যে কারণে জিকিরের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন প্রিয়নবি
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী সোমবার দুপুর ০২:৩০, ৫ এপ্রিল, ২০২১
তাসবিহ হাতে মসজিদে বসে শুধুমাত্র ‘আল্লাহ আল্লাহ’ করার নামই জিকির নয় বরং দুনিয়ার প্রতিটি কাজে আল্লাহর বিধান পালনই প্রকৃত জিকির। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম উম্মাহকে মুখে ও হাতে তথা কথা এবং কাজের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করার তথা জিকির করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
তাছাড়া আল্লাহ তাআলার জিকির বা স্মরণ মহান প্রভুরই নির্দেশ। কুরআনে পাকের অনেক জায়গায় তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব।’ (২/১৫২)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘এবং তোমাদের প্রভু বলেন, আমাকে ডাক, আমার কাছে চাও; আমিও তোমাদের ডাকে সাড়া দেব, তোমাদের চাওয়া পাওয়া কবুল করব।’ (সুরা গাফের : আয়াত ৬০)
সুতরাং আল্লাহর জিকির করতে সর্বাবস্থায়, কথায় এবং কাজে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে এবং (বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এ সব (মানুষসহ সমগ্র সৃষ্টি) নিরর্থক সৃষ্টি করণি। তুমি পবিত্র। তুমি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯১)
কুরআনে জিকিরের এ সব নির্দেশ বাস্তবায়নেই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে বেশি বেশি জিকিরের নসিহত পেশ করেছেন। জিকির থেকে বিমুখ ব্যক্তিকে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর স্মরণ তথা জিকিরের প্রতি মনোযোগী হতে হাদিসে পাকেও জিকিরের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। জিকির যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ সে সব বিষয়গুলো সুস্পষ্ট ভাষায় হাদিসে পাকে ওঠে এসেছে-
>> ‘যে ব্যক্তি তার প্রভুকে জিকির (স্মরণ) করে, আর যে ব্যক্তি তার রবকে জিকির বা স্মরণ করে না; তাদের দৃষ্টান্ত হলো- জীবিত ও মৃতের ন্যায়।’ (বুখারি, ফাতহুল বারি)
>> ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, ‘যে ঘরে আল্লাহর জিকির হয় এবং যে ঘরে আল্লাহর আল্লাহর জিকির হয় না; তাদের দৃষ্টান্ত- জীবিত ও মৃতের ন্যায়।’ (বুখারি, ফাতহুল বারি)
>> প্রিয়নবি বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের উত্তম আমলের কথা জানাবো না, যা তোমাদের প্রভুর কাছে অত্যন্ত পবিত্র, তোমাদের জন্য অধিক মর্যাদা বৃদ্ধিকারী, (আল্লাহর পথে) স্বর্ণ মুদ্রা ব্যয় থেকেও উত্তম এবং তোমরা তোমাদের শত্রুদের মুখোমুখি হয়ে তাদেরকে হত্যা এবং তারা তোমাদেরকে হত্যা করার চেয়েও অধিক শ্রেয়?
সাহাবাগণ বললেন, ‘হ্যাঁ’;
প্রিয়নবি বললেন, ‘(তাহলো) আল্লাহ তাআলার জিকির।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
>> প্রিয়নবি বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আমার বান্দা আমার সম্পর্কে যেমন ধারণা রাখে, আমি ঠিক তেমনি। সে যখন আমাকে স্মরণ করে, তখন আমি তার সঙ্গে থাকি।
যদি সে আমাকে মনে মনে স্মরণ করে, আমিও আমার মনে মধ্যে তাকে স্মরণ করি। আর যদি সে কোনো সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমিও তাকে এর চেয়ে উত্তম সমাবেশে স্মরণ করি।
আর যদি সে আমার দিকে আধা হাত এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। আর যদি সে এক হাত এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে দুই হাত অগ্রসর হই এবং সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌঁড়ে যাই।’ (বুখারি ও মুসলিম)
উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, জিকিরকারী ব্যক্তি জীবিত আর জিকির থেকে বিরত ব্যক্তি মৃত। আর জিকিরের মাধ্যমেই বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সুসম্পর্ক ও নৈকট্য তৈরি হয়।
পরিশেষে…
জিকির আল্লাহ তাআলার অনেক মর্যাদা সম্পন্ন ইবাদত। ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান পালনের মধ্যে আল্লাহর জিকিরই সবচেয়ে সহজ এবং সর্বোত্তম। প্রিয়নবির হাদিসে পাকে সে কথাই ফুটে ওঠেছে। সহজে সফলতা লাভে যা উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য আবশ্যক পালনীয়।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে বুসর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘এক ব্যক্তি আরজ করল, হে আল্লাহর রাসুল! ইসলামের বিধি-বিধান আমার জন্য বেশি হয়ে গেছে। কাজেই আপনি আমাকে এমন একটি কাজের সন্ধান দিন, যা আমি শক্ত করে আঁকড়ে ধরবো।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমার জিহ্বা যেন সর্বক্ষণ আল্লাহর জিকিরে সিক্ত (রত) থাকে।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনে জারিকৃত বিধি-বিধান পালনের মাধ্যমে তাঁর স্মরণ এবং তাঁর সুন্দর সুন্দর নামের মাধ্যমে জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল আদায় করার তাওফিক দান করুন। জিকিরের মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ ও সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।