ধর্মপাশায় একই স্থানে ইফতার ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র ধরে দুই পক্ষের হামলায় যুবলীগ নেতা আহত
মোবারক হোসাইন,ধর্মপাশা,সুনামগঞ্জ বুধবার রাত ১১:০২, ২৭ এপ্রিল, ২০২২
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের পাইকুরাটি বাজারের একই স্থানে বুধবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে ইফতার ও মিলাদ মাহফিলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে।
এতে প্রতিপক্ষের লোকজনদের হামলা ও মারধরে উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুর রহমান উজ্জ্বল (৪০) ও সেলবরষ ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি দুলা মিয়া (৪০) আহত হয়েছেন। আহত ওই দুজনের মধ্যে একজনকে ওইদিনই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ধর্মপাশা থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের নওধার গ্রামের বাসিন্দা রোকনুজ্জামান রোকন (৩৭) ও রিপন মিয়ার (৪৫) যৌথ আয়োজনে উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের পাইকুরাটি বাজারে (২৭ এপ্রিল) বুধবার ইফতার ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
এ নিয়ে সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজনকে এই ইফতার ও মিলাদ মাহফিলে আমন্ত্রণ জানানো হয়। একই স্থানে উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সোহরাব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এরশাদ আকন্দের নেতৃত্বে ইফতার ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
ওইদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ধর্মপাশা থানা পুলিশের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের লোকজনই ইফতার ও মিলাদ মাহফিল স্থা্নটি নিজেদের মধ্যে দখলে নেওয়ার চেষ্ঠা করলে, তাদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ সময় পাইকুরাটি ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা সোহরাব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এরশাদ আকন্দের সমর্থকেরা সমবেত হয়ে, উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুর রহমান উজ্জ্বল (৪০) ও সেলবরষ ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো.দুলা মিয়া (৪০)কে কিলঘুষি মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে লাঠি দিয়ে দুলা মিয়ার মাথায় আঘাত করলে তিনি জখম হন।
স্থানীয় লোকজনদের সহায়তায় ওইদিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আহত ওই দুজনকে ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে সাময়িক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
কিন্ত শারিরীক অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় গুরুতর আহত দুলা মিয়াকে তাৎক্ষণিকভাবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। লুৎফুর রহমান উজ্জল ওই হাসপাতালে সাময়িক চিকিৎসা নিয়েছেন।
ইফতার ও মিলাদ মাহফিলের অন্যতম আয়োজক উপজেলার নওধার গ্রামের বাসিন্দা রোকনুজ্জামান রোকন (৩৭) বলেন, সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের আপন ছোট ভাই ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকনের নেতৃত্বে তার লোকজন আমাদের ইফতার ও মিলাদ মাহফিলে আসা আমন্ত্রিত লোকজনদেরকে ধাওয়া-হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে। এছাড়া ওই পক্ষের লোকজন আমাকে ও রিপন মিয়াকে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছে।
উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ আকন্দ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের ইউনিয়ন ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এক ইফতার ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করার বিষয়টি আমরা গতকাল মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) ফেসবুকে স্যাটাস দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিলাম। অপর পক্ষের রোকন ও রিপন মিলে যে ইফতার পার্টির আয়োজন করেছে তা আমাদের জানা ছিল না। মারধর ও হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে দুইপক্ষের লোকজনদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকন সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে এই ঘটনায় জড়িয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন রাজনৈতিক ফায়দা নিতে যাচ্ছে। নানাভাবে আমার সুনাম নষ্ট করার অপচেষ্ঠা করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, আমাদের পাইকুরাটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা পিন্টু ও যুবলীগ নেতা মনিরকে ওই পক্ষের লোকজন মারধর করেছে। একটি অসাধু মহল বড় ধরণের সংঘাত ঘটানোর জন্য আমার নিজের গ্রাম নওধারকে টার্গেট করেছে।
ধর্মপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, দুই পক্ষের লোকজনদের মধ্যে হৈহুল্লুর হয়েছে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে এক পক্ষের দুজন ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা দুই পক্ষের লোকজনকে দুইদিকে সরিয়ে দিয়েছি। দুই পক্ষের লোকজন দুটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আলাদাভাবে ইফতারি করেছেন। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। রাত নয়টা পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ আমরা পাইনি।