সুরমা নদীতে সেতুর জন্য সীমাহীন দূর্ভোগ
মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া,সুনামগঞ্জ বুধবার দুপুর ০২:৪১, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০
বাংলাদেশের হাওর সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জ জেলা। এখানে রয়েছে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ। সরকার প্রতিবছর এই জেলা থেকে কোটিকোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। তারপরও ভোগান্তির শেষ নেই অবহেলিত সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর। সারাদেশ যখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে তখনও এই জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা রয়েছে চরম অবহেলিত। এই উপজেলার সুরমা নদীতে একটি সেতু না থাকার কারণে দুই লক্ষাধিক মানুষকে দীর্ঘদিন যাবত পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দূর্ভোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা। এই উপজেলার মাঝখান দিয়ে বয়েগেছে সুরমা নদী। এই নদীর এক তীরে অবস্থিত জামালগঞ্জ আর অন্য তীরে অবস্থিত ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণ কেন্দ্র সচনা বাজার। সুরমা নদীটি জামালগঞ্জ উপজেলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে। উপজেলা পরিষদ,থানা,ব্যাংক,স্কুল,কলেজ ও হাসাপাতালসহ ৩টি ইউনিয়ন পরিষদ অবস্থিত জামালগঞ্জ এর তীরে। আর বাকি ৩টি ইউনিয়ন পরিষদসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সাচনা বাজারের তীরে। যার ফলে স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসাসহ অফিসিয়াল কাজকর্ম করতে ছাত্রছাত্রী ও এলাকার লোকজনসহ অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে প্রতিদিন সুরমা নদী পাড় হয়ে জামালগঞ্জ যেতে হয়। আর মাছ ও সবজিসহ বেশির ভাগ মালামাল কেনার জন্য ব্যবসায়ী ও অন্যান্য মানুষকে সাচনা বাজারে আসতে হয়।
কিন্তু সুরমা নদীতে সেতু না থাকার কারণে ছোট-বড় নৌকা দিয়ে নদীটি পারাপার হতে হয়। আর নৌকা দিয়ে সুরমা নদীটি পারাপার হতে গিয়ে প্রায়ই সময় ঘটছে দূর্ঘটনা। এছাড়া মূমূর্ষ রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে সুরমা নদী পার হতে গিয়ে রাস্তায় অনেকের মৃত্যু হয়। কারণ নদীটি পারাপার হতে সময় লাগে প্রায় ২০ থেকে ৩০মিনিট। খেয়া নৌকার জন্য করতে হয় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা। তাই জামালগঞ্জ উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী সুরমা নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করা। কিন্তু যুগযুগ পেরিয়ে গেলেও তাদের সেই দাবী আজ পর্যন্ত পূরণ হয়নি। তাই জীবনের ঝুকিসহ সীমাহীন সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন লক্ষলক্ষ মানুষ সুরমা নদী নৌকা দিয়ে পারাপার হচ্ছে।
এব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলার প্রবীণ সাংবাদিক তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ,ব্যবসায়ী রাসেল আহমেদ, একলাস মিয়া,রঞ্জন দাস,সুবল দাসসহ আরো অনেকে বলেন-সুরমা নদীতে ব্রিজ না থাকার কারণে জামালগঞ্জ উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে অফিসিয়াল কাজকর্ম করতে সবাইকে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এই কষ্ঠ ও সমস্যা দেখার মতো কেউ নেই।
সাচনা বাজারের কলেজ ছাত্র অভিভাবক আশরাফুল আলম,দিন ইসলাম,রহমত আলী,আকিকুর রহমানসহ আরো অনেকেই বলেন-সুরমা নদীতে ব্রিজ না থাকার কারণে আমাদের ছেলে মেয়েরা সঠিক সময়ে স্কুল-কলেজে পৌছতে পারেনা। খেয়া নৌকার জন্য দীর্ঘ সময় অপক্ষো করতে হয়। আর বর্যাকালে সুরমা নদী পারাপার হতে গিয়ে নৌকা ডুবে প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে। তখন নদীতে পানির গতিবেগ অনেক বেশি থাকে। তাই ভয়ে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল-কলেজে কেউ যেতে চায় না। আর এই সীমাহীন সমস্যা সমাধানের জন্য শীগ্রই সুরমা নদীতে ব্রিজ নির্মাণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুদৃষ্ঠি কামনা করছি।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম সাংবাদিকদের জানান-জামালগঞ্জ সদরের সুরমা নদীতে এপ্রোচসহ ১২১০মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট একটি সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। সেতুর ডিজাইন ও জায়গা নির্ধারন করার পর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। সেই সাথে হাওরাঞ্চলের উড়াল সেতুর সাথে সুরমা সেতুর সংযোগ দেওয়া হবে। আশা করছি শীগ্রই জনগণের দূর্ভোগ লাগব হবে।