করোনা থামাতে পারেনি শিক্ষিকা কালাম ফেরদৌসী শান্তাকে,পাঠদান দিচ্ছেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে
মোবারক হোসাইন,ধর্মপাশা(সুনামগঞ্জ) বুধবার বেলা ১২:১৯, ২ ডিসেম্বর, ২০২০
করোনা মহামারীর প্রভাব সকল স্তরের পাশাপাশি পড়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই ছন্দপতন ঘটিয়েছে মহামারী করোনা ভাইরাস। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ১৭ ই মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এলোমেলো হয়ে গেছে শিক্ষার সকল রুটিন। করোনা মোকাবেলার পাশাপাশি শিক্ষার এই স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে কাজ করছে সরকার।
সরকারের পাশাপাশি কিছু সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা স্ব-উদ্যোগে বিভিন্ন অনলাইন স্কুলের পেইজ খুলে ক্লাস নেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন। তেমনি একজন শিক্ষক হলেন চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ সিকদারীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিক কালাম ফেরদৌসি শান্তা। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় জন্ম নেওয়া এই মেধাবী শিক্ষক ০৮/০৬/২০১০ ইং তারিখে প্রথম চাকরিতে যোগদান করেন ২ নং চাম্বি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লামা, বান্দরবানে। বর্তমানে বাস করছেন চট্টগ্রামের শুলকবহরে। নিজ বাসভবন থেকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার মাধ্যমে সারাদেশে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন তিনি। দেশের বিভিন্ন জেলার ১২টির মত অনলাইন স্কুলে ৪০টিরও বেশি পাঠদান দিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন সদ্য শিক্ষক বাতায়নে সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা নির্বাচিত হওয়া এই শিক্ষক। তিনি গত ০১/১১/২০২০ ইং তারিখ শিক্ষক বাতায়নে সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা হবার গৌরব অর্জন করেন এবং গত ২৯/০৫/২০২০ ইং তারিখে শিক্ষক বাতায়নে ICT4E জেলা এম্বাসেডর হিসেবে মনোনীত হন শান্তা।
মঙ্গলবার কালাম ফেরদৌসী শান্তার অনলাইন পাঠদান নিয়ে তার সাথে বিস্তারিত কথা বললে তিনি তার অনলাইন পাঠদান সম্পর্কে বলেন, ‘আমি অনলাইন ক্লাস শুরু করেছি গত ১৯ মে থেকে চট্টগ্রাম অনলাইন স্কুলের মাধ্যমে। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা যেন পাঠ্যবই বিমুখ হয়ে না পড়ে সেজন্যই অনেক অনেক শিক্ষকের পাশাপাশি আমিও অনলাইন ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ নিই। এখন নিজ বিদ্যালয়ের পাশাপাশি সারা বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার শিক্ষার্থী। এটা আমার জন্য ভীষণ আনন্দের ও গৌরবের। করোনা কালীন এই অবসরকে আমি কাজে লাগিয়েছি এটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া।
তিনি আরো বলেন, তার এই সফলতার জন্য যারা সব সময় তাঁকে উৎসাহ দিয়েছেন, সহায়তা করেছেন তাঁদের প্রতি তিনি চিরকৃতজ্ঞ। তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তার উপজেলার সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দা আমাতুল্লাহ আরজু, প্রধান শিক্ষক পারভীন আকতার এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুক্তি চৌধুরীকে।যারা তাকে সবসময় খুব অনুপ্রাণিত করেছেন।
তিনি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেন চট্টগ্রাম টিচার্স ট্টেইনিং কলেজের সহযোগী অধ্যাপক জনাব মোঃ আখতার হোছাইন কুতুবী স্যার, আমার বিশ্বস্ত আমার প্রেরণা আব্দুল মান্নান স্যার, আমার উপজেলার জনাব আব্দুস সোবহান স্যার, লাকসামের মোঃ সাইফুল স্যার, খাগড়াছড়ির রুপা মল্লিক রুপু ম্যামকে। নিজ প্রচেষ্টা ও ওনাদের অনুপ্রেরণায় আজ আমি এতটুকু আসতে সক্ষম হয়েছি, তিনি বলেন এরা আমার অনলাইন জগতে আসা এবং কাজ করে যাওয়ার পথ প্রদর্শক। এছাড়াও তিনি তার প্রাণপ্রিয় স্বামী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব সোহরাব মোস্তফা রিকনের ভালবাসা, উদারতা ও সহযোগীতার কথা বলেন। স্বামী যদি সহযোগিতা না করতো তবে কোনভাবেই তিনি সফল হতে পারতেন না, বিশেষ করে করোনা সময় যখন লক ডাউন তখন আমার স্বামী উপকরণ সমুহ কতো কষ্টে কালেকশন করেছে তা আমায় বেশি অনুপ্রাণিত করেছে।
শান্তা বলেন তার মা ও তার স্বামী রিকন তার কাজ করার প্রধান শক্তি।ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক কন্যা সন্তানের জননী। স্বামী রিকন আর সন্তান সালওয়া আমার সকল কাজের উৎসাহ আর উদ্দীপনা।
এসময় তিনি যে সকল সম্মানিত শিক্ষকরা এই মহামারীতে বসে না থেকে নিয়মিত দেশের কোমল মতি শিশুদের জন্য এভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। আর এই গুণি শিক্ষকের পরামর্শ চেষ্টা এবং আগ্রহ থাকলে ভাল কাজ করা যায় তবে যোগ্যতা থাকবে হবে।
কালাম ফেরদৌসী শান্তা বলেন, এই মহামারীতে স্বামী রিকনের পরামর্শে তিনি প্রায় চট্টগ্রাম শহর থেকে বোয়ালখালী চরণ দ্বীপ গিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে গিয়ে পাঠদান দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন চরণ দ্বীপ এলাকায় আমার স্কুলের প্রায় শিক্ষার্থীর পরিবার খুবই অসচ্ছল। তাদের স্মার্ট ফোন নাই তাই আমি নিজ উদ্যোগে এই কার্যক্রম হাতে নিয়েছি চেষ্টা করছি কিছু ভাল কাজ করার।সবাই যদি আমার মতো এগিয়ে আসে ইনশাআল্লাহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলায় সুশিক্ষিত নাগরিক আমরাই তৈরি করবো।