করোনা দুর্যোগে সব্জি বিতরণে অনান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন সাতক্ষীরার এজাজ আহমেদ স্বপন
মোঃ কামরুজ্জামান বৃহস্পতিবার বেলা ১২:৪৪, ১৮ জুন, ২০২০
আজহারুল ইসলাম সাদী, সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ মহামারী করোনা দুর্যোগের এই সংকট লগ্নে কর্মহীন অসহায় মানুষের মাঝে সব্জি বিতরণ করে অনান্য দৃষ্টান্ত নজির স্থাপন করে চলেছেন সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান এজাজ আহমেদ স্বপন। করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় ২ মাস যাবৎ দৈনিক প্রায় এক হাজার দরিদ্র মানুষকে বিনামূলে সবজি বিতরণ করে চলেছেন। সাতক্ষীরা শহরের সরকারি গার্লস হাইস্কুলের সামনে বিতরণ করা হয় নানা রকমের এই সব্জি। গরীব মানুষ তাদের প্রয়োজন মতো কয়েক প্রকার সবজি সেখান থেকে নিয়ে যান, প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিতরণ করা হয় এই সব্জি। করোনা সংকট থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত মার্চ মাসের ২৬ তারিখ থেকে প্রায় আড়াই মাস সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। এ সময় দেশের আপামর দরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে শ্রমজীবী নারী-পুরুষ যারা দিন আনা দিন খাওয়া সে সকল মানুষকে, করোনাকালে সরকারি, বেসরকারি ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান যখন তাদের মাঝে, চাল, ডাল ও তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবাদী বিতরণ করছেন ঠিক তখনই দরিদ্র মানুষের বন্ধু এজাজ আহমেদ স্বপন চিন্তা করেন মানুষের ভাতের সাথে প্রয়োজন সব্জি, তাই তিনি শুরু করলেন গণহারে সব্জি বিতরণের এই কার্যক্রম। সাতক্ষীরা সরকারি গার্লস হাইস্কুলের সব্জি বিতরণ কেন্দ্রের সামনে বহু অসহায় পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা, করোনা দুর্যোগের এই সংকটকালে দু’মাস যাবৎ এজাজ আহমেদ স্বপন এর বিনামূল্যে বিতরণকৃত নানা পদের শাক-সব্জি তাদের পছন্দ মত এখান থেকে নিয়ে তাদের চাহিদা পুরণ করছেন। আরো কয়েকজন জানান তারা বড় বাজার থেকে অনান্য সামগ্রী ক্রয় করে সেঞ্চুরী একাডেমি থেকে লাউ, কুমড়া, পুইশাক, পটল, ঢেড়স, কাঁচামরিচসহ বিভিন্ন তরকারী বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। এই দূর্যোগে মানুষের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছেন এজাজ আহমেদ স্বপন তা নিসন্দেহে প্রসংসার দাবি রাখে। সবাই যখন ছাত্রজীবন শেষে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ক্যারিয়ার গড়তে ব্যাস্ত, এজাজ আহমেদ স্বপন তখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তার নিজস্ব সাধ্যের মধ্যে যা আছে তা দিয়ে মানবসেবা দিতে। এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, ২০০০ সালে বন্যায় সেঞ্চুরী একাডেমির ব্যানারে তিনি রুটি বানানো কর্মসূচি চালু করেন। সেখান থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা রুটি নিয়ে যেতেন। একই সময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফ্রি কোচিং, বিনামূল্যে খাতাকলম বিতরণ ও পরীক্ষার ফিস প্রদান করতেন। সেসময়ে তার বিনামূল্যের এই কার্যক্রম সাতক্ষীরাবাসীর হৃদয় কেড়েছিল। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মহামারী করোনার ছোবলে অসহায় সহস্রাধিক মানুষের মাঝে বিতরণের ব্যবস্থা করেছেন তাজা এই শাক-সব্জি। তার এই উদ্যোগে একদিকে প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি যেমন শাক-সব্জি ক্রয় করার ফলে, কৃষক ন্যায্য মূল্য পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন, ঠিক তেমনি অসহায় মানুষ প্রতিদিন বিনামূল্যে শাক-সব্জি পেয়ে হচ্ছেন যার পর নেই খুঁশি। সেঞ্চুরী একাডেমির মাধ্যমে শুধু সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মানুষই এই সুবিধা ভোগ করছেন তা কিন্ত নয়? সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষকে প্রতিদিন সহযোগিতা দিয়ে এসেছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের মাঝে তিনি এই সব্জি বিতরণ করেছেন। ৭ এপ্রিল থেকে সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে একটি বিতরণ কেন্দ্র করে বিনামূল্যে শাক-সব্জি বিতরণ কার্যক্রমটি অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিদিন সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯টা ওয়ার্ডসহ পার্শ্ববর্তী লাবসা, নগরঘাটা, আলিপুর, ধূলিহর, ব্রহ্মরাজপুর, বৈকারীসহ বল্লী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে শাক-সব্জি বিতরণ চলমান অব্যাহত রেখেছন। তিনি করোনা পরিস্থিতির কারনে পাটকেলঘাটার মৌলবীবাজার, আঠারোমাইল সহ সাতক্ষীরা বড়বাজার থেকে পাইকারি সব্জি ক্রয় করেন। এছাড়া সদরের গোঁবরদাড়ি, ঘুডেরডাঙ্গী, আলিপুর, ভাড়ুখালী, মাহমুদপুর, কাসেমপুর, আবাদেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার সরাসরি চাষীদের ক্ষেত থেকে সব্জি ক্রয় করেন। এতে কৃষকরাও হচ্ছেন লাভবান। তার এই বিনামূল্যে শাক-সব্জি বিতরণ কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বর্তমানে সাতক্ষীরা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে শাক-সব্জি বিতরন করেচলেছেন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এই উদ্যোগের ফলে স্থানীয় বাজারগুলোতে জনসমাগম কমানো অনেকটা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও এজাজ আহমেদ স্বপন সাতক্ষীরাসহ উপকুলে আম্ফানে গাছের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে ছাত্রজীবনের অভ্যাস মতো শুরু করেছেন গাছের চারা বিতরণ কার্যক্রম। তিনি জেলাব্যাপি এক লক্ষ ফলজ ও বনজ গাছের চারা বিতরণ ও রোপন করার কাজ শুরু করেছেন। ’৯০ এর দশকে সাতক্ষীরায় শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন ছিলেন, তুখোড় ছাত্রনেতা। তিনি জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য, জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক সহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তিনি ৮০ ও ৯০ এর দশকের সাবেক ছাত্রনেতাদের সংগঠিত করে গড়ে তুলেছেন ‘সাবেক ছাত্রনেতা সমন্বয় কমিটি’। গত নির্বাচনে তাদের ভুমিকা ছিল চোখে পড়ার মত। এই সংগঠনে তিনি সাতক্ষীরার সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবহারকারী অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন সুনামের সহিত। এজাজ আহমেদ স্বপন মনে করেন মানুষের দুঃসময়ে বিত্তবাদের পাশে দাঁড়ানো দরকার তাই তিনি নিজে ও সমাজের নিতান্ত অসহায় মানুষের দূর্যোগে এভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন।