গৌরীপুরে প্রচারনাবিহীন অনলাইন কোরবানির পশুর হাট
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ বৃহস্পতিবার রাত ০৯:৫৩, ৮ জুলাই, ২০২১
করোনা মহামারীতে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে এবার ঈদুল-আজহায় কোরবানির পশু বেচা-কেনা করতে হবে অনলাইনে। এজন্য এ উপজেলায় চালু হয়েছে গৌরীপুর অনলাইন কোরবানির পশুর হাট নামে একটি অনলাইন পেইজ। এছাড়া ময়মনসিংহ প্রাণি সম্পদ অফিস (qurbanihatmym.com) একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। বসবে না কোন পশুর হাট।
এদিকে প্রচারনা না থাকায় গৌরীপুরের স্থানীয় লোকজন অনলাইন বাজার চালুর বিষয়ে অবগত নন । তাছাড়া অনলাইন পেইজ চালনার বিষয়ে অধিকাংশ মানুষের বাস্তব জ্ঞান না থাকায় এ পদ্ধতিতে পশুর হাট কতটা ফলফশ্রু হবে তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সংশয়। ফলে অনলাইন বাজারের ওপর ভরসা রাখতে পারছে না স্থানীয় কোরবানির পশু ক্রেতা-বিক্রেতারা।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল করিম জানান, এবার ঈদে এ উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১১ হাজার ৭৫০টি পশু তারমধ্যে পশুর যোগান আছে ১২ হাজার ৩৪০টি।
তিনি বলেন, ২৩ জুন থেকে এ উপজেলায় ‘গৌরীপুর অনলাইন কোরবানির পশুর হাট’ নামে একটি অনলাইন বাজারের পেইজ চালু করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের মাঠকর্মীরা এ পেইজে খামারি/কৃষকের ষাঁড়ের ওজন, উচ্চতা, দৈর্ঘ্য উল্লেখপূর্বক ছবি এবং খামারির নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার আপলোড করে দিচ্ছেন। প্রতিদিন ৩শ ষাঁড়ের ছবি ও তথ্য আপলোড করা হচ্ছে এ পেইজে। এছাড়া কোরবানির পশুর ক্রয় বিক্রয়ের জন্য ২ জুলাই থেকে ময়মনসিংহ প্রাণি সম্পদ অফিস (qurbanihatmym.com) একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ জানান, করোনা পরিস্থিতিতে স্থানীয়ভাবে কোরবানির হাট বসানোর বিষয়ে আপাতত সরকারি কোন নির্দেশনা নেই। তাই এবার ঈদে সকলকে অনলাইন পশুর হাটের মাধ্যমে কোরবানির পশু ক্রয় বিক্রয় করতে হবে বলে জানান তিনি।
গৌরীপুর কলতাপাড়া রোড়ে গুঁজিখা এলাকায় বিবিএফ এগ্রো ভেট ফার্মের মালিক আলিম উদ্দিন জানান, তার খামারে এবছর ২৫টি কোরাবনির ষাঁড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত আছে। এ ষাঁড়গুলোর ওজন ২৫০ কেজি থেকে ৪০০ কেজি পর্যন্ত। দু’বছর হল তিনি খামারটি স্থাপন করেছেন। গত বছর কোরবানির ঈদে ২৫টি ষাঁড় বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন তিনি। কিন্তু এ বছর করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইন হাটের বাজারে ষাঁড় বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন কিনা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি।
উপজেলার পশ্চিম কাউরাট গ্রামের তামিমা ডেইরি ফার্মের মালিক উজ্জল মিয়া জানান, ২০১৭ সনে বাড়িতে এ গরুর খামারটি স্থাপন করে তিনি ও তার স্ত্রী দু’জনে মিলে গরু লালন পালন করে আসছেন। প্রতি বছরও কোরবানির হাটে দু’একটি করে ষাঁড় বিক্রি করে কম বেশি লাভবান হচ্ছেন তারা। গত কোরবানি ঈদে ৮টি গরু বিক্রি করে তেমন লাভ হয়নি তাদের। এ বছর শাহীওয়াল জাতের ৯শ কেজি ওজনের কালা বাবুল ও ছোট আরও ১টি ষাঁড় বিক্রি করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা। কিন্তু কঠোর লকডাউনে বর্তমান অনলাইন বাজারে ষাঁড় বিক্রি করে ন্যায্য দাম পাবেন কিনা এ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে তাদের মনে।
গৌরীপুর পৌরসভার গাঁওগৌরীপুর খানপাড়া এলাকার স্বপ্ননীল খামারের মালিক ইমরুল কায়েস জানান, ২০০৭ সনে বাড়িতে স্বপ্ননীল নামে গরুর খামারটি স্থাপন করে নিজেই গরুর পরিচর্চা করে আসছেন। প্রতি বছর কোরবানির হাটে দু’একটি করে ষাঁড় বিক্রি করে কম বেশি লাভবান হচ্ছেন তিনি। এ বছর লাল খান নামে ১২শ কেজি ওজনের শাহীওয়াল জাতের বিশালাকৃতির ষাঁড়টি বিক্রি করে অধিক লাভের মুখ দেখবেন এমনটি আশা করছেন তিনি। কিন্তু কঠোর লকডাউনে বর্তমান অনলাইন বাজারে ষাঁড় বিক্রি করে লাভ তো দূরের কথা আসল টাকা পাবেন কিনা এ নিয়ে হতাশা দেখা দিয়েছে তার মনে।