ধর্মপাশায় যেনতেনভাবে চলছে বীর নিবাস নির্মাণ কাজ;পুনরায় নির্মাণ করতে ইউএনরও’র নির্দেশ
মোবারক হোসাইন,ধর্মপাশা,সুনামগঞ্জ মঙ্গলবার রাত ১০:২৮, ২৯ মার্চ, ২০২২
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের মুদাহরপুর গ্রামে অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত দুটি পৃথক বীর নিবাস নির্মাণ কাজে নিম্ন মানের বালু, সুরকি ব্যবহার করা হচ্ছে। ভবনের ডিজাইন মোতাবেক কাজ না করে ঠিকাদারের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে তাদের নিয়োজিত শ্রমিকেরা যেনতেন ভাবে বীর নিবাস নির্মাণের কাজ করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধার কয়েকজন সন্তানরা এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করায় সোমবার (২৮মার্চ) দুপুরে ইউএনও মো.মুনতাসির হাসান ওই গ্রামে গিয়ে এই দুটি বীর নিবাস নির্মাণ কাজ ঘুরে দেখেন। অনিয়মের অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়ায় তিনি দুটি বীর নিবাস নির্মাণের মধ্যে একটি বীর নিবাসের ত্রুটিপূর্ণ দেয়াল ভেঙ্গে ফেলতে ও সঠিকভাবে ইস্টিমেট অনুযায়ী কাজ করার জন্য ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেন।
উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ধর্মপাশা উপজেলায় অস্বচ্ছল নয়জন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন (বীর নিবাস) নির্মাণের জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে দরপত্রের মাধ্যমে এসব কাজগুলো পায় মেসার্স জব্বার বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারকে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই নয়টি বীর নিবাস নির্মাণ কাজ কাজ শেষ করার কথা ছিল। বীর নিবাস নির্মাণ কাজে প্রতিটির জন্য জন্য বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয় ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা।
উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের মুদাহরপুর গ্রামের অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত গোলাম ওমর ফারুকের স্ত্রী নাসিমা বেগম ও একই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত লাল মিয়ার স্ত্রী আমেনা আক্তার নামে পৃথক দুটি বীর নিবাস নির্মাণ কাজ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে শুরু করা হয়। দুটি ভবনেই নিম্ন মানের বালু, সুরকির ব্যবহার করার পাশাপাশি সিসি ঢালাই কাজ সঠিক ভাবে করা হয়নি। এছাড়া একটি ভবনের ডিজাইন পরিবর্তন করে দেয়াল নির্মাণ করা হয়।
এসব নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে উপজেলার ধর্মপাশা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কায়েশ আহমেদ খানের নেতৃত্বে ৬/৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনওর) কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন।
ওইদিন বেলা একটার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনওর) নেতৃত্বে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রজেশ চন্দ্র দাসসহ একদল গণমাধ্যম কর্মীকে নিয়ে উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের মুদাহরপুর গ্রামে গিয়ে এই দুটি বীর নিবাস নির্মাণ কাজ দেখতে যান। এসব নানা অনিয়মের অভিযোগগুলোর সত্যতাও পান ওই দুজন কর্মকর্তা। তাৎক্ষনিকভাবে ইউএনও ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে বীর নিবাস ভবনের ত্রুটিপূর্ণ একটি দেওয়াল ভেঙ্গে ফেলাসহ নিম্ন মানের বালু ও সুরকি সরিয়ে মানসম্মত বালু ও সুরকি দিয়ে কাজ করা ও সিসি ঢালাই ভেঙ্গে সঠিকমাপে সব কাজ করার জন্য ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেন।
তবে ঠিকাদারের প্রতিনিধি ছুন্নু মিয়া বলেন, বীর নিবাস নির্মাণ কাজের শ্রমিকদের গাফিলতির কারণে এই দুটি বীর নিবাস নির্মাণ কাজে কিছুটা ত্রুটী হয়ে গেছে। যেসব ত্রুটি ধরা পড়েছে তা নতুন করে দেওয়া হবে। কাজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.মুনতাসির হাসান বলেন, বীর নিবাস নির্মাণ কাজে ভবনের একটি দেয়াল ত্রুটিপূর্ণ ভাবে করা হয়েছিল। সেটি ভেঙ্গে ফেলতে ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া মানসম্মত বালু ও সুরকির ব্যবহার এবং ডিজাইন অনুযায়ী বীর নিবাস কাজ করার জন্য ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে বলেছি। অন্যথায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বীর নিবাস নির্মাণ কাজগুলোতে বিশেষভাবে নজর রাখা হচ্ছে।