নারী ইউএনও কে গামছা পড়িয়ে বিদায়ের হুমকি দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন বুধবার সকাল ১১:০৫, ২১ জুন, ২০২৩
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-ইউএনও উম্মে তাবাসসুমকে গামছা পড়িয়ে বিদায় করে দেয়ার ওপেন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রাব্বুল হোসেন।
সোমবার (১৯ জুন) বিকেলে ভোলাহাট মেডিকেল মোড়ে ভোলাহাট উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের ডাকে অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় এমন বক্তব্য দেন তিনি। এ সময় পুরো সময় জুড়ে ইউএনওকে নিয়ে বিষোদগার করে আসন্ন ঈদ-উল-আযহার পর ভোলাহাট ছাড়ানোর হুমকি দেন চেয়ারম্যান। আর একজন নারী নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে চেয়ারম্যানের করা এমন অশালীন বক্তব্য ভোলাহাট উপজেলায় টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। এছাড়া এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।
এ সময় শান্তি সমাবেশে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রাব্বুল হোসেন বলেন, আমাকে বরখাস্ত করার জন্য উৎপাত চলছে। আমার কর্মচারী চালকের ওভারটাইম বেতন দেয়া হচ্ছে না। শুধু জামায়াত-বিএনপি নয় প্রশাসনে বসে শেখ হাসিনার নামে যারা চলছে বর্তমান ইউএনও এ ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত।
ইউএনওকে হুঁশিয়ারি করে চেয়ারম্যান আরো বলেন, আগামী ঈদ-উল-আযহার পরে ইউএনও উম্মে তাবাসসুমকে গামছা পরিয়ে এখান থেকে বিদায় করা হবে। এখানে দাঁত ভাঙা জবাব কেউ দেখেনি, সবাই চুপচাপ আছে ইনশাআল্লাহ ঈদের পরে সেই রুপ দেখতে পাবে। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানকে সরানোর পাঁয়তারা করছো। ঈদের পরে তোমার চৌদ্দ গুষ্টির দাঁত ভেঙে দেয়া হবে।
তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা এই ইউএনওকে কন্ট্রোল করুন নয়তো বিদায় করুন। ঈদের পরে জামায়াত বিএনপির আন্দোলন তীব্রতর হলে আর এই ইউএনও ভোলাহাটের মাটিতে থাকলে আমাদের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অর্ধেক নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠাবে। আর তাই সামনে ২৫ তারিখের মধ্যে কোন স্টেপ না নেয়া হলে যতগুলো প্রকল্পের কাজ চলছে আমি রাব্বুল কোন মেম্বারের প্রকল্পে স্বাক্ষর করবো না। এতে টাকা ল্যাপ্স গেলে যাবে। তাতে আমার কিছু যায় আসেনা।
এ সময় সমাবেশে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম বাবলুর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন শাহ, উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গরিবুল্লাহ দবিরসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রাব্বুল হোসেন পরে মন্তব্য করবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
ভোলাহাট উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম বাবু মুঠোফোনে বলেন, চেয়ারম্যান যে ইউএনওকে হুমকি দিবে বিষয়টি কারও জানা ছিল না। প্রকাশ্যে হুমকি দেয়া ঠিক হয়নি। এনিয়ে আমরা বিব্রত।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহা: জিয়াউর রহমান বলেন, একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রকাশ্যে নারী ইউএনওকে হুমকি দেয়া দল সমর্থন করে না। আমরা এমন ঘটনায় বিব্রত। দ্রুত দলীয় ফোরামে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে তাবাসসুমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। এমনকি বক্তব্য জানতে চেয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোন উত্তর মিলেনি।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যানের দেয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।