই বিভাগে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক থাকলেও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক শূন্য হয়ে গেছে। অত্র কলেজটিতে বাংলা বিষয়ে ৩টি পদই শূন্য রয়েছে।
অন্য দিকে শিক্ষকের পাশাপাশি অফিস সহায়ক থেকে শুরু করে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির সৃষ্ট পদ রয়েছে ১৯জন। সেখানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৬জন। শূন্য পদ রয়েছে এখনও ১৩টি।
ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবীব জানান, আমি উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছি অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে। উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ পাড় হয়ে প্রতিদিন ৮-১০ কি.মি. দূর থেকে কলেজে ক্লাস করতে আসি বিসিএস ক্যাডার স্যারদের নিকট ভালো কিছু জানবো ও শিখবো বলে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের বিভাগে ও বাংলা বিষয়ের একজনও শিক্ষক নেই। আমাদের পাঠদান চলছে স্থানীয় অতিথি শিক্ষক দিয়ে। একই কথা জানালেন জুতি, রাব্বি, আলমগীর, আশরাফুল, আদমসহ এই বিভাগের আরও অনেক শিক্ষার্থী।
বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির বর্ণ, মনিষা, রিয়াদ, সামি, রাফি, মিজানুর, সৌরভসহ অনেক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তাদেরও অভিযোগের যেন অন্ত নেই, কলেজের গণিত বিষয়ে নিজস্ব কোন শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা যে কোন সমস্যা নিয়ে শিক্ষকের শরণাপন্ন হতে পারে না। এমনকি অনেক অতিথি শিক্ষকরা জটিল কোন সমীকরণের সমাধানও দিতে পারেন না। তারা আর বলেন, এ ছাড়াও বিজ্ঞান বিভাগের কোন বিষয়ের প্রদর্শক না থাকায় আমরা বাস্তবে কিছু শিখতে ও জানতে পাচ্ছি না। ফলে মাঝে মাঝে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।
সহকারি অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কলেজটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণ রয়েছে। দিন দিন আর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে শ্রেণি কক্ষের সংখ্যা ৬টি আরও ১২টি শ্রেণি কক্ষের প্রয়োজন। সম্প্রতি সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ তালা বিশিষ্ট ১’শ ৬৫ আসনের ১টি ছাত্র হোস্টেল ও ১’শ ৬২ আসন বিশিষ্ট ১টি ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণাধীন। যা এই অঞ্চলের শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যোৎসাহী সমাজকর্মী ও উপজলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার বলেন, এই অঞ্চলের শিক্ষার মান বড়াতে কলেজটিতে শিক্ষক সংকট দূর করে অনার্স কোর্স চালু করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি। যাতে করে এলাকার শিক্ষার্থীরা বাড়ী থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
এ ব্যাপারে উপাধ্যক্ষ মো. আবু যোবায়ের আল মুকুল বলেন, কলেজের শিক্ষার মান বাড়াতে ও সুনাম ধরে রাখতে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষক পদায়নের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরে আবেদন পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও আমাদের কলেজে কোন শিক্ষক পদায়ন করা হয়নি। যার কারণে আমরা একটু শিক্ষক সংকটে রয়েছি। আশা করছি অল্প কিছু দিনের মধ্যই প্রতিষ্ঠানটিতে শূন্য পদের জন্য শিক্ষক সংকটের সমস্যা দূর হবে।
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. শরিফুর রহমান খোকন বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীর সংকটের কারণে ক্লাস পরিচালনা করতে অনেক সময় অসুবিধায় পড়তে হয়। শিক্ষক সংকট সত্ত্বেও যাতে শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কার্যক্রম থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেয় তাই, বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু অতিথি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান অব্যাহত রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন বলেন, এই সরকার শিক্ষা বান্ধব। শিক্ষার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে আমাদের। এই পত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীর কথা চিন্তা করে কলেজটিতে ২টি হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। শিক্ষক সংকট দূর করার জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় সুবিধা দিয়ে কলেজটিতে যোগদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।