ঢাকা (দুপুর ২:২২) শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Join Bangladesh Navy


কাজ না করে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রকৌশলী ও ঠিকাদার

হোসাইন মোহাম্মদ দিদার হোসাইন মোহাম্মদ দিদার Clock শনিবার রাত ০১:১০, ১৮ নভেম্বর, ২০২৩

উপজেলার ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন সংস্কারের কাজ না করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।

এই অভিযোগ ওঠেছে খোদ তদন্তাধীন উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের যোগসাজশে এসব বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কাজ সম্পন্ন করার ভূয়া প্রত্যয়নপত্র মাধ্যমে বিলের সমুদয় টাকা উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও সরকারি টাকা লোপাটের বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি। আংশিক কাজ করে বিদ্যালয় সংস্কারের বরাদ্দের আত্মসাৎ করার পর এখনো আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ করছেন স্থানীয়রা।

চরম ভোগান্তিতে জবুথবু অবস্থায় আছে বিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

 

প্রাপ্ত তথ্য ও সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের অধীনে এই উপজেলার ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামতের বরাদ্দসহ কার্যাদেশ হয়। বিদ্যালয়গুলো মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। বরাদ্দ পাওয়া বিদ্যালয়গুলোর হলো— ইলিয়টগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জিংলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নৈয়াইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টামটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তালেরছেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরগোয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

 

এসব বিদ্যালয়ের কাজ পায় প্বাশবর্তী জেলার মেঘনা উপজেলার মেসার্স খাজা গরীব এ নেওয়াজ ট্রেড অর্গানাইজেশন, কুমিল্লা কোটবাড়ি এলাকার মেসার্স এম আই কন্সট্রাকশন।

সূত্র জানায়, এসব বিদ্যালয়ে পিইডিপি-৪ এর অধীনে মেজর মেইনটেনেন্সের আওতায় মেরামত কাজের জন্য প্রাপ্ত বরাদ্দকৃত অর্থের পুরো কাজ না করে উপজেলা বিল ভাগিয়ে নেন।

এতে উপজেলা প্রকৌশলী, তার কার্যালয়ের হিসাবরক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের যোগসাজশে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলন করে নেয়।

 

সূত্র আরও জানায়, কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তদানীন্তন উপজেলা প্রকৌশলী আহসান আলীসহ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে বিদ্যালয়গুলো মেরামতের কাজ ৪৫ শতাংশ থেকে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত সম্পন্ন করে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে সম্পূর্ণ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন।

 

বিষয়টি তদানীন্তন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল ইসলামের নজরে এলে অভিযোগ তদন্তের জন্য তিনি ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেন। ঐ বছর ৪ মার্চ তদন্ত করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সেলিম শেখ ইউএনও’র কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তিন পাতার প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পান তদন্ত কর্মকর্তা। সূত্র জানায়, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হলেও সরকারি অর্থ আত্মসাতে জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে স্থানীয়দের মাঝেও দেখা দিয়েছে বিরুপ প্রতিক্রিয়া।

 

অভিযোগের বিষয়ে টামটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তাহের সরদার, জিংলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দিন খান, ইলিয়টগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিম মিয়া, গোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা আক্তারসহ অন্যান্যরা জানান, “ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যাদেশ দেখায়নি। তারা মনগড়াভাবে সামান্য কিছু কাজ করে বাকি কাজ অসমাপ্ত রেখে তাদের (প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি) স্বাক্ষর জাল করে সম্পূর্ণ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। বিষয়টি তারা তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা প্রকৌশলী (বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে কর্মরত) আহসান আলী জানান, “উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে যেভাবে কাগজপত্র উপস্থাপন করেছেন সেভাবে বিল পরিশোধসহ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সঠিক নয়।”

 

উপজেলা প্রকৌশলী আফসার হোসেন খন্দকার বলেন, “বিষয়টি এলজিইডি কুমিল্লা অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মহোদয়ের অধীনে তদন্তাধীন রয়েছে। তাই এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না।”

 

এ বিষয়ে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিনুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে ,” আমি গত বছরের ১২ মে এখানে যোগদান করেছি। অভিযোগটি এর আগের। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

 

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী বলেন,” অভিযোগটি গুরুতর, তদন্তেও এর প্রমাণ মিলেছে বলে জেনেছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থাসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর মেরামত কাজ শেষ করার দাবি জানাই।”




শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT