যদি কমিউনিটি বিস্তার ঘটে তাহলে দেশ ভয়ংকর মহামারীর দিকে এগিয়ে যেতে পারে
মোঃ কামরুজ্জামান মঙ্গলবার বেলা ১২:৪৩, ৭ এপ্রিল, ২০২০
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের গতি কিছুটা হলেও ধীর করে দিতে পারে তাপমাত্রা বলছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল। সোমবার (৬ এপ্রিল ২০২০ ইং ) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁরা এ কথা বলেন।
সম্প্রতি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য বিস্তার ও তাপমাত্রার প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। তাদের গবেষণাপত্রটি ১১/০৩/২০২০ এ সাবমিট করা হয় এবং বর্তমানে Research Square নামক ওয়েবসাইটে প্রি-প্রিন্ট হিসেবে ‘Novel Coronavirus (COVID-19): Molecular Evolutionary Analysis, Global Burden and Possible Threat to Bangladesh’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণা পত্রটি বর্তমানে ন্যাচার রিসার্স গ্রুপের একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের জন্য পর্যালোচনা (REVIEW) চলছে। গবেষক দলের সদস্য ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. বাশির উদ্দিন বলেন, বর্তমান তাপমাত্রায় করোনা ভাইরাসের গতি যে একেবারেই ধীর গতিতে চলে আসবে এমনটাও বলা যাচ্ছে না। কারণ ইতিমধ্যেই ‘সার্স-করোনাভাইরাস-২’ ভাইরাসটির মধ্যে বিরূপ পরিবেশে নিজেকে পাল্টে ফেলার চারিত্রিক লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়েছে এবং কোভিড-১৯ এর নিজেকে পরিবর্তন করা নিয়ে বিভিন্ন দেশে গবেষণাও হচ্ছে। সেজন্য আমরা বলেছি করোনা ভাইরাসের বিস্তারের গতি কিছুটা হলেও কমাতে পারে আমাদের তাপমাত্রা।
তবে এই তাপমাত্রায় বিস্তার একেবারে কমে যাবে এমনটি বলা যাচ্ছে না। কারণ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ভাইরাসটি ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয় যদিও এত উচ্চ তাপমাত্রা আমাদের প্রকৃতিতে পরিলক্ষিত হয় না। বায়োইনফরম্যাটিক্সের বিভিন্ন গবেষণা পদ্ধতি এবং স্যাটেলাইট ইমেজিং ও এপিডেমিওলজির বিভিন্ন ডাটাবেইজ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণাটি করা হয়।
আর গবেষক দলে ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. বাশির উদ্দিন, ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান, একোয়াটিক রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আহমেদ হারুন আল রশীদ, এপিডেমিওলজি ও পাবলিক হেলথ বিভাগের প্রভাষক ডা. মো. ইরতিজা আহসান এবং ও ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. আব্দুস শুকুর ইমরান ।
গবেষণাটির প্রধান তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ছিলেন এপিডেমিওলজি ও পাবলিক হেলথ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহমেদ। গবেষণাটিতে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে মহিষ থেকে প্রাপ্ত একধরনের করোনাভাইরাসে জিনোমের সাথে সম্প্রতি কোভিড-১৯ (COVID-19) মহামারীর জন্য দায়ী সার্স করোনাভাইরাস-২ (SARS-CoV-2) এর জিনোমের মধ্য তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়।
এছাড়া বিগত দিনগুলোতে রোগ সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস গ্রুপের অন্যান্য ভাইরাস যেমন সার্স (SARS), মার্স (MERS) ও বাদুর থেকে প্রাপ্ত করোনাভাইরাসের মধ্যেও তুলনামূলক গবেষণা করে ফলাফল হিসেবে বলা হয় কোভিড-১৯ এর জন্য দায়ী সার্স-করোনাভাইরাস-২ পূর্বে বাংলাদেশে প্রাপ্ত মহিষ করোনাভাইরাসের সাথে কম সাদৃশ্যপূর্ণ ও সার্স ভাইরাসের সাথে অত্যধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, মার্চের ৯ তারিখ পর্যন্ত এপিওডেমিওলজির বিভিন্ন ডাটাবেইজ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গ্লোবাল কেস ফাটালিটি ও মৃত্যুহার তুলে ধরা হয়।
সেই সাথে স্যাটেলাইট ইমেজিং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত চায়নার উহান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও বাংলাদেশের তাপমাত্রার তুলনামূলক তথ্য বিশ্লেষণ থেকে বলা হয় যে, বর্তমান তাপমাত্রা বাংলাদেশে কোভিড-১৯-এর বিস্তারকে অনেকটা ধীরগতি করে দিতে পারে।
একইসাথে যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি থেকে মার্চ ২০২০-এ প্রকাশিত গবেষণাতে বলা হয়েছে, সার্স-করোনাভাইরাস-২ এর প্রাদুর্ভাব ৩ থেকে ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে বেশি । একইভাবে, ইউরোপীয় গবেষকদের প্রকাশিত তথ্য মতে বিশ্বে কোভিড-১৯-এর ৯৫% কেস মূলত শীতপ্রধান দেশের যাদের তাপমাত্রা ৫ থেকে ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াস । যা এই গবেষণার তথ্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ।
গবেষণায় আরো বলা হয় যে, COVID-19 বিস্তারে দেশের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ও ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা হটস্পট হিসাবে কাজ করবে। তাই, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল দেশের মানুষকে সাবধান করে বলছেন, যেহেতু সার্স-করোনাভাইরাস-২ ভাইরাসটির মধ্যে বিরূপ পরিবেশে নিজেকে পাল্টে ফেলার চারিত্রিক লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়েছে।
সেজন্য ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে যাতে কমিউনিটি বিস্তার না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি কমিউনিটি বিস্তার ঘটে তাহলে দেশ ভয়ংকর মহামারীর দিকে এগিয়ে যেতে পারে।